আমাদের নবীজী’র বর্ণন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ /
আমাদের নবীজী’র বর্ণন

নবীজী (সা.)-এর জীবনের দুইটি দিক। একটি হচ্ছে সুরত। আরেকটি হচ্ছে সীরাত। সীরাত অনুকরণীয়। আর সুরত প্রশংসনীয়। সুরত ধারণ করার ক্ষমতা কোনো মানুষের নেই। শামায়েলে তিরমিজির হাদিসগুলো যখন পড়তাম, হৃদয়ের আয়নায় একটি মূর্তি দাঁড় করিয়ে নিতাম। একটা অবয়ব দাঁড় করিয়ে নিতাম। একটা আকৃতি মনে মনে কল্পনায় ভাসিয়ে নিতাম। চাইতাম, আমিও যদি এমন হতে পারতাম। কিন্তু যা হবার নয়। তিনি ছিলেন মধ্যম আকৃতির, সুঠাম দেহের অধিকারী একটি মানুষ। তার চুলগুলো ছিল ঘাড় পর্যন্ত প্রলম্বিত হালকা হালকা কোঁকড়ানো। তিনি যখন চুলের ভেতরে তেল দিয়ে আঁচড়াতেন, মনে হতো মৃদুমন্দ ঢেউ দেখা যায়।

তার কপাল ছিল চওড়া। ভ্রুগুলো ছিল জোড়া ভ্রু, ধনুকের মতো বাঁকা। চোখের পাতাগুলো ছিল ফুটন্ত গোলাপের গোলাপী রঙ্গের একেকটি পাপড়ির মতো। তিনি যখন চোখের পলক ফেলতেন, মনে হতো শিশির ভেজা বাতাসে গোলাপ পাপড়িগুলো ঢেউ খাচ্ছে। তার চোখের সাদা অংশ ছিল রক্তিমাভ সাদা। কালো অংশ ছিল কৃষ্ণ কালো। তার নাকটা ছিল খাড়া। নাকের ছিদ্রগুলো ছোট ছোট। নাকের নিচে ছিল সরু চিকন গোফ। গোফের নিচেই সেই গোলাপী রঙ্গের ওষ্ঠ অধর। তার ঠোঁটগুলো যখন মুচকি হাসতো, গোটা পৃথিবীর মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখতো পুরো পৃথিবীতে যেন বিজলী চমকিয়েছে।

তিনি যদি কোনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতেন, একমাস পরেও যখন ওই রাস্তায় কোনো সাহাবারা যেতেন, সেই জায়গায় জান্নাতি গন্ধ পেতেন। তিনি কখনো যদি ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে ঘরে ঢুকতেন, তখন তার কপালে মুক্তোর দানার মতো যে ঘামগুলো জমে থাকতো, উম্মাহাতুল মু’মেনীন যারা তারা ছোট্ট শিশির মধ্যে সেই ঘামগুলো জমা রেখে দিতেন। যেন সেই পবিত্র ঘাম কোনো ঈদ বা অনুষ্ঠানে আতর হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

এই সুরত ধারণ করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কখনোই কোনো মানুষ চেষ্টা করলেও এই সুরত ধারণ করতে পারবে না। কিন্তু সীরাত, যা অনুকরণীয়, অনুসরণীয়, এক অনুপম আদর্শ। তিনি এসেছিলেন, গোটা পৃথিবীর জন্য রহমত হয়ে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন : আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)।

আরেক আয়াতে বলেন : অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আল ইমরান : ১৫৯)।

কেন তাকে পাঠানো হয়েছিল? আল্লাহ নিজেই বলেছেন : অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ ….। (সূরা আহযাব : ২১)। তিনি ছিলেন মডেল। তিনি ছিলেন আইডল। তিনি ছিলেন আইকন। তিনি গোটা মানবজাতির জন্য ছিলেন অনুপম আদর্শ। সকাল থেকে সন্ধ্যা। রান্না ঘর থেকে সংসদ ভবন। ব্যক্তি জীবন থেকে পারিবারিক জীবন। সমাজ জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন। অর্থনৈতিক জীবন থেকে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন, সকল ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন আদর্শ।

একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে দাঁড়িয়ে গোটা পৃথিবী যখন ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ, সমগ্র দুনিয়ার মানবতা যখন ভূলণ্ঠিত। শুধু মুসলমান নয়, মানুষ মাত্রই যখন শোষকের বুটের তলায় পিষ্ট, মানুষগুলোর দেহ যখন জালিমের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রক্তে রঞ্জিত, সেই ফিলিস্তিনের ধূ ধূ মরুভূমি যখন আমার কিশোর ভাইয়ের রক্তে ভেসে যাচ্ছে, সেই ঝিলাম নদীর পানি যখন কাশ্মীরের ভাই-বোনদের রক্তে লালবর্ণ ধারণ করেছে, পাশর্^বর্তী আরাকানের মুসলমানেরা আজ যখন উখিয়া টেকনাফে তাঁবুর নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে, আজকে বারবার মনে পড়ে সেই নবীজীর কথা।

তিনি যদি আজকে আসতেন কোনো একটা ভূখণ্ডে। আমরা যদি দৌড়ে দৌড়ে তার কাছে যেতে পারতাম। গোটা মানবতা যদি বলতো পারতো, মুক্তি চাই। স্বাধীনতা চাই। জালিমের হাত থেকে বাঁচতে চাই। তিনি হয়তো আঁকড়ে ধরে বলতেন, এখানেই শান্তি। চলে এসো, পরিপূর্ণভাবে ইসলামের ছায়াতলে। যেমনিভাবে আল্লাহ বলেছেন : হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা : ২০৮)। এখানেই রয়েছে তোমাদের জন্য প্রশান্তি। এখানেই পাবে তুমি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এই পাপের সমাজে তোমাকে কখনোই আর বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে হবে না।

সুতরাং দেড় হাজার বছর পরের আজকের এই দিনে এসে আমাদের বুঝতে হবে, নবীর আদর্শ ছাড়া আমাদের মুক্তির কোনো পথ নেই। আজ স্বীকৃতি দিতে হবে শান্তি শুধু ইসলামেই। মুক্তি শুধু মুহাম্মাদের (সা.) অনুসরণেই।