ইরানের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। পারমাণবিক, সামরিক স্থাপনাসহ ১০০টির বেশি জায়গায় শুক্রবার ভোররাতে এ হামলা চালানো হয়। এই হামলায় ইরানের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্বনেতারা উত্তেজনা এড়াতে সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, ইরানে ইসরাইলের হামলা হওয়ার আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা ঘটতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের কাছে পারমাণবিক বোমা থাকতে পারবে না। আমরা চাই আবার আলোচনার টেবিলে ফিরে যেতে। দেখা যাক কী হয়।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ইরান যদি পাল্টা হামলা করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ও ইসরাইলকে রক্ষা করতে প্রস্তুত আছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘাত ঠেকাতে সব পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। গুতেরেসের উপমুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো ধরনের সামরিক উত্তেজনা বাড়াকে নিরুৎসাহিত করেন।’
ফারহান আরও বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ জানিয়েছেন। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যে এমন হামলা হলো।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ইসরাইলের এমন হামলার পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং নতুন করে উত্তেজনা এড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পারমাণবিক আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে ওমান। দেশটিও ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে ইসরাইলের বিপজ্জনক ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে বলেছে, এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন হয়েছে। এ ধরনের আগ্রাসী ও নির্বিচার আচরণ অগ্রহণযোগ্য। এতে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হবে।
ওমানের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরাইলকে সরাসরি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াইয়া বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের এই হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। এ ধরনের কাজ মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ তাকেশি সব পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানো এবং দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এক বিবৃতিতে সউদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরাইলি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। এতে বলা ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের চালানো এই প্রকাশ্য আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে সৌদি আরব। এটি ইরানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং এটি আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ইরানে ইসরাইলের হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া ও তুরস্কও। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে হঠাৎ করে যে ভয়াবহ উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে রাশিয়া উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছে।’
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরাইলকে ‘আগ্রাসন বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছে। ইসরাইলের চালানো হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে আঙ্কারা।
আপনার মতামত লিখুন :