জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প – বিবিসি
আমেরিকার বি-টু বোমারু বিমান নিঃসন্দেহে যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিয়েছে। এটি আরো তীব্র হবে কিনা তা নির্ভর করবে ইরান এবং তার মিত্ররা কিভাবে জবাব দেয় তার উপর। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন সকালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী অফিসের ভাষণ মঞ্চে দাঁড়ান, তখন তিনি প্রথমে ইসরাইলের জনগণকে তার সবশেষ যুদ্ধের সর্বশেষ, নাটকীয় পরিবর্তনের খবর জানানোর জন্য হিব্রুতে ভাষণ দেননি। এর পরিবর্তে তিনি ইংরেজিতে কথা বলেছেন।
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন বোমা হামলার পর তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি প্রশংসা করে তাকে উদ্দেশ্য করেই কথা বলেছেন।
যদি নেতানিয়াহুর কথার সুরে বিজয় থাকে এবং তিনি হাসি চেপে না রাখেন, তাহলে সেটায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময় ক্রমাগত সেটাই বলে গেছেন যেটা তিনি বিশ্বাস করতেন- ইরান ইসরাইলের জন্য হুমকি।
নেতানিয়াহু গত ১৫ বছরের বেশিরভাগ সময় তার আমেরিকান মিত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে কেবল সামরিক পদক্ষেপ (এবং কেবল আমেরিকান যুদ্ধাস্ত্র) ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করতে পারে। এমন সিদ্ধান্তের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি নেতানিয়াহু নিজেকেও এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন পরিবর্তনের জন্য অভিনন্দন জানাতে পারেন, যিনি বিদেশে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং যার সমর্থকরা ইসরাইলের ইরান যুদ্ধে যোগদানের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
এটাও মনে রাখা উচিত যে ট্রাম্পের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো- ইরান কত দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করতে পারে, সে সম্পর্কে ইসরাইলের মূল্যায়ন প্রকাশ করেনি। এমনকি তারা তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা সেটাও জানায়নি।
এই সঙ্ঘাতের পুরো সময়জুড়ে, যেটা মাত্র ১০ দিন আগে শুরু হয়েছে, ইসরাইলের সরকার এবং সামরিক বাহিনী জোর দিয়ে বলেছে যে ইরানের হুমকি মোকাবেলা করার সক্ষমতা ইসরাইলের আছে। কিন্তু এটা কোনো গোপন বিষয় ছিল না যে শুধুমাত্র আমেরিকার কাছেই এমন ভারি অস্ত্র আছে যেটা ইরানের বিশেষত পাহাড়ের গভীরে নির্মিত ফারদোর মতো সবচেয়ে শক্তিশালী মাত্রায় সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষতি করতে সক্ষম।
যদি গত রাতে বোমা হামলার শিকার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো এখন সত্যিই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে, তাহলে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী তার যুদ্ধের মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে ঘোষণা করতে সক্ষম হবেন এবং সম্ভবত এই সঙ্ঘাতকেও একটা শেষের দিকে নিয়ে আসতে পারবেন।
অন্যদিকে, ইরান বলছে যে তারা ইতোমধ্যেই তার পারমাণবিক উপকরণ সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু গত রাতের বোমা হামলা না হলেও ইসরাইলের বিমান বাহিনী বছরের পর বছর ধরে যে লক্ষ্যবস্তুর তালিকা তৈরি করেছে, সেটা ধরে নিজের মতো করেই কাজ চালিয়ে যেতো।
ইরানের সামরিক বাহিনী, তার কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সরকারি অবকাঠামো এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর যেসব স্থানে ইসরাইলের বোমা পৌঁছাতে পারে, সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতি চলতে থাকতো। তবে নেতানিয়াহু হয়তো এমন কোনো পরিস্কার ধারণা নাও দিতে পারেন, যেখানে ইসরাইল বলতে পারে যে পারমাণবিক হুমকি নিশ্চিতভাবে নিরসন করা হয়েছে। সম্ভবত ইরানে কেবল শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনই সেই মুহূর্তটি এনে দিতে পারে।
আমেরিকার বি-টু বোমারু বিমান নিঃসন্দেহে যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিয়েছে। এটি আরো তীব্র হবে কিনা তা নির্ভর করবে ইরান এবং তার মিত্ররা কিভাবে জবাব দেয় তার উপর।
গত সপ্তাহে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে যুদ্ধে জড়ালে আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হানা হবে। খামেনি বলেছেন, আমেরিকানদের জানা উচিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে তার অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।
শনিবারই ইয়েমেনের হাউছি গোষ্ঠী -ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র- হুমকি দিয়েছিল যে আমেরিকা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে যাতায়াতকারী মার্কিন জাহাজগুলোতে আক্রমণ করা হবে। এই অঞ্চলে আমেরিকার সামরিক কর্মী, ব্যবসা এবং নাগরিকরা এখন সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু। ইরান যদি ইচ্ছা করে, তাহলে বিভিন্ন উপায়ে পাল্টা হামলা করতে পারে। যেমন উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ বা ঘাঁটিতে আক্রমণ করা এবং উপসাগর থেকে তেলের প্রবাহ ব্যাহত করা এবং পেট্রোলের দামকে উঠতে দেয়া।
আমেরিকা ইঙ্গিত দিয়েছে যে আপাতত তাদের সামরিক পদক্ষেপ শেষ এবং তেহরানের সরকার পতনে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
এটি ইরানকে তার প্রতিক্রিয়া সীমিত করতে উৎসাহিত করতে পারে, সম্ভবত মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে এমনভাবে আক্রমণ করতে পারে যাতে বেশি হতাহতের ঘটনা না ঘটে, অথবা একই কাজ করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগীদের ব্যবহার করতে পারে। ২০২০ সালে ট্রাম্প ইরানের বিপ্লবী গার্ড নেতা কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেয়ার পর ইরান এই পথ বেছে নিয়েছিল।
শনিবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের প্রতি যেকোনো পাল্টা হামলার মোকাবেলায় তীব্র শক্তি প্রয়োগে তার নিজের যে হুমকি সেটার পুনরাবৃত্তি করেন। আজ সকালে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করছে, এটি কি এই সঙ্ঘাতের সমাপ্তির সূচনা, নাকি যুদ্ধের আরো মারাত্মক প্রাণঘাতি পর্যায়ের শুরু?
সূত্র : বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :