এম এস সেকিল চৌধুরী
ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালীন সময়ে আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ মৃত্যু বরণ করলেন আব্দুল্লাহ । আবু সাঈদ নিজের জীবন সঁপে দিয়ে আমাদেরকে নাড়া দিয়েছিলেন, আবেগকে জাগিয়ে তুলেছিলেন । আব্দুল্লাহর মৃত্যু আবার আমাদের মনে করিয়ে দিলো সব মৃত্যুই অসামান্য। এক একটি মৃত্যু এক একটি স্বপ্নের সমাপ্তি। কিন্তু এসব আমরা চাই না ।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী এখনো অনেকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে, পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি অনেকের। সর্ব্বোচ চিকিৎসা সেবা দিয়ে এই মানুষগুলোকে সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা নিন। আর যেন কোনো আব্দুল্লাহকে আমাদের হারাতে না হয়।
দেশে—বিদেশে মানুষের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ও পলাতক জীবনের তালিকা দীর্ঘ । আমরা দেখতে চাই প্রতিটি মানুষ তার অধিকার নিয়ে স্বমহিমায় বেঁচে আছেন।
রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনায় ছিলেন, ভবিষ্যতেও তারাই দেশ চালাবেন, কিন্তু তাদের জবাবদিহিতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা সুদৃঢ় হতে হবে। প্রতিটি মানুষের জীবন ও জীবন-যাপনের অবারিত অধিকার নিশ্চিত থাকতে হবে । এ অধিকার কেড়ে নেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয় । দল, দলের নেতা ও রাজনৈতিক দর্শন থেকেও বড় বিষয় এক একটি মানুষের জীবন। কোনো অজুহাতে এটিকে খাটো করে দেখা যাবে না ।
আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও জনতার জীবনের সুরক্ষা প্রদানকারী রাজনীতি চাই। আমরা দায়বদ্ধ রাজনীতি চাই এবং এমন রাজনৈতিক নেতা চাই যারা মেধাবী, সৎ ও দেশপ্রেমিক।
প্রায় ১৮ কোটি মানুষের নেতৃত্বদানের প্রধান যোগ্যতা হতে হবে প্রত্যেকের জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান। রাষ্ট্র নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় নেতৃত্বের বিপথগামীতা ও ক্ষমতা লিপ্সার কারণে। আমরা এর নির্মূল চাই। মানুষের জন্য রাজনীতি চাই, দেশপ্রেমিক নিরহংকারী নেতৃত্ব চাই, যারা সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় বলিয়ান হবে।
এই দেশের সহযোগিতা, সেই দেশের দয়া কামনাকারী দুর্বল মেধাহীন নেতৃত্ব দেশ ও দেশের জনগণকে কিছু দিতে পারে না বরং ক্ষমতার লোভে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। এরা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশিদের কাছে বাধ্য হয়ে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেয়, অর্থনৈতিক লুটপাটের সুযোগ করে দেয়।
সকল অপমৃত্যু ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার জন্য ছাত্র-জনতার অকাতরে জীবনদান আমাদের পাথেয় হোক । আমরা কোনো মৃত্যু ভুলে যেতে চাই না । কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল ও কালের সাফাই নয় বরং সকল কালে, বল প্রয়োগ, দমন-পীড়ন ও আবু সাঈদ-আবদুল্লাহর মতো জীবনহানি থেকে মুক্ত রাজনীতি চাই।
কালে কালে যারাই জীবন দিয়েছেন তাদের সকলের জীবনই মূল্যবান এবং এক একটি স্বপ্নের বটবৃক্ষ। এই স্বপ্নগুলোর অপমৃত্যু আমরা আর চাই না।