ইসরাইলি জেনারেলের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি ‘গাজা ইসরাইলকে গিলে ফেলছে’


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৪, ২০২৫, ১১:২০ অপরাহ্ণ /
ইসরাইলি জেনারেলের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি ‘গাজা ইসরাইলকে গিলে ফেলছে’

বিধ্বস্ত ইসরাইল – সংগৃহীত

  • এই বক্তব্য শুধু একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলের ক্ষোভ নয়। বরং একটি ডুবন্ত সেনাবাহিনী ও দিশেহারা নেতৃত্বের অন্তর্দহন, যা আজ গাজার রক্তাক্ত চোরাবালির মধ্যে আটকে আছে, ইসরাইলের সামনে অপেক্ষা করছে আরো ভয়াবহ যুদ্ধ।

ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সির আন্তর্জাতিক বিভাগের তথ্য অনুসারে, ইসরাইলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা ইয়িৎসহাক বারাক সম্প্রতি এক বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও মন্ত্রিসভাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই সরকারের ভুল নীতির কারণে চলমান দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষয়ী ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের বিরুদ্ধে সমালোচনাকারী এই প্রভাবশালী জেনারেল এবার সরাসরি লিখেছেন, ‘ইসরাইলিরা এমন এক অস্থির অঞ্চলে বাস করছে, যেখানে পরিবর্তনগুলো দ্রুত এবং অনিশ্চিত। ইসরাইলি সেনাবাহিনী যদি এভাবে এগোতে থাকে, তাহলে তারা ভবিষ্যতের হুমকি কিংবা যুদ্ধের মোকাবিলা করতে পারবে না।’

এই নিবন্ধটি ইসরাইলি চ্যানেল ৭ টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বারাক স্বীকার করেন, ‘ইসরাইল এভাবে গাজা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল না। পরবর্তী যুদ্ধ তার চেয়ে দশ গুণ বেশি ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এটি আমার ব্যক্তিগত মত নয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ব্রিগেড, ব্যাটালিয়ন এবং কোম্পানি পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেই আমি এই মন্তব্য করছি। তারা মাঠপর্যায়ের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন আমার কাছে এবং অনুরোধ করেছেন যে এসব তথ্য যেন গোপন রাখা হয়। কিন্তু যে কেউ বুঝতে পারবেন, আমরা হামাসের সাথে যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছি।’

কোন কোন হুমকির মুখে রয়েছে ইসরাইল?

হিজবুল্লাহ :

বারাক বলেন, ‘হিজবুল্লাহকে ইসরাইল পুরোপুরি পরাস্ত করতে পারেনি। তাদের হাতে এখনো শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ ও বিপুল গোলাবারুদ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে তারা ইসরাইলের উত্তর সীমান্ত একেবারে অচল করে দিতে পারে। ঠিক যেমনটা তারা অতীতে করেছিল। ভুলে গেলে চলবে না, একসময় হিজবুল্লাহ টানা এক সপ্তাহের বেশি তেল আবিবকে লক্ষ্য করে প্রতিদিন শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে।’

এই হুমকির কারণে ইসরাইল হিজবুল্লাহকে কেন্দ্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন মোতায়েন করেছে উত্তর সীমান্তে, বিশেষ করে ইরান-ইসরাইল ১২ দিনের যুদ্ধে হিজবুল্লাহর অংশগ্রহণের আশঙ্কায় এমনটি করা হয়।

সিরিয়া

বারাক বলেন, ‘আমরা একসময় আশাবাদী ছিলাম যে বাশার আল-আসাদের সরকার পতন হবে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে এক ভয়ঙ্কর সরকার তৈরি হয়েছে। সেইসাথে তুরস্কও নতুন সিরীয় শাসকদের মাধ্যমে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে, যা ইসরাইলের জন্য আগের চেয়েও বড় হুমকি।’

জর্দান সীমান্ত

৩০০ কিলোমিটারজুড়ে জর্ডানের সাথে ইসরাইলের সীমান্ত। বারাকের দাবি, এই এলাকায় এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইসরাইল-বিরোধী গেরিলা দল। তারা যেকোনো সময় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

মিসর

বারাক আরো জানান, ‘মিসর এখন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের কাছে তাদের মোকাবিলার মতো পর্যাপ্ত বাহিনী নেই।’

পশ্চিম তীর

‘এই এলাকা এখন বারুদের স্তুপের মতো। এখানে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত গ্রাউন্ড ফোর্স নেই। পশ্চিমতীরের পুরো সীমান্তজুড়ে টহল দেয়ার মতো সক্ষমতাও ইসরাইলের নেই।’

বারাক বলেন, হামাসকেও হারাতে পারছে না ইসরাইলি বাহিনী। আমাদের স্থল বাহিনীর অবস্থা পূর্বের চেয়েও করুণ। এ বাহিনী এখন ছোট, ক্লান্ত, জীর্ণ এবং কার্যত ভেঙে পড়ছে। এমনকি তারা হামাসকেও পরাজিত করতে পারছে না।’

ইরানের অগ্রগতি

এটি ইসরাইলের উদ্বেগ কারণ হয়ে উঠেছে। জেনারেল বারাকের মতে, ‘ইরান এখনো অত্যাধুনিক নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে যাচ্ছে। অথচ এসব হুমকির বