সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং র‌্যাবের তৎকালীন কোম্পানি কমান্ডার আলেপ উদ্দিন অসংখ্য মানুষকে গুম করেন। গুমের শিকার ব্যক্তির স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন। তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

এ তথ্য জানিয়েছেন টাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি মারাত্মক। তিনি অসংখ্য মানুষকে গুম ও নির্যাতন করার সঙ্গে জড়িত। অনেককে গুম করে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিল। তাদের নিষ্ঠুরতম পন্থায় নির্যাতন করেছিল। গুমের শিকার ব্যক্তিকে ধর্ষণও করেছেন। গতকাল ট্রাইব্যুনালে তিনটি পিটিশনের একটি ছিলো র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

চীফ প্রসিকিউটর বলেন, গুম করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তিনি শক দেয়া, চোখ বেঁধে রাখা, উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানোর অভিযোগ এই আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে মারাত্মক কাজটি করেছেন এই আলেপ উদ্দিন। তিনি একজন আসামিকে গুম করে রাখার সময়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে (স্বামীকে হত্যার) রমজান মাসে রোজা ভাঙিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এমন তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। আমরা বিষয়গুলো ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছি। এমন নিষ্ঠুরতম অপরাধীর অপরাধের তদন্ত করতে সময় লাগবে, কারণ প্রতিদিনই ভিকটিমরা আমাদের কাছে নতুন নতুন অনেক অভিযোগ নিয়ে আসছেন। এসব তদন্ত শেষ হলে তাদের ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া যেন শুরু করা যায় সে জন্য আমাদের তদন্ত সংস্থা দিন-রাত কাজ করছে।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক পুলিশ প্রধান এবং এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ ১০ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গতকাল তাদের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ও কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসা ২টি পৃথক প্রিজন ভ্যানে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

হাজিরকৃত এসব সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো: আব্দুল্লাহ আল কাফি, যাত্রাবাড়ি থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, ডিএমপি মিরপুরের সাবেক ডিসি মো: জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো: শাহিদুর ইসলাম, ডিবি ঢাকা উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো: আরাফাত হোসেন এবং ডিএমপি গুলশান থানার সাবেক ওসি মো: মাজহারুল হক। এছাড়া র‌্যাবের দুই সাবেক কর্মকর্তাকেও হাজির করা হয়। তারা হলেন, সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী ও বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন।

এর আগে গত ২৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করে তাদের হাজির করতে আদেশ দিয়েছিলেন।