আজ পবিত্র হজ। এবার শুক্রবার পালিত হচ্ছে বলে আজকের হজ ‘আকবরি হজ’ হিসেবে মর্যাদাপ্রাপ্ত। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ৯ জিলহজ হলো ইয়ামুল আরফা বা আরাফার ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন। সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফার ময়দানে হজ পালনের উদ্দেশে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমবেত হয়েছেন লাখ লাখ মুসলমান।
আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে লাখো হাজির রোদনভরা ফরিয়াদ- ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক; লা শারিকা লাক’। অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই। সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ শুধু তোমার ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের জন্য আমরা এখানে সমবেত হয়েছি।
করোনা মহামারির পর সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এবার উন্মুক্তভাবে তবে সীমিত পরিসরে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ পবিত্র হজব্রত পালনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার ডাবল ডোজ টিকাপ্রাপ্ত ১০ লাখ মুসলিম হজ পালনে আরাফায় সমবেত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ৫৬ হাজার হাজিসহ ৮ লাখ ৫০ হাজার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। বাকিরা সৌদি আরবের বাসিন্দা।
মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের পুণ্য স্মৃতি বিজড়িত পবিত্রতম আজকের দিন। ধর্মীয় বিধান মোতাবেক নিজেদের পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে পবিত্র হজব্রত পালন করছেন লখো মুসলিম। মহামারি করোনার কারণে গত বছর সৌদি আরবে অবস্থানরত বিশে^র ১৫০টি দেশের নাগরিকসহ মাত্র ৬০ হাজার হাজির অংশগ্রহণে হজ পালিত হয়।
আজ ফজরের নামাজ আদায় শেষে মিনা থেকে হাজিরা সমবেত হবেন আরাফাতের ময়দানে। হাজিদের (পুরুষ) পরনে শুধু সেলাইবিহীন সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র (ইহরাম)। এখানে তারা একসঙ্গে জামাতের সঙ্গে জোহর ও আসরের কসরের নামাজ আদায় করবেন। এর আগে মসজিদে নামিরার মিম্বর থেকে হজের খুতবা দেবেন খতিব শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করিম আল-ঈসা।
এ খুতবা সরাসরি বাংলা ভাষাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় সম্প্রচার করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন আরাফা থেকে সরাসরি হজ কার্যক্রম সম্প্রচার করবে। হাজি সাহেবানরা আরাফার প্রান্তরে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এ সেই ময়দান যেখানে দেড় হাজার বছর আগে দাঁড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে খুতবা দিয়েছিলেন আল্লাহর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
বিদায় হজের খুতবায় নবীজি (সা.) ঘোষণা করেছিলেন, ‘আজ থেকে ইসলামকে পরিপূর্ণ ধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহতালার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম।’ এ সেই প্রান্তর যেখানে পৃথিবীর আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও মাতা হজরত বিবি হাওয়া (আ.) আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ক্ষমার পয়গাম লাভ করেছিলেন।
বেহেশত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়ার পর যেখানে আদিপিতা-আদিমাতা একত্রিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। সেই প্রান্তরে আজ সমবেত তাদের উত্তরসূরি ধর্মপ্রাণ মানবজাতির প্রতিনিধিত্ব করছেন আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতরা (অনুসারী)। হিজরি পঞ্জিকা অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার (সৌদি আরবে ৮ জিলহজ) থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
মিনার প্রান্তরে গতকাল ফজর থেকে এশা পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্তের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেন হাজিরা। সারা রাত মিনায় তাঁবুর মধ্যে ইবাদত-বন্দেগি ও রোনাজারি করে কাটান নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হাজি সাহেবানরা। এর আগে বুধবার বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে হাজি সাহেবানরা মক্কা নগরীতে মাসজিদুল হারামে অবস্থিত পবিত্র কাবাগৃহ তাওয়াফ করেন।
এই তাওয়াফের মাধ্যমে শুরু হয় পবিত্র হজব্রত পালনের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর মক্কা থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে মিনায় এসে নবীজির (সা.) সুন্নত অনুযায়ী তাঁবুতে রাতযাপন করেন।