বিনা পারিশ্রমিকে ১৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন যশোরের চৌগাছার এসএম হাবিব পৌর কলেজের বাংলার শিক্ষক আনন্দ মন্ডল। পরিশ্রম বেশি হলেও এই পেশা নিয়ে খুশি ছিলেন তিনি। ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের মৃত দেবেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ছেলে আনন্দ মন্ডল ২০০৫ সালে স্নাতক শেষ করেই কলেজটিতে শিক্ষকতায় যোগ দেন। তখনো কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি।
দীর্ঘ দিন বিনা বেতনে শিক্ষকতা শেষে ২০১৯ সালে ৭ জুলাই কলেজটি এমপিওভুক্তির পরে নিয়োগ বোর্ডের প্রহসনে বাদ পড়েন আনন্দ মন্ডল। সেই থেকে অদ্যাবধি মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
এ বিষয়ে আনন্দ মন্ডল ভোরের কাগজকে বলেন, ২০০৫ থেকে ২০১৯ সালের ৯ সাল পর্যন্ত কলেজটিতে ১৪ বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেছি। চাকরি পেতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী ৬লাখ টাকা দিয়েছি। তার মধ্যে কলেজ কমিটির (২০০৯ সাল থেকে কলেজ কমিটির সভাপতি) প্রতিষ্ঠাতা এসএম হাবিবুর রহমানের হাতে তিন লাখ, কলেজটির অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের কাছে আড়াই লাখ এবং সভাপতির ভাইপো ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এসএম সাইফুর রহমান বাবুলের কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি শুনেছি আমাকে বাদ দিয়েছে। অনেক টাকার বিনিময়ে চৌগাছা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী মাহবুবা রহমান তুলিকে নিয়োগ দেয়া হয়। তারপরেও কলেজ কমিটির সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান আমাকে কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা পড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। তখন কাউন্সিলর সিদ্দিক আমাকে কলেজে আসলে হাত পা ভেঙ্গে ফেলবেন বলে হুমকি দেন। তখন কলেজে আসা বন্ধ করে দেই।
আনন্দ মণ্ডলের বিষয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ মোজ্জামেল হক বলেন, নিয়োগ নিয়ে সভাপতির সাথে টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে কিনা জানি না। তবে এসএম বাবুলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিল বলে শুনেছি। আর আমাকে কলেজের কাজে সাহায্য করার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা আমি পরিশোধ করে দিয়েছি।
এদিকে টাকা দিয়েও চাকরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আনন্দ মন্ডল। বর্তমানে তিনি পাশাপোল আমজাম তলা কলেজে পার্টটাইম শিক্ষকতা করছেন। আনন্দ মণ্ডলের বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা এসএম হাবিবুর রহমানকে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজটির বর্তমান সভাপতি এসএম সাইফুর রহমান বাবুল বলেন, আনন্দ মন্ডল পড়ালেখায় ভাল হলেও সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিনের অনুরোধে আনন্দকে বাদ দিয়ে কাউন্সিলর পত্মী মাহবুবা রহমান তুলিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বলেই জানি।
আপনার মতামত লিখুন :