ইতিহাসগড়া মেয়েদের সংবর্ধনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৩, ২০২৪, ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ /
ইতিহাসগড়া মেয়েদের সংবর্ধনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

দুই বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে সেরা দল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিায়নশিপের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছিল লাল-সবুজের মেয়েরা। নেপালের কাঠমান্ডুতে ওই আসরের ফাইনালে স্বাগতিক দলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথম শিরোপার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে সদ্য সামপ্ত নারী সাফের সপ্তম আসরের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল সেই নেপাল। যাদেরকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয় করে নতুন ইতিহাস গড়েন সাবিনা খাতুনরা। ইতিহাসগড়া সেই মেয়েদের সংবর্ধনা দিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে সাফজয়ী বাঘিনীরা পেলেন প্রধান উপদেষ্টার এই সংবর্ধনা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। কাল সকাল সাড়ে ১০টায় সাফজয়ী মেয়েদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এসে পৌঁছায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বাস। এসময় হুমড়ি খেয়ে পড়েন গণমাধ্যম কর্মীরা। কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাসটি সোজা প্রবেশ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে। তখন বাইরে অপেক্ষায় থাকেন প্রায় শতাধিক সাংবাদিক।

যমুনায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি সাফজয়ী দলের মিডিয়া ম্যানেজারসহ অন্যদের। কেবল ২৩ জন ফুটবলার এবং প্রধান কোচ পিটার জেমস বাটলার ও ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার অনন্যা ভেতরে প্রবেশ করেন। যমুনায় প্রবেশ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় কাটান সাবিনা-ঋতুপর্ণ-মনিকা চাকমারা। এসময় সদ্য সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেয়ার পাশাপাশি তাদের স্বপ্ন ও খেলোয়াড়ী জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রামের কথা শোনেন প্রধান উপদেষ্টা। শান্তিতে নোবেল জয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সাবিনা-কৃষ্ণা রানী সরকারদের বিভিন্ন দাবি ও কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

টানা দ্বিতীয়বার সাফের শিরোপা এনে দেওয়ায় উৎফুল্ল প্রধান উপদেষ্টা সাবিনাদের বলেন, ‘আমি পুরো জাতির পক্ষ থেকে তোমাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়, আর তোমরা সেই সাফল্য এনে দিয়েছো।’ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,‘আমরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। অনেক বাধা পেরিয়ে আমরা আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। শুধু এই ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীদের সামগ্রিকভাবে নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’ সাবিনা আরও বলেন, ‘আমাদের অনেকে সাধারণ পরিবার থেকে এসেছে এবং তাদের নিজেদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হয়। আমাদের বেতন খুব বেশি নয়। এই বেতন দিয়ে পরিবারকে তেমন কোনো সাহায্য করতে পারি না।’

এই তারকা স্ট্রাইকার তার কয়েকজন সহযোদ্ধার সংগ্রামের গল্প, যেমন মারিয়া মান্ডার কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুর গ্রামের মারিয়া, যেখান থেকে সাফজয়ী দলের ছয়জন খেলোয়াড় এসেছেন, ছোটবেলায় তার বাবাকে হারান এবং মা তাকে বড় করেন। এসময় উইঙ্গার কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় তাদের আবাসন সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। অন্যদিকে মিডফিল্ডার মানিকা চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ফুটবলার হিসেবে উঠে আসার সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।

মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী তার নিজ জেলা দিনাজপুরের রানীশংকৈল উপজেলায় তার গ্রামের দুর্বল অবকাঠামোর কথা বলেন। কৃষ্ণা রানী প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেন, যেন তাদের জন্য এশিয়ার বাইরে একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়, বিশেষ করে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার সঙ্গে। প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তাদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্খা ও তাদের বিভিন্ন দাবি আলাদাভাবে কাগজে লিখে তার কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য বলেন ড. ইউনুস, ‘তোমরা যা কিছু চাও তা লিখতে দ্বিধা করো না, আমরা তোমাদের দাবিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করব। যদি কিছু এখনই করা সম্ভব হয়, আমরা তা করব।’

সংবর্ধান অনুুষ্ঠানে সাবিনা নিজের সই করা একটি জার্সি ও ২৩ ফুটবলারের সই করা একটি বল প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসে সকালের নাস্তা করেন সবাই। সাফজয়ী মেয়েদের নিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় যমুনা থেকে ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে আসে বাফুফের বাসটি। জানালার পাশে বসা তহুরা খাতুন, মাতসুশিমা সুমাইয়াদের পেয়ে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। কি কথা হলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে? প্রশ্ন করতেই তহুরার উত্তর,‘আমরা নিজেদের মাথা গোজার ঠাঁই চেয়েছি প্রধান উপদেষ্টার কাছে।

তিনি আমাদের কথা শুনেছেন। দেখি কি করেন তিনি।’ এরপর বাসটি চলে যায় মতিঝিলের বাফুফে ভবনের উদ্দেশ্যে। পরে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যমুনার বাইরে দাঁড়িয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা স্যার নারী ফুটবলারদের যাবতীয় চাওয়া সম্পর্কে লিখিত জানাতে বলেছেন। তারপর তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’ সাবিনাদের দুই মাসের বকেয়া বেতন সম্পর্কে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আগের কমিটিতো এখন নেই। নতুন কমিটির কাছেই আমরা তাদের বেতন ক্লিয়ারের কথা বলব।’