সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী জাতীয় সংসদে আসন বণ্ঠন, সংস্কারের অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করে নতুন করে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে মাঠপর্যায়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলাই হচ্ছে দিল্লির নতুন নীলনকশা। হিন্দুত্ববাদী ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্কদের এই মস্তিষ্কপ্রসূত কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে কিছু রাজনৈতিক দল।
হাসিনা পালানোর পর দেশের রাজনীতির মাঠে তার রাজনৈতিক ফৌজ সিপিবি-জাসদ-বাসদ-ওয়ার্কার্স পার্টি-ন্যাপ ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’, ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা’, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন’ দাবি জোরালো করে তুলছে। জামায়াত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে তাদের সঙ্গেই সুর মেলাচ্ছে। দিল্লিকে খুশি করতে দেশের রাজনীতিতে ডান-বাম যেন এক সারিতে হাঁটছে। কিন্তু গত শনিবারও প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ঐকমত্য জাতীয় কমিশনের বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের বিপক্ষে অভিমত দিয়েছে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিপক্ষে এবং কিছু সংস্কার করে দ্রুত ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছে।
‘সুরের ভুবনে আমি আজো পথচারী/ক্ষমা করে দিও যদি না তোমার/ মনের মতো গান শোনাতে পারি’ (সিনেমা : হারজিত)। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা সত্য সাহার সুরারোপিত শিল্পী মাহমুদুন্নবীর গাওয়া এই গানটি যেন বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতি খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে দিল্লিকে খুশি করে গান গাওয়া যেন রাজনীতিকদের ফ্যাশন হয়ে গেছে। ২০০৮ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির লাটাই দিল্লির হাতে থাকায় মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজনীতির ভুবনে যারা রাজনীতি করছেন তাদের চিন্তা-চেতনার সুর যদি দিল্লির ‘মনের মতো’ না হয় তাহলে সে নেতাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের রাজনীতির চাবি ভারতের হাতে থাকলেও দেশের অন্য দলগুলোর নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। হাসিনা পালানোর পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নাকানিচুবানি খেলেও নরেন্দ্র মোদি গংদের বাংলাদেশ ইস্যুতে ভাবখানা কলকাতার সিনেমার নায়িকা শুভশ্রী গাঙ্গুলির লারেলাপ্পা মার্কা ‘যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে/লাটাই তো আমার হাতে’ গানের মতোই। নেতাদের ধারণা- বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার লাটাই দিল্লির সাউথ ব্লকের হাতে।
ভারতের নাচের পুতুল হাসিনার পালায়ন এবং আওয়ামী লীগের ‘রাজনৈতিক মৃত্যু’ পরও এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে দিল্লি নিজেদের মতো করেই প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে। দিল্লির অ্যাজেন্ডা কার্যত জাতিসংঘ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে ফের বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইস্যুতে সেটি এখন মোদির দর্পচূর্ণ। হাসিনাকে ফেরানো সম্ভব নয়, এখন অন্তত আওয়ামী লীগ আগামী ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সে বন্দোবস্ত করতে ঘোট পাকাচ্ছে।
আর সেটার টেষ্টায় চাণক্যনীতির ভারত পর্দার আড়াল থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারকে গেলাতে চাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ যাতে ঘুরে দাঁড়ানোর কিছু সময় পায় সে লক্ষ্যে ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ হাসিনার পুরোনো থিউরির মতো ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’ থিউরি হাজির করেছে। দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্কদের এই থিউরির ফাঁদে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দল পা দিয়েছেন। ভাবখানা যেন, সংস্কার না করে জাতীয় নির্বাচন করা হলে দেশ রসাতলে চলে যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন প্রস্তুত একসঙ্গে চলবে।’ তার ভাষায়- রাজনৈতিক দলগুলো যতটুকু সংস্কার চাইবে ততটুকু সংস্কারের পর নির্বাচন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘নতুন বাংলাদেশ মানে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।’ সংস্কার মূলত চলমান প্রক্রিয়া। শুধু রাজনীতি নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার অপরিহার্য। ওয়ান-ইলেভেনের পর ড. ফখরুদ্দিন-মঈন ইউ আহমেদের শাসনামলে দিল্লির অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ‘সংস্কার’ ইস্যু নিয়ে এত মাতামাতি হয়েছে যে, নির্যাতিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘সংস্কার’ শব্দটি গালি চিহ্নিত হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ‘দুই নেত্রী মাইনাস’সহ ১৪০টি সংস্কার প্রক্রিয়া করেছিলেন।
রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে মাইনাস করতে পারেননি। নির্বাচনে দিল্লির প্রত্যাশিত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মাত্র ৪০টি সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেছে; আর ১০০টি সংস্কার প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে। হাসিনা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, মানবাধিকার, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, সামাজিক বন্ধনসহ সব কিছু ধ্বংস করে গেছেন। উন্নয়নের নামে ১৮ লাখ হাজার কোটি টাকা ঋণ করে কিছু মেগা প্রকল্প বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। সচিবালয় থেকে থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, সংবিধান, নির্বাচন কমিশনসহ সবকিছু দলীয়করণের কারণে কার্যত অকার্যকর হয়ে যায়।
ফলে হাসিনার পালানোর পর প্রশাসনে কিছু সংস্কার অপরিহার্য। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ১০টি সেক্টরে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট জমাও দিয়েছে। সংস্কার ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন গতকাল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অথচ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে জামায়াতসহ কয়েকটি দল ‘পোপ মোর দ্যান ক্যাথলিক’ হয়ে গেছেন। সংস্কারের নামে দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্করা বাংলাদেশের সংস্কার, রাজনীতি, নির্বাচন ইস্যুতে যে নকশা করেছে দলগুলো সেটিই চাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দিল্লিতে বসে হাসিনা নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের তীর ছুড়েছে বাংলাদেশের দিকে। প্রতিটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। পাচার করা টাকা খরচ করে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের চেষ্টা করছে। সজিব ওয়াজেদ জয় কোটি কোটি টাকা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। সেটিও কার্যত ব্যর্থ হয়ে গেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে। হাসিনার রাজনীতিতে জাতিসংঘ কার্যত শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে।
তবে এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দিল্লির চেতনাধারী একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিক আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে হিন্দুত্ববাদী ভারতের রাজনীতির থিঙ্কট্যাঙ্কদের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন’ এবং সংস্কারের নামে মৃতপ্রায় আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’ থিউরি হাজির করে। আর এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে হাসিনার রাজনৈতিক ফৌজ সিপিবি সংস্কার-সংস্কার গাইতে শুরু করেছে। সিপিবির সঙ্গে সুর মিলিয়েছে ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত আদর্শে বিশ্বাসী দল জামায়াত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ অভিমত দিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না করার প্রস্তাব করেছি। বৈঠকে ছোট ছোট অ্যাডভাইস দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন কবে হবে, কোন কোন দল তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়। আমরা বলেছি, আমরা আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই না। সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে একটি মারামারি হওয়ার শঙ্কা আছে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া জানান, তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, দেশে যা রাজনৈতিক সমস্যা, সামনে যে নির্বাচন ও সংস্কার সে বিষয়ে ঐকমত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় তাহলে মানুষের অগ্রাধিকার বদলে যাবে। তাতে অনেক নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে।
দীর্ঘ ১৫ বছর ভোট দিতে না পারায় দেশের সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। তারা নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে উদগ্রীব। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্র-জনতার সমর্থন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলেও তারা বেশ দুর্বল। যতদিন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দিল্লি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে তোপ ঝাড়বে। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে চীনের বিনিয়োগ বেড়ে যাবে। তখন ভারত চুপসে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার যত বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকবে ততদিন একের পর এক ষড়যন্ত্রের ডালপালা ছড়াবে।
