আনন্দের ঈদযাত্রার ৯ দিনের ছুটি শেষ আজ সরকারি অফিস আদালত খুলছে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৬, ২০২৫, ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ /
আনন্দের ঈদযাত্রার ৯ দিনের ছুটি শেষ আজ সরকারি অফিস আদালত খুলছে

আনন্দের ঈদযাত্রা শেষ। কর্মস্থলে ফিরছেন মানুষ। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে খুলবে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস। পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ।

সরকারি-বেসরকারি সব অফিসের ছুটি শেষ। গত ২৮ মার্চ থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত টানা ছুটি কাটাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ঈদের আগে গত ২৭ মার্চ বৃহস্পতিবার ছিল এসব অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয় টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি। এর আগে গত ২০ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গত ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন। এজন্য টানা ৯ দিনের ছুটি ছিলো। গ্রামের বাড়িতে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রেল, সড়ক ও নৌপথে রাজধানী ছেড়েছেন অসংখ্য মানুষ।

কর্মজীবী মানুষ ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছেন। ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই শনিবারের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে গত ৩১ মার্চ সোমবার দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। গত ৫ এপ্রিল টানা ৯ দিন ঈদের ছুটি পেয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা থেকে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলো মানুষ। প্রতি বছর ঈদযাত্রা ভোগান্তি আর যানজট থাকলেও এবার নির্বিঘ্নে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছেন মানুষ।

রোজা ও ঈদের ছুটি শেষে আগের নিয়মে ফিরবে সরকারি অফিস, আদালত ও ব্যাংক। রমজান মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিসের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। রোববার থেকে আগের মতোই অফিস চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। উচ্চ আদালত ও নি¤œ আদালত এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও রোববার থেকে রোজার আগের সময় ধরে চলবে।

উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ঈদুল ফিতরে পাঁচ দিনের ছুটির অনুমোদন দেয়। আগে এ ছুটি ছিল ৩ দিন। ২১ অক্টোবর ছুটির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৩১ মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ ছুটি। ঈদের আগের দুই দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ শনিবার ও রোববার এবং ঈদের পরের দুই দিন ১ ও ২ এপ্রিল মঙ্গলবার ও বুধবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ছিল। ২৮ মার্চ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করায় সরকারি চাকরিজীবীরা এবার টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করছেন।

কারণ ৩ এপ্রিলের পরের দুই দিন ৪ ও ৫ এপ্রিল শুক্রবার ও গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। সেক্ষেত্রে সবমিলিয়ে টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। সরকারি-বেসরকারি সব অফিসের ছুটি শেষ। আজ রোববার থেকে খুলতে শুরু করবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত নগরীতে ফিরছে নরগবাসী। তবে বিগত বছরগুলোর মতো নেই তীব্র ভিড় আর যানবাহনের চাপ। ছুটি বেশি হওয়ায় মানুষ যেমন ধীরে ধীরে ঢাকা ছেড়েছে তেমনি ধীরে ধীরে ঢাকা ফিরছে। আবার অনেকে নানা গন্তব্যে ঢাকা ছাড়ছেন। দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তবে সার্ভার জটিলতায় সকালে ঢাকার বাইরে যাওয়া কয়েকটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।

গতকাল শনিবার সকাল গড়াতেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে শহরমুখো মানুষের ঢল নামে রেলস্টেশনে। সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে একের পর এক ট্রেন ভিড়ছে যাত্রী নিয়ে। এ সময় কয়েকটি ট্রেন ঢাকাও ছাড়ে। প্রায় সব ট্রেনেই ছিল যাত্রীর ভিড়। যাত্রী নামছে ক্লান্ত চোখে, ব্যস্ত পায়ে। সময় যত গড়াচ্ছে, বাড়ছে জনস্রোত। তবে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ফিরতে পারছেন যাত্রীরা। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা যাত্রীর সংখ্যা বেশি। তবে ঈদ হিসেবে স্বাভাবিক। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে আসা ট্রেনগুলোতে ছিল বেশি ভিড়। তবে এবারের ঈদযাত্রা তুলনামূলক ছিল মসৃণ। দীর্ঘদিন পর মানুষ স্বস্তিতে ফিরেছে কর্মস্থলে, ভোগান্তির ছায়া ছুঁতে পারেনি অনেককেই। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় মানুষের ফিরে আসার চাপ বোঝা গেছে কম। রেলপথে এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটি বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এমনকি এবারের ঈদের যাত্রা তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হওয়ায় ভোগান্তি ছাড়াই যাতায়াত করতে পেরেছেন ঘরমুখো মানুষ। তাছাড়া, ঈদের আমেজ এখনো পুরোপুরি না কাটায় ঢাকার বাইরেও ঘুরতে যাচ্ছেন অনেকে। যে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে আরো কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। জামালপুর এক্সপ্রেসে ঢাকায় আসা আখলিমা বেগম বলেন, রোববার থেকে আমাদের অফিস। তাই মন চাইলেও থাকা যাবে না। বাবা-মার কাছে গেলে কি আর আসতে মন চায়। কি করবো তারপরও যাই আবার তাদের রেখে চলে আসি। যে কয়দিন তাদের সাথে থাকি সে কয়দিনই মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ আমি।

এবারের ঈদযাত্রার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, এবারের মতো স্বস্তির ঈদযাত্রার অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। আমি চাই প্রতিবার ঈদ যাতায়াত যেন এ রকম হয়। বাড়তি ভাড়াও গুনতে হয়নি এবার। তিস্তা এক্সপ্রেসের যাত্রী জাগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রহিম শেখ বলেন, সোমবার থেকে আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। ইচ্ছা না থাকলেও আসতেই হবে। এবার কোনো রকমের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই নেত্রকোনা থেকে ঢাকা যাওয়া-আসা করতে পেরেছি।

জানা গেছে, সাধারণত ঈদে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি ঘরমুখো মানুষ ট্রেনে ঈদযাত্রা করেন। এ কারণেই বাড়তি নজর রয়েছে কমলাপুরে। ঈদযাত্রায় আন্তনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদযাত্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ঈদ যাত্রায় প্রতিদিন ৭১টি ট্রেন চলাচল করছে। এ কয়েকদিন কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন বলেন, কমলাপুর স্টেশনে যত ট্রেন এসেছে, সবগুলোতেই বিপুলসংখ্যক যাত্রী ছিল। তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই ভ্রমণ করেছেন। আসার পথে কোনো সমস্যা হয়নি। এবারের মতো স্বস্তির ঈদ যাত্রা ও ফেরা এরআগে কখনো হয়নি। বেশির মানুষ তার কর্মস্থলে ফিরছেন।

এছাড়া ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রাজশাহীগামী ধুমকেতূ এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধুর প্রভাতী, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, অগ্নিবীণাসহ বেশ কয়েকটি ট্রেন কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে। বুড়িমারী এক্সপ্রেস, নীলসাগর ও রংপুর এক্সপ্রেস এই তিনটি ট্রেন শুধু লেট করেছে।এছাড়া বাকি সবগুলো ট্রেন নির্ধারিত হয়ে ছেড়েছে। সব ট্রেনেই মোটামুটি যাত্রী ছিল।