আমরা জাতীয় ঐক‍্যের ভিত্তি তৈরি করব’ জাতীয় মহাসমাবেশে জামায়া্তে আমির


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২০, ২০২৫, ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ /
আমরা জাতীয় ঐক‍্যের ভিত্তি তৈরি করব’ জাতীয় মহাসমাবেশে জামায়া্তে আমির

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে- ডা: শফিকুর রহমান 

‘সারাদেশের গণহত্যা, ২৪-এর গণহত্যা, পিলখানার গণহত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার এই বাংলার মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে।’ জাতীয় ঐক‍্যের ভিত্তি তৈরির আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, যাদের ত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়ে ফ্যাসিবাদীদের পতন হয়েছে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা তাদের কথা চিরদিন স্মরণ করব। তাদের কল্যাণের জন্য যা করা দরকার তাই আমরা করব। আমরা তাদের যেন অবজ্ঞা না করি। অন্য দলকে যেন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করি। আমরা রাজনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করব। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করব।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আর একটি লড়াই করতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব ইনশাআল্লাহ। জামায়াতের এমপিরা ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি নেবেন না, রাষ্ট্রীয় ফ্ল্যাট গ্রহণ করবেন না। সারাদেশের গণহত্যা, ২৪-এর গণহত্যা, পিলখানার গণহত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার এই বাংলার মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে।’

শনিবার (১৯ জুলাই) ঢাকা মহানগরীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সকল গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থাসহ সাত দফা দাবিতে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থসহ পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে এ সমাবেশটি শুরু হয়।

এ দিন জাতীয় সমাবেশে আসার সময় পথে খুলনার দাকোপ উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবু সাঈদ, পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান এবং রংপুরের শাহ আলম সমাবেশস্থলে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বক্তব্যকালে জামায়াত আমির তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন এবং তাদের শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

জামায়াত আমির নিন্মোক্ত বিষয়গুলোর ওপর মূল্যবান বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন। বক্তৃতাদানকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার পক্ষে বক্তব্য রাখা সম্ভব হয়নি।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র, প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই-বোনদের বিভিন্ন সমস্যা ও তা সমাধানকল্পে করণীয় সম্পর্কে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধনের গুরুত্ব সম্পর্কে, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের (প্রবাসী) অবদান তুলে ধরে তাদের ভোটাধিকার প্রাপ্তির বিষয়ে, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সমস্যা সমাধান ও তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে এবং দেশবাসী ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ ইউনুস আহমাদ, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের, খেলাফত আন্দোলনের আমির আবু জাফর কাসেমী, গণঅধিকার পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হক নূর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, নেজামে ইসলামের মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব ডা: গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. ফয়জুল হক, কয়েকটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা।

জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম, নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো: সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, অন্যতম জুলাই যোদ্ধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কাইয়ুম।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় জাতীয় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির, সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল ও মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, আবদুর রব, অধ্যক্ষ মো: শাহাবুদ্দিন, অধ্যক্ষ মো: ইজ্জত উল্লাহ ও মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাত দফা দেশের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা সাত দফা পূর্ণভাবে সমর্থন করছি। ইসলামী ঝাণ্ডা নিয়ে যুবকরা এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ধ্বংস, অভিসাপ, টাকা পাচার, জুলুম নির্যাতনের নাম। দেশকে জঙ্গলে পরিণত করেছে। ফ্যাসিবাদীরা আবার এলে কারো পিঠের চামড়া থাকবে না, সারা বিশ্বে ৯০টি দেশে পিআর পদ্ধতি চালু আছে। আমাদের একটি দল পিআর পদ্ধতি চায় না।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘শুধু নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র সুরক্ষা করা যাবে না। সুরক্ষা করতে হলে মৌলিক সংস্কার করতে হবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাই। পিআর যারা চায় না তারা জাতির সাথে প্রতারণা করে। মুসলমানদের ন্যূনতম অধিকার ফ্যাসিবাদীরা দেয়নি। এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে মুজিববাদের স্থান হবে না। খুনি হাসিনার বিচার হতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যবাদের স্থান হবে না। বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ হতে হবে। ৭২ সালের সংবিধান এক পাশে রাখতে হবে। নারী অধিকার ও সংখ্যালঘুদের অধিকার পূরণ করতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে হবে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১৪ বছর জালেম সরকারের কারাগারে বন্দী ছিলাম। আমাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। তাই আমি বলতে চাই যে, দেশ যেমন নতুনভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তেমনি আমি নতুনভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় আমি ফাঁসির মঞ্চ থেকে লাখো জনতার সামনে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাকে হত্যার আয়োজন করা হয়েছিল। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চাই। আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়ে ও জেলে আটক রেখে হত্যা করা হয়েছে। যারা তাদের হত্যা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং বিচার করতে হবে। তাদের কি অপরাধ ছিল? তাদের অপরাধ ছিল তারা এ দেশের জনগণের পক্ষে ও ইসলামের পক্ষে ছিল।’

‘আজ কারা পালিয়েছে? জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী পালায়নি। আমরা ৫৪ বছর বাংলাদেশ দেখলাম। কিন্তু ৫৪ বছরে বাংলাদেশের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে কোরআনের আইন দ্বারা দেশ পরিচালনা করতে হবে। আমরা আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন চাই।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইসলাম যেখানে থাকে সেখানে শান্তি থাকে। যেখানে ইসলামী নেই সেখানে শান্তি থাকতে পাবে না। সেখানে দুর্নীতি বাসা বাঁধে। আপনারা কি আর দুঃখ কষ্ট চলতে দিতে চান। না দিতে চাইলে সংসদে চলবে ইসলামী আইন। অন্য কোনো আইন সংসদে চলবে না। শক্তি দিয়ে অন্যায়কে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা অন্যায়কে প্রতিরোধ করতে চাই।’

বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী দেশবাসী সকলের প্রিয় দল। নারী-পুরুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের দল। জামায়াতে ইসলামী উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। দেশের জনগণের স্বার্থে জামায়াতের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। জামায়াতের বৃদ্ধ নেতাদের জেলে বন্দী করে রেখে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। জামায়াত আমিরের নির্দেশে জামায়াতে ইসলামী শহীদদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।’

ডিএমপি, ট্রাফিক বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিদ্যুৎ বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা-সহ সমাবেশ বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতাকারীদের প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করায় দেশবাসী ও ঢাকাবাসীর প্রতিও সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।