বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা অনেক শাসন দেখেছি। সেগুলো শাসনের নামে ছিল শোষণ। আমরা এখন সৎ শাসক এবং কুরআনের শাসন চাই। তিনি বলেন, দ্বীনের পথে লড়তে চাই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। বিদায় নিতে চাই শহীদ হয়ে। গতকাল মঙ্গলবার (২২ জুলাই) খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে চালনা বিল্লালিয়া আলিম মাদরাসা ময়দানের পথসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
দাকোপ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা জি এম আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা মো: অহিদুজ্জামানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম, সাতক্ষীরা জেলা আমির অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, নড়াইল জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন।
জামায়াতের আমির শনিবারের অসুস্থতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সেদিনই তো আমি চলেই গিয়েছিলাম। মাওলানা আবু সাঈদ ইসলামী আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন। চব্বিশের আন্দোলনে আমাদের সন্তান আরেক আবু সাঈদ শহীদ হয়েছেন। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেন, জালিম শাসকের আমলে আমাদের দুই দুইজন আমিরসহ সারা দেশে যারা শহীদ হয়েছেন সবাইকে তুমি কবুল করো।
তিনি বলেন, গতকাল সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ইন্তেকাল করেছেন। ডাক্তাররা বলছেন আরো ৩০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যারা হাসপাতালে আছেন আল্লাহ তাদেরকে সুস্থ করে তুলুন। তাদেরকে আপনজনের বুকে ফিরিয়ে দিন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমিরে জামায়াত জাতীয় সমাবেশ মঞ্চে দুই বার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তারা তাকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবুও তিনি এই জনপদে ছুটে এসেছেন। আল্লাহ তাকে কবুল করে নিন। ইসলামের পথে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সবাইকে কবুল করে নিন। তিনি অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি সফল করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ডা: শফিকুর রহমান গতকাল সকাল ১০টার দিকে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার চালনার বি এম গ্যাস কোম্পানির হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। সেখান থেকে দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির শহীদ মাওলানা আবু সাঈদের বাড়িতে পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি চালনা সরকারি পৌর কবরস্থানে তার কবর জিয়ারত করেন এবং দুর্ঘটনায় আহত মাওলানা আনিসুর রহমান ও মো: কামাল হোসেনকে দেখতে যান। তিনি তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং সুস্থতার জন্য দোয়া মুনাজাত করেন। দুপুরে বি এম গ্যাস কোম্পানির হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারযোগে তিনি পাবনার ঈশ্বরদীর উদ্দেশে দাকোপ ত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গার চৌরাস্তা মোড়ে শনিবার (১৯ জুলাই) রাত পৌনে ৩টার দিকে রয়্যাল পরিবহনের একটি দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় দাকোপ উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদ (৫২) শাহাদতবরণ করেন। গুরুতর আহত হন জামায়াত কর্মী মো: আনিসুর রহমান ও মো: কামাল হোসেন। আহতদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে চালনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা এখন আশঙ্কামুক্ত।
দুর্নীতিবাজের অস্তিত্বও দেশে থাকতে দেবো না
পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, যেখানে দুর্নীতি সেখানেই প্রতিবাদ করা হবে। যত দিন দেশের মানুষের মুক্তি না মিলবে তত দিন লড়াই চলবে। পিছনের জালিম ও সামনের জালিম যতই শক্তিশালী হোক জামায়াত তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হবে। এই সংগঠন কোনো জালিমের ভয় করে না।
গতকাল বেলা ৩টার দিকে ঈশ্বরদীর টেক্সটাইল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশে ঢাকায় যাওয়ার পথে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণকারী জামায়াত কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান কলমের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আল কুরআন মানবজাতির শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। কুরআনের দেখানো পথ ধরেই বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম হবে। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করা হবে। দুর্নীতির জাল ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দেয়া হবে। দুর্নীতিবাজের অস্তিত্বও দেশে থাকতে দেবো না।
ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা দোয়া করি তারা যেন জান্নাতবাসী হোন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থ হয়। নিহতদের পরিবার ও আহতদের জন্য আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অর্থ রক্ত যা যা লাগবে আমাদের সহকর্মীরা দিবে।
ঢাকায় যাওয়ার পথে আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান কলম আমাদের হাতে দিয়ে গেছেন তার পরিবারের দায়িত্ব। তার সন্তানরা যেন আগের চেয়ে ভালো থাকে। জামায়াত তার পরিবারের সব দায়িত্ব নিয়েছে। আর আগামী নির্বাচনে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আবু তালেব মণ্ডলকে সব দিক দিয়েই আপনারা সহযোগিতা করবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, সাবেক আমির মাওলানা আব্দুর রহিম, নায়েবে আমির মাওলানা জহুরুল ইসলাম খান, সেক্রেটারি আব্দুল গাফ্ফার খানসহ নেতাকর্মীরা।
শ্রমিকের ঘাম আমার কাছে সুগন্ধি, তাদের জন্যই আমাদের রাজনীতি
রংপুর ব্যুরো জানায়, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ শ্রমিকের গায়ের ঘাম আমার কাছে আতরের মতো সুগন্ধি লাগে। আমাদের লড়াই অভিজাত শ্রেণীর মানুষের জন্য নয়, আমাদের লড়াই শ্রমিকের জন্য, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ এবং ইজ্জত পাহারা দেয়ার জন্য ।’
গতকাল বিকেলে রংপুরের মমিনপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এই মন্তব্য করেন তিনি। জেলা জামায়াত আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হকের সঞ্চালনায় এসময় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, মহানগর আমির উপাধ্যক্ষ এ টি এম আযম খান, সাবেক মহানগর নায়েবে আমির আনোয়ারুল ইসলাম, সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক কাজলসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে হেলিকপ্টারযোগে ওই মাঠে নামেন জামায়াত আমির। তাকে অভিনন্দন জানান হাজার হাজার জামায়াত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
সমাবেশে জামায়াত আমির বলেন, ‘দেশে আমরা চাঁদাবাজি করব না, কাউকে করতেও দিবো না, আমরা ঘুষ খাবো না, কাউকে ঘুষ খেতে দিবো না। দেশ যেভাবে চলছে তাতে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ ক্ষুব্ধ, এভাবে দেশ চলতে পারে না।’
সমাবেশ শেষে তিনি ঢাকায় জাতীয় সমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী সাবেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলমের কবর জিয়ারত করেন। পরে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে একান্তে কথা বলেন। মরহুম শাহ আলম জামায়াতের রুকন এবং রংপুর মহানগর পেশাজীবী শাখা-২ এর কৃষিবিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :