প্রফেসর এম এ রশীদ
ভারতীয় জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতার জন্য দরকার সহনশীলতা, সমান মর্যাদা ও রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির নীতি, যা বিভিন্ন গোষ্ঠী ও অঞ্চলের মধ্যে বিশ্বাস ও সংহতি বজায় রাখে। আধিপত্যবাদী মনোভাব এ ক্ষেত্রে বিপরীত প্রভাব ফেলে, ফলে দেশের একতা ও উন্নয়ন ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।
ভারতের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেশী দেশগুলো নিরাপত্তা রক্ষায় নতুন জোট ও বিকল্প শক্তির সন্ধান করে। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো নেপাল-চীন কৌশলগত নিরাপত্তা সহযোগিতা। এর আওতায় তারা ‘ঊাবৎবংঃ ঋৎরবহফংযরঢ়-২০২৪’ নামে মহড়া চালায়। এটি একটি অ্যান্টি-টেররিজম মহড়া।
অক্টোবর ২০২৪-এ চীন ও নেপাল যৌথভাবে এই মহড়া করেছিল, যেখানে উভয় পক্ষের সশস্ত্র বাহিনী একত্রে কৌশল, যোগাযোগ ও অপারেশনাল সমন্বয় অনুশীলন করে। এর মাধ্যমে নেপাল এখন ভারতের একচ্ছত্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে অন্য শক্তির সুরক্ষা জোট গঠনের পথে হাঁটছে।
একই সময়ে তারা সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রোটোকলে স্বাক্ষর করে, যা নেপালের প্রতিরক্ষা সামর্থ্য আধুনিকীকরণে চীনের সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ ও গোলা-বারুদ উৎপাদনে সহায়তা দেবে। এতে নেপালের আর ভারতের ওপর একক নির্ভরতা থাকল না। বহুমুখী সুরক্ষা জোট গড়ে ওঠার রাস্তা তারা উন্মুক্ত করল ।
ভারতের প্রতি আস্থা নষ্ট হওয়ায় নেপাল চীনের দিকে ঝুঁকে নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা জোরদার করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে একপ্রকার ‘ব্যাহতকারী হেজিমনি’ হিসেবে দেখতে প্ররোচিত করে। জাতিসঙ্ঘ বা দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা সংস্থা সার্কের মঞ্চে তারা ভারতের নীতিকে কঠোর ভাষায় প্রশ্ন তোলে, যা স্থানীয় মতভেদকে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিয়ে আসে।
ভারতের প্রতিবেশী নীতির বাস্তব চিত্র
১. নিরাপত্তা ও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব : ভারতের আকার, সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কারণে অনেক ছোট প্রতিবেশী দেশ ভারতকে প্রভাবশালী বা আধিপত্যবাদী হিসেবে দেখে। এতে পারস্পরিক অবিশ্বাসের জন্ম হয়।
২. চীনকে ঘিরে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা : চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (ইজও)-এর কারণে অনেক প্রতিবেশী চীনের দিকে ঝুঁকেছে, যেমন- পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা। এতে ভারত নিজেকে ঘিরে কৌশলগত চাপে পড়ে।
৩. সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি : পাকিস্তানের সাথে কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের স্থায়ী উত্তেজনা চলছে। নেপালের সাথে সীমান্ত মানচিত্র বিতর্ক চলছে। বাংলাদেশের সাথে নাগরিকপঞ্জি (ঘজঈ), পানি ও অভিবাসন ইস্যুতে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করছে ভারত।
শ্রীলঙ্কায় তামিল ইস্যু ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের দৃষ্টিকটু চেষ্টা করেছে তারা। মালদ্বীপ ও ভুটানেও তারা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের নগ্ন চেষ্টা চালায়। ভারতের এমন সঙ্কীর্ণতার কারণে দেশগুলোর সাথে তাদের চরম উত্তেজনা বিরজা করছে।
৪. ‘বড় ভাই’ আচরণ : ভারত যদি সমান মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক বজায় না রাখে এবং ‘নির্দেশনা-নির্ভর কূটনীতি’ অনুসরণ করে, তবে প্রতিবেশীদের মধ্যে ক্ষোভ স্থায়ী হবে।
এই নীতির ঝুঁকি কী?
