ভারতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে ক্রমবর্ধমান অব্যাহতির পরিবেশ নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অধীনে থাকা উত্তর প্রদেশ পুলিশ মুজাফফরনগরে একজন মুসলিম যুবককে গুলি করে আহত করেছে। আদালতের ভেতর থেকে যুবকটির একটি ভিডিও প্রকাশের মাত্র একদিন পরে এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। ভিডিওতে হেফাজতে নির্যাতন থেকে বাঁচতে মরিয়া হয়ে অনুরোধ করেছিলেন ভুক্তভোগী।
এই ঘটনাটি সেখানে চলমান ‘অপারেশন ল্যাংড়া’র অধীনে মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভারতীয় পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছে।
গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটেছিল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) নাই মান্ডি থানা এলাকায়। পুরোনো একটি মামলায় আত্মসমর্পণ করার জন্য যুবক চাঁদ মোহাম্মদ আদালতে গিয়েছিলেন। অনলাইনে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে, তাকে তার আইনজীবীর চেম্বারে বসে কাঁদতে দেখা যায় এবং সে বলে যে পুলিশ তাকে মেরে ফেলতে চায়।
ভিডিওতে চাঁদ মোহাম্মদ বলেন, ‘‘আমি আত্মসমর্পণ করতে এসেছি। আমি কোনো ভুল করিনি। এসওজি দল নিচে অপেক্ষা করছে। তারা আমাকে মেরে ফেলতে চায়। আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে। দয়া করে আমাকে বাঁচান। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।’’
আরেকটি ভিডিওতে তার আইনজীবী আশ মোহাম্মদ পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, চাঁদের বিরুদ্ধে মামলাটি ছিল ২০২৪ সালের একটি হামলার অভিযোগ এবং আত্মসমর্পণের আবেদন ১৬ নভেম্বর জমা দেওয়া হয়েছিল। আইনজীবীর মতে, পুলিশ তদন্ত চলছে বলে আত্মসমর্পণের তারিখ বারবার পিছিয়ে দিচ্ছিল।
তিনি বলেন, ‘‘আমার মক্কেল আত্মসমর্পণ করতে এসেছিলেন কারণ মামলাটি প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু আদালতের বাইরে এসওজি’র উপস্থিতি তার জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ ছিল।’’
তিনি আরও বলেন, চাঁদের নিরাপদে আত্মসমর্পণ করার অধিকার ছিল এবং পুলিশের এই আচরণ ভয়ের সৃষ্টি করেছে।
এই ভিডিওগুলি থাকা সত্ত্বেও, পরের দিন বিকেলে পুলিশ ঘোষণা করে, পিন্না বাইপাসে কর্ডন অভিযানের সময় তারা চাঁদকে ধরে ফেলেছে। তারা দাবি করে, সে অফিসারদের দিকে গুলি ছুঁড়েছিল, যার ফলে তারা তাকে গ্রেপ্তার করার আগে তার পায়ে গুলি করে। পুলিশ আরও জানায়, একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, সময় এবং ভিডিওগুলি পুলিশের ভাষ্যকে সন্দেহজনক করে তুলেছে। তারা উল্লেখ করেন, লোকটি আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে তাকে একটি সাজানো এনকাউন্টারে গুলি করা হবে।
একজন সিনিয়র স্থানীয় কর্মী বলেন, ‘‘প্রশ্নটি সহজ: যদি সে আদালতের ভেতরে আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত থাকত, তাহলে পরের দিন সে কেন পালাবে এবং পুলিশের দিকে গুলি চালাবে? ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, ঠিক যা ঘটেছে, সে সেই ভয়টাই করেছিল।’’
বিরোধী দলের নেতারাও অভিযোগ করেছেন, রাজ্যটি আইন-শৃঙ্খলা উন্নত করার নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে পুলিশি শক্তি ব্যবহার করছে। মুজাফফরনগরের একটি অধিকার সংগঠনের একজন সদস্য বলেন, ‘‘এই প্রথম নয় যে মুসলিম পুরুষদের এভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। অপারেশন ল্যাংড়া নিরাপত্তা নয়, ভয়ের সৃষ্টি করেছে।’’