ফলে সংস্কার এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া একই সঙ্গে চালাতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সে কথা অনেক আগেই জানিয়েছেন। তবে দিল্লির চেতনার ভ্যানগার্ড ওই ইংরেজি-বাংলা দৈনিকের ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’ ও ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন’ থিউরি হাজির করার পর আওয়ামী লীগের জার্সি পরে খেলতে অভ্যস্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাসদ, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপসহ কিছু বাম ও কিছু ইসলামী ধারা দল সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন, সংস্কারের পর নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কোরাস গাইতে শুরু করে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপেও তারা এ দাবি করেন।
মূলত বামধারা, ইসলামী ধারার ওই দল যাদের প্রার্থীরা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হওয়ার মতো ভোট পায় না তারা সংখ্যানুপাতিক ভোটের মাধ্যমে সংসদে যাওয়ার খায়েশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আর ক্যাডারভিক্তিক দল জামায়াত একই ফাঁদে পা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে পৈশাচিক জুলুম-নির্যাতনের শিকার এমনকি জামায়াতকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করা হয়েছিল। সেই জামায়াত এখন দিল্লির অ্যাজেন্ডা ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন’, ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’ এবং ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন’ দাবির কোরাস গাইছে। ছাত্র-জনতা হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার। অথচ ইসলামী ধারার দলটির আমীর লন্ডনে গিয়ে বলেছে, ‘শেখ হাসিনাকে বার বার ফ্যাসিস্ট বলতে তার ভালো লাগে না’। তিনি ‘ভারতের বিরুদ্ধে জামায়াতের রাজনীতি নয়’ এবং ‘ক্ষমতায় গেলে মেয়েরা যেমন খুশি পোশাক পরে রাস্তায় নামতে পারবে’ ঘোষণা দেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে জামায়াত। এক যুগের বেশি সময় আগে ইসির সঙ্গে বৈঠকের পর জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল মরহুম আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দুই হাতে ‘বিজয়সুচক ভি চিহ্ন’ দেখিয়ে ‘বাংলাদেশে রাজাকার বলতে কিছু নেই’ বক্তব্য দেয়ার পর যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক) নতুন করে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তার করুণ পরিণতি বিচারের নামে জুডিশিয়াল কিলিং করে কয়েকজন নেতার ফাঁসি দেন। আওযামী লীগ ক্ষমতায় এসে জামায়াতের প্রথামে নিবন্ধন বাতিল পরে নিষিদ্ধ করা হয়।
জামায়াত নেতারা ইসির সঙ্গে বৈঠকে ইসির সংস্কারসহ ২৩ প্রস্তাব দেয়। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ‘নো ইলেকশন উইদাউট রিফর্মস’ (সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়) এমন মন্তব্য করে বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার নয়, শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত যেসব সুপারিশ অতি জরুরি, অন্তত নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত ইসিকে নির্বাচনের কোনো দিন, মাস, ক্ষণ বেঁধে দেয়নি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই সময় দিতে জামায়াত প্রস্তুত।
কিন্তু বিএনপির কয়েকজন নেতা দিল্লির চেতনায় লম্ফঝম্ফ করলেও দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা দিল্লির তাঁবেদারির বিরুদ্ধে সোচ্চার। হাসিনার বিচারের দাবিতে তারা একাট্টা। ফলে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন মানবে না জানিয়ে দিয়েছে। শুধু তারাই নয়, বিএনপির সঙ্গে যুগপদ আন্দোলন করা ১২ দলীয় জোট, ১২ দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, কর্নেল অলি আহমদের এলডিপি এবং ইসলামী ধারা ও বামধারার কয়েকটি দলসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে যৌক্তিক সংস্কার করে নির্বাচনে দাবি জানিয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও প্রধান উপদেষ্টার সামনে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করার পাঁয়তারা মাত্র।
গতকালও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, শেখ হাসিনা ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা নিয়ে ওঁৎপেতে আছে। দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হবে। জাতি এখন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। ইউনূস সরকার নির্বাচন দিতে গড়িমশি করছে।