প্রতিবেশীরা সবাই চীনের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। আঞ্চলিক কূটনীতিতে ভারত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত চলছে অস্থিরতা, এ থেকে সংঘর্ষ শঙ্কা বাড়ছে। প্রতিবেশী দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভারতের সঙ্কীর্ণ স্বার্থবাদী নীতির করাণে সার্ক ও বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে।
অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্য ও বিচ্ছিন্নতাবাদ
ভারত নিজেই একটি বিশাল সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ভাষাগতভাবে বিভক্ত ফেডারেশন, যেখানে প্রায় ২৮টি রাষ্ট্র এবং আশির বেশি ভাষা ও উপভাষা বিদ্যমান। এই বৈচিত্র্য দেশের শক্তি হলেও একই সাথে চ্যালেঞ্জের কারণও।
১. সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিভাজন : মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ এবং নিপীড়ন চালাচ্ছে ভারত সরকার। এর ফলে সামাজিক বিভাজন, নিরাপত্তাহীনতা ও ধর্মীয় সহিংসতা বাড়ছে। ক্রমাগত আক্রমণ ও নিপীড়নের প্রভাবে সামাজিক বিভাজন ও উগ্রতা স্থায়ী হচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ঘৃণাভিত্তিক হিংসা এবং প্রতিবাদের কারণে জাতিগত ও ধর্মীয় ভেদাভেদ বাড়ছে। নিপীড়ন ও অবিচারের কারণে মুসলিমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারছে না, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
হামলা ও বৈষম্যের কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই কর্মসংস্থান ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ধর্মীয় নির্যাতন সমাজে গভীর ফাটল সৃষ্টি করে, যা দেশের সামগ্রিক সংহতি ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করে। কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী ধর্মীয় লড়াইকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। বিভিন্ন জায়গায় তীব্র ধর্মীয় সম্প্রীতির অভাব ও আরো উগ্র মতাদর্শের উত্থান হচ্ছে। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাধারণত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
২. ভাষাগত বিভাজন ও রাজনীতির প্রভাব : ভাষাগত বিভাজন ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা। ভারতের সংবিধানিক ফেডারেল কাঠামোর মধ্যে এই ভাষাভিত্তিক বিভাজন কখনো কখনো সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনে রূপ নেয়, আবার কখনো রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বিভাজনের রূপ ধারণ করে। ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়; বরং একটি গোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের অংশ। ফলে এক ভাষাভাষী গোষ্ঠী অন্য ভাষার আধিপত্যকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মনে করে।
কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দীকরণ নীতি
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সময় হিন্দি ভাষাকে প্রাধান্য দিতে চেয়েছে প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত ব্যবস্থায়, যা দক্ষিণ ভারত, বিশেষত তামিলনাড়ুতে তীব্র প্রতিরোধের সৃষ্টি করে। হিন্দিকে ‘জাতীয় ঐক্যের প্রতীক’ হিসেবে প্রচারের ফলে অন্যান্য ভাষাভাষী সম্প্রদায় নিজেদের প্রান্তিক মনে করে। এ জন্য তামিলনাড়ুতে হিন্দির বিরোধিতা চলছে। ১৯৬৫ সালের হিন্দিবিরোধী আন্দোলনে তামিলরা ব্যাপকভাবে রাস্তায় নামে। এখনো প্রতিবার কেন্দ্র হিন্দি চাপিয়ে দিতে চাইলেই সেখানে প্রতিবাদ হয়। আঞ্চলিক দল এই ভাষাভিত্তিক আত্মপরিচয়ের ভিত্তিতে সমর্থন পায়।
আসাম ও বাঙালি ভাষাভাষী ইস্যু : আসাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভাষাগত এবং জাতিগত বিভাজনের কারণে বহু আন্দোলন হয়েছে। এনআরসি ও সিএএর মতো নীতিমালার পেছনে ভাষাগত পরিচয়কেও ভিত্তি করা হয়, যা বাঙালি মুসলমান ও হিন্দু উভয়ের বিরোধিতার জন্ম দেয়। মহারাষ্ট্রে মারাঠি সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে উত্তর ভারতীয় হিন্দিভাষীদের নিয়ে দ্ব›দ্ব হয়েছে। এটি আঞ্চলিকতাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদে সহায়তা করে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলো শক্তিশালী করে তোলে। নীতিনির্ধারণে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সশস্ত্র গোষ্ঠী : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে কাশ্মির, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, আসাম এবং অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। এই গোষ্ঠীগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি ও দমনমূলক পদক্ষেপের বিরোধিতা করে। নিজস্ব সাংস্কৃতিক, জাতিগত বা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতার দাবি তোলে। রাজনৈতিক অবিচার, নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেখানে উগ্র জাতীয়তার জন্ম নেয়।
বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ও গোষ্ঠী
জম্মু ও কাশ্মিরে স্বাধীনতা স্বায়ত্তশাসন বা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার দাবি উঠে। এ জন্য হিজবুল মুজাহিদীন, লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদসহ বহু গোষ্ঠী বা দল গড়ে ওঠে। ১৯৪৭ সাল থেকে চলমান ভূরাজনৈতিক বিতর্ক, সেনা নিপীড়ন, ৩৭০ ধারা বাতিল তাদের কঠিন আঘাত দিয়েছে।
নাগাল্যান্ডে নাগা আন্দোলন চলছে। স্বাধীন ‘নাগালিম’ রাষ্ট্র তারা চায়। তাদের লক্ষ্য জাতিগত স্বাতন্ত্র্য, ধর্মীয় পার্থক্য, ঐতিহাসিক স্বাধীনতা অর্জন। মনিপুরে স্বাধীনতা বা বৃহত্তর কুকি বা মৈতৈ রাজ্য প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন চলছে। এ জন্য উলফাসহ অনেক সংগঠন কাজ করছে। জাতিগত দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সাংবিধানিক স্বীকৃতির অভাব রয়েছ। আসামে চলছে বাঙালি বিরোধিতা। বাঙালি অভিবাসী ইস্যু, জাতিগত ভয় ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণবাদ তাদের বিচলিত করছে।
ছত্তিসগড়-ঝাড়খণ্ড-বিহার চলছে মাওবাদী আন্দোলন। তাদের দাবি কৃষক-আদিবাসীদের জন্য ভূমির অধিকার ও কেন্দ্রীয় শোষণের অবসান। তারা মনে করে, কেন্দ্রীয় সরকার সম্পদ লুট, প্রশাসনিক অবহেলা, আদিবাসীদের প্রতি বঞ্চনা করছে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা ও নিরাপত্তা হুমকি সাধারণ জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বিকাশ ও শিক্ষার পথে বাধা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে টানাপড়েন চলছে।
অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক অবিচারের প্রভাব
প্রায়ই বিভিন্ন রাজ্য ও প্রদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন, নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করে ভারত। এ ধরনের পদক্ষেপ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে আরো তীব্র করেছে। স্থানীয় জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দাবির অবহেলা কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিতে অনেক সময় স্থানীয় স্বার্থ ও সংস্কৃতিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয় না, যা অসন্তোষ জন্ম দেয়। কখনো কখনো নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু কঠোর পদক্ষেপ স্থানীয় জনজীবনে অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়, যা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন আরো বাড়ায়।
অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে আধিপত্যের ঝুঁকি
ভারত যদি প্রতিবেশীদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের মতো কড়া ও নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি অব্যাহত রাখে, তবে এর প্রভাব দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপরও পড়তে পারে। ভারতের বিশাল সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ভাষাগত ভিন্নতার মধ্যে সমতা ও গ্রহণযোগ্যতা রক্ষার জন্য নরমাল ও সহানুভূতিশীল শাসন প্রয়োজন। কঠোর আধিপত্যমূলক মনোভাব ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাকে উসকে দিতে পারে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে। যখন কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, তখন দেশের অভ্যন্তরীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যেও কেন্দ্রের ওপর আস্থা কমে যেতে থাকে। এটি রাজনৈতিক অবিচার ও দুর্নীতির অভিযোগের জন্ম দেয়, যা একতাকে দুর্বল করেছে।
দেশের ঐক্য ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি
ভারত যদি অধিকতর আধিপত্যবাদী নীতি অবলম্বন করে, বিশেষ করে তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি কঠোর ও নিয়ন্ত্রণমূলক মনোভাব অব্যাহত রাখে, তাহলে এর প্রভাব দেশটির অভ্যন্তরেও গভীর হতে পারে। এর ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাবে। সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও ধর্মীয় ভিন্নতা থাকার কারণে ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন অংশে কেন্দ্রীয় সরকারের শক্ত নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক অবিচার সহজেই বিদ্রোহী মনোভাব ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর উত্থান ঘটাতে পারে।
অধিক আধিপত্যবাদী নীতি নানা গোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা ও সহাবস্থানের সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে পারস্পরিক অবিশ্বাস, হিংসা এবং সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ে। একাত্মতা ও সমানাধিকারের পরিবর্তে অন্যায় ও কর্তৃত্বমূলক আচরণ দেশের একক প্রতিষ্ঠিত কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে, যা রাষ্ট্রীয় সংহতি ক্ষুণ্ণ করেছে, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি দুর্বল করছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। ভারতীয় জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতার জন্য দরকার সহনশীলতা, সমান মর্যাদা ও রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির নীতি, যা বিভিন্ন গোষ্ঠী ও অঞ্চলের মধ্যে বিশ্বাস ও সংহতি বজায় রাখে। আধিপত্যবাদী মনোভাব এ ক্ষেত্রে বিপরীত প্রভাব ফেলে, ফলে দেশের একতা ও উন্নয়ন ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে।
লেখক : সিনিয়র ফেলো, এসআইপিজি, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি
আপনার মতামত লিখুন :