‘‘এতক্ষণে-অরিন্দম কহিলা বিষাদে/জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল, রক্ষঃপুরে!’ (মেঘনাদবধ কাব্য)। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতার পঙক্তির মতোই এতদিন পর চানক্যনীতির ভারত, তাদের এদেশীয় দোসর ইসলামের লেবাসধারী রাজনৈতিক দল, তাঁবেদার সাংবাদিক, ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পেরেছেন তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত আন-প্যারালাল নেতায় পরিণত হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে ১০ হাজার মাইল দূরে লল্ডনে থেকেই তিনি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের কাছের নেতা হয়ে উঠেছেন।
বিএনপির পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছেন। হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও তিনি রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেন। ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে আমজনতার চিন্তা-চেতনা ধারণ করে নিজেকে মানুষের কাতারে নিয়ে গেছেন। তারেক রহমানের এই জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক উত্থান দিল্লির দাসত্ব করা দল ও ব্যক্তিদের মাথায় বাজ পড়েছে। তারা এখন নানা প্রক্রিয়ায় তারেক রহমানকে ঠেকানো এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ভারতীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।
এত দিন তারেক রহমানের রাজনৈতিক দূরদর্শী নেতৃত্বের দিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি ইসলামী লেবাসধারী রাজনৈতিক দল। কিন্তু রাজনৈতিক সঙ্কটের সুরাহার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন ছুটে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক এবং যৌথ ঘোষণার পর তারা বুঝতে পারেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান ঠুকনো। ড. ইউনূসের লন্ডন বৈঠকে রোজার আগের নির্বাচনের ঘোষণা পরিষ্কার হয়ে উঠে দেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান আন-প্যারালাল নেতা। তারেক এবং বিএনপিকে ঠেকাতে দিল্লির তাঁবেদার রাজনৈতিক দল, দেশি-বিদেশি শক্তি, ইসলামী লেবাসধারী দু’টি রাজনৈতিক দল হঠাৎ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে।
দিল্লির নীলনকশা অনুযায়ী আগামী সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাই তাদের উদ্দেশ্য। এক সময় বুঝতে পারে, নির্বাচন হলে জনগণের ভোটে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকানো যাবে না। শুধু তাই নয়, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর নির্বাচিত সরকার গঠিত হলে দেশ শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং পশ্চিমা ও দিল্লির দাদাগিরি করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও তারেক রহমান নেতৃত্বে থাকলে ভারতের আধিপত্যবাদ হাওয়ায় উড়ে যাবে। নেতৃত্ব থেকে তারেক রহমানকে মাইনাস করা গেলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যাবে।
এ জন্যই নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে তারেক রহমানকে দূরে সরাতেই পশ্চিমা শক্তি ও দিল্লির নীলনকশা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে ‘চাঁদাবাজের দল’ ব্র্যান্ডিংয়ের মিশন সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু করা হয়। এ জন্য ভাড়াতে ইউটিউবার, কনটেন্টক্রিয়েটর, ব্লগার, দিল্লির সেবাদাস গণমাধ্যমকর্মী ও ইসলামী লেবাসধারী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেন। দেশের কোথাও কোনো অঘটন ঘটলে প্রকৃত ঘটনা জানার আগে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নাম জুড়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ইসলামী লেবাসধারী কিছু রাজনৈতিক দল যাদের কেউ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও কেউ ১৫ বছর হাসিনার তাঁবেদারি করেছেন তারা ইসলামী লেবাস নিয়েই ‘বগলে ইট মুখে শেখ ফরিদ’ প্রবাদের মতো দিল্লির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন; আবার দিল্লির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে তারেক রহমানকে ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তারই অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার লালচাঁদ ওরফে সাগর হত্যাকা- নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা হচ্ছে। পুরান ঢাকার যুবদল নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ওই হত্যাকাণ্ডে বীভৎসতা বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে। অথচ অনেকেই ওই হত্যাকাণ্ডের পর দু’দিন কেন ঘটনা চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল, হাজার হাজার মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড ঘটল সেটি সুপরিকল্পিতভাবে ভিডিও করা হলো, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন বাধা দিলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
গত কয়েক মাসে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ড ও মব জাস্টিস ঘটেছে সেগুলো নিয়ে তেমন প্রচারণা না চালিয়ে কেবল বিএনপি যেসব ঘটনায় জড়িত সেগুলো প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমনকি বিএনপি জড়িত নয় এমন কয়েকটি ঘটনায় বিএনপির নাম জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো হয়। এর আগে কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রথমে এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। ওই ঘটনা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনায় বিএনপি ও যুবদলের নেতারা জড়িত এমন প্রচারণা চালায় জামায়াত, এনসিপি এবং কিছু ভাড়াটে ইউটিউবার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও দিল্লির তাঁবেদার গণমাধ্যম।
তারা যুবদলের স্থানীয় নেতা ধর্ষণ-ট্রিপল মার্ডারে জড়িত এমন প্রচারণা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিযোগিতায় নামে। অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা এবং জামায়াত অনুসারীরা এই প্রচারণা চালালেও পরে ধর্ষিত ওই নারীর স্বামী জানায়, ওই উপদেষ্টার স্থানীয় অনুসারীরাই এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম পৈশাচিক ঘটনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর। মোবাইল চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক অপ্রকৃতিস্থ যুবককে পেটানো হয়। প্রথমে বেঁধে রেখে এবং হলের ক্যান্টিনে জোর করে ভাত খাইয়ে পৈশাচিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ওই সময় জামায়াত, এনসিপি নীরব ছিল। অতঃপর একের পর এক হত্যাকাণ্ড এবং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ‘মব সন্ত্রাস’ প্রচার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভাসিটির ছাত্রদলের এক নেতাকে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকা- নিয়ে জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো নীরবতা পালন করেছে। পুরান ঢাকার লালচাঁদ ওরফে সাগর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াত-এনসিপি-ইসলামী আন্দোলনসহ দিল্লির তাঁবেদার সাংবাদিক, ইউটিউবারদের এত প্রচারণা কেন?
অবশ্য যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘লালচাঁদ হত্যাকাণ্ডে পুলিশ যাদের বিরুদ্ধে ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মূল আসামিদের আড়াল করা হচ্ছে; আসামির তালিকা থেকে তিনজনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। ৯ জুলাই ঘটনা হঠাৎ করে ১১ জুলাই ব্যাপক প্রচার পেলো কেন? আগে কেন প্রচার হয়নি? এখানে কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে?’ একইভাবে অন্যরাও প্রশ্ন তুলেছেন, মামলার তালিকা থেকে তিনজনের নাম বাদ দেয়ার রহস্য কী?
বিএনপির ভেতরে এখনো ভারতের তাঁবেদারি করা নেতা রয়েছেন। তারা নানাভাবে ভারত ও পতিত আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষা করছেন। কিন্তু তারেক রহমান নেতৃত্বে থাকলে স্বার্থ রক্ষা হবে না। ফলে তারেক রহমানকে পশ্চিমা শক্তি ও হিন্দুত্ববাদী ভারত টার্গেট করেছে। তারেক রহমান আগামীতে বাংলাদেশের নেতৃত্বে এলে ভারতের দাদাগিরি থাকবে না। এ জন্যই তারা প্রথমে সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচনের দাবিতে একাধিক দলকে মাঠে নামায়। পিআর পদ্ধতির দাবি কার্যত মাঠে মারা যাওয়ায় এখন তারেক রহমানের নেতৃত্ব বিতর্কিত করতে মাঠে নামে। মূলত পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ভারতের অ্যাজেন্ডা।
যেসব দল এ দাবিতে সোচ্চার সেগুলো পর্দার আড়ালে দিল্লির সঙ্গে সমঝোতা করে ভারতের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টায় এখনো মাঠে রয়েছে। প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতার ভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল ভারতীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে তারেক রহমানকে টার্গেট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। জামায়াতের হিন্দু শাখা গঠন, ইসলামী ঐক্যজোটের সমাবেশে হিন্দু নেতাদের আমন্ত্রণ এগুলোর নেপথ্যে ছিল দিল্লির নির্দেশনা। এখন এ দলগুলো দিল্লির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে তারেক রহমানকে টার্গেট করেছে।
দীর্ঘদিন বিএনপি-জামায়াতের সমন্বয়ে গঠিত ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিলেন এমন একটি দলের নেতা বলেন, ‘বিএনপি ১৫ বছর দুধকলা দিয়ে কালসাঁপ পোষার মতো জামায়াতকে জোটের নামে রাজনৈতিক শেল্টার দিয়েছে। জামায়াত কী জিনিস এখন সেটি বিএনপি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। জার্মানির হিটলার বলেছিলেন, ‘ইহুদিরা কী জিনিস বিশ্ববাসীকে সেটি বোঝানোর জন্যই কিছু ইহুদিকে বাঁচিয়ে রেখেছি।’ একদিন ওই হিটলারের মতো হয়তো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যাবে, ‘জামায়াত কত হিংস্র ও বেঈমান দেশবাসীকে তা বোঝানোর জন্যই দলটিকে নিষিদ্ধ করলেও নেতাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলাম।’
এদিকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে পৈশাচিক কায়দায় ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংস হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলে দাবি করেছেন একাধিক সামরিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। গোয়েন্দা সংস্থা বিএনপিকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। তারা বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থার মদদে মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে যেভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং রাতারাতি একযোগে সারাদেশে বিএনপি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একই কায়দায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঢেউ তোলা হয়েছে, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
প্রায় একই সময়ে যুবদলের সাবেক এক নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যার ঘটনায় কেন সবাই নীরব ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট অপপ্রচারের পেছনে একটি ইসলামী ক্যাডারভিত্তিক দলকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। প্রখ্যাত ইউটিউবার, পিনাকি ভট্টাচার্য, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনসহ অনেকেই এ ঘটনার সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত বলে ইউটিউবে বক্তব্য দিয়েছেন।
তারেক রহমান বিগত দেড় যুগ ধরে বিদেশে থাকলেও তিনি পরিপক্ব রাজনীতিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আত্মবিশ্বাস দেশবাসীকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে তারেক রহমান প্রতিদিন নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করেছেন এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আওয়ামী সরকারের চরম ফ্যাসিবাদী আচরণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বারবার হোঁচট খেয়েছে; এমনকি কয়েকজন ছাত্রনেতা গ্রেফতারের পর ডিবি অফিসে আন্দোলন না করার মুচলেকা দেন। তখনো তারেক রহমান তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দক্ষতার সাথে মন্ত্রণা দিয়ে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে এই আন্দোলনে রাজপথে সুসংগঠিত ও সম্পৃক্ত করেন এবং গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত করতে পথ দেখান। অথচ তিনি কখনো ক্রেডিট দাবি করেননি।
প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে দলীয় কোন্দলকে প্রচার করা হয়েছে চাঁদাবাজি হিসেবে। বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, “লালচাঁদ ওরফে সাগর হত্যাকাণ্ডটি আসলে যুবদলের (যুবদল) অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেছে, স্থানীয় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। ডিজিএফআই রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এবং জনমতকে নিয়ন্ত্রণ করতে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত করার সাথে জড়িত। ডিজিএফআই ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপির ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে এই ঘটনার সংবাদ যেভাবে তৈরি করে দিয়েছে, তাদের প্রভাবিত মিডিয়াগুলো তা সেভাবেই ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামরিক বাহিনী থেকে ফ্যাসিস্ট দোসরদের এখনো না সরানোয় তারা এসব করছে। এরাই বিএনপির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও প্রবাসী লেখক পিনাকি ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিএনপির চান্দাবাজ দুর্বৃত্ত অংশকে আসকারা দিয়ে মাঠে নামিয়েছে ডিজিএফআই। ডিজিএফআইয়ের লক্ষ্যই ছিল বিএনপির বেপোরোয়া অংশকে দিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করা যেন বিএনপি ঘৃণিত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। যেন বিএনপিকে এভাবেই একেবারে ধ্বংস করে দেয়া যায়।’ বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি ডিজিএফআইয়ের গ্র্যান্ড ডিজাইনটা বুঝতে পারতেছেন? প্রশ্ন করেন, কে তাদের সাহস দিছে এভাবে খুন করা যায়? কে খুনের সময়ে ক্যামেরায় নিখুঁতভাবে ভিডিও করল? চাঁদা না পেয়ে খুন করা একরকম। কিন্তু বীভৎসভাবে খুনের স্পেক্টাকল কার পরিকল্পনায়? অবাক লাগে না? যেন ক্যামেরাম্যান জানত এই ঘটনা ঘটবেই।’
ফেসবুকে এক লাইভে লে. কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান মিটফোর্ডের ঘটনায় ডিজিএফআইকে সরাসরি দায়ী করে বলেন, ‘তারেক জিয়া আন্দোলন চলাকালে ওখানে (লন্ডন) কোনো একটা প্লান করছেন, ডিজিএফআই-এনএসআই সঙ্গে সঙ্গে এখান থেকে তা জেনে যেত। এটি (মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড) বুঝার জন্য যথেষ্ট। পাথর মেরে একজনকে মারল। আর একজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার পুরো ভিডিও করল। এখানে একটি জিনিস খেয়াল করতে হবে, স্বাভাবিকভাবে এরকম একটি ঘৃণ্য পরিস্থিতি ঘটছে, একজনকে লাঠি দিয়ে বা পাথর দিয়ে মারা হচ্ছে। সাধারণ জনগণ তখন কী করবে? ওরা তো পালিয়ে চলে যাবে। এটা কিন্তু ওই পরিস্থিতি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরোটা ভিডিও করেছে এবং যে পজিশন থেকে পুরো ভিডিওটা করেছে, যারা পাথর মারছিল তাদের এটি বোঝার কথা। কারণ ভিডিওটা যে করছে সে ওর দিক থেকে এসে পাথর মারতেছে। যেখান থেকে ভিডিওটা করছে সে দিক থেকে গিয়ে পাথর মারছে। এটি পরিকল্পিত।’ সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহে আগে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং এনএসআই যে দক্ষতা দেখিয়েছে তা তুলে ধরে বলেন, ‘এই সংস্থাগুলো চাইলেই কি মিটফোর্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারে না?’ গোয়েন্দারা অস্থিরতা তৈরির জন্য ভারতীয় পরামর্শে এসব কাজ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে দুর্বল করতে পারলে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে? ভারত লাভবান হবে।’ এ সময় বিএনপির কৌশলগত কিছু ভুলের সমালোচনা করে তিনি পরামর্শ দেন, ‘তারেক জিয়ার আশেপাশে যারা আছে তাদের সিকিউরিটি ভেরিফিকেশন (অন্য কারোর সাথে কোনো সংযোগ আছে কি-না যাচাই করা) করা দরকার। কারোর কারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হচ্ছে কি-না?’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সোহাগ হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট বানানো হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। তিনি দেশের ফিরলে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ তাকে বরণ করে নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি যখন দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক তখনই তাকে টার্গেট করা হচ্ছে। ভারতের নীলনকশায় আওয়ামী লীগকে সংসদে পুনর্বাসনের চেষ্টারত বিএনপিবিরোধীরা যেমন চাচ্ছে না তারেক রহমান দেশে ফিরুক; তেমিন বিএনপির ভেতরে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীও চাচ্ছে না তিনি দেশে এসে শক্তভাবে দলের হাল ধরুক।
পরিকল্পিতভাবেই টার্গেট বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও তার বিরুদ্ধে রীতিমতো নোঙরা ক্যাম্পেইন চলছে। তার নেতৃত্ব ধ্বংস করাই যেন এর মূল টার্গেট। দিল্লির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের ঠিকাদারী নেয়া দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় কথিত ইউটিউবার, ভূঁইফোড় কিছু চ্যানেল টানা প্রোপাগান্ডা, অপপ্রচার ও অপতথ্য ছড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তারেক রহমানকে নিয়ে অত্যন্ত নোঙরাভাবে টার্গেট করে কুৎসা রটানো হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্যাডারভিত্তিক একটি ইসলামী লেবাসধারী দলের প্রত্যক্ষ মদদে তারেক রহমানবিরোধী এ প্রচারণা জোরেশোরে চালানো হচ্ছে। পেছনে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের অবৈধ পয়সা ঢালা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানকে টার্গেট করা হলেও তাকে ধরাশায়ী করা কঠিন হবে। কারণ তিনি হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও বিচক্ষণতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখিয়ে যেভাবে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, কোনো ষড়যন্ত্র সেটিকে ভাঙতে পারবে না।