আজ শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে তিন দিনব্যাপী ঢাকায় শুরু হচ্ছে নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ( সিজিএস) সম্মেলন। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর এবার ভিন্ন বাস্তবতায় ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ আয়োজন করছে নীতি-গবেষণা এই প্রতিষ্ঠান।
তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশ থেকে ২০০ জনের বেশি আলোচক, ৩০০ জন প্রতিনিধি এবং ৮০০ জন অংশগ্রহণকারী সমবেত হবেন। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
জিল্লুর রহমান জানান, আজ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ফার্নান্দো,মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ দুই বছর ধরে বার্ষিক বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের আয়োজন করে আসছে। বিগত বছরগুলোতে এ সম্মেলনটি আয়োজন করতে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নানা বাধা দেওয়া হয়েছিল। তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। তবে এ বছর আমরা অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি।’’
জিল্লুর রহমান আরো বলেন,‘তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রিরা তাঁদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি।সাবেক সরকারের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি অতিথি,পৃষ্ঠপোষকদের নিরুৎসাহিত করা হতো।
সাবেক পররাষ্ট্র ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ,সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বিভিন্নভাবে বাধা দিতেন।এমনকি সে সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে ফোন করে এই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার এবং খবর প্রকাশ না করার জন্য চাপ দিয়েছিল।এ ছাড়া সম্মেলনে উপস্থিত থেকে তারা অংশগ্রহণকারীদের ওপর নজরদারি করত,অংশগ্রহণকারীদের তুলে নেওয়ারও ঘটনা ঘটেছিল।’
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘এর আগে সম্মেলনের সময় তৎকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি এড়িয়ে গেছেন।এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এই তিন দিনের অর্থপূর্ণ এবং প্রভাবশালী আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
জিল্লুর রহমান জানান, ভূ-রাজনীতি বিষয়ক এই সম্মেলনটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ট্র্যাক-২ কূটনীতিকে সহজতর করার একটি প্ল্যাটফরম।বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের (বিওবিসি) তৃতীয় সংস্করণের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অ্যা ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড’।এই সম্মেলন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি,স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়—এমন সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্ব দেবে।
সম্মেলনে সিজিএসের অংশীদার হিসেবে রয়েছে ইউএসএআইডি, ইউএন বাংলাদেশ, ইউএনডিপি, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন, কানাডিয়ান হাইকমিশন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, ফ্রেডরিখ ইবার্ট স্টিফটাং, এয়ার এশিয়াসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
সিজিএসের সভাপতি মুনিরা খান বলেন, ‘এই সম্মেলন থেকে আমরা গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারসহ বৈশ্বিক বিষয়ে জানতে চাই, কথা বলতে চাই।এই সম্মেলনের এজেন্ডা জনগণের জন্য,কোনো রাজনৈতিক দলের নয়।পৃথিবীব্যাপী জনগণ,গণতন্ত্র,মানবাধিকার,নির্বাচন, দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলার জন্যই এই সম্মেলন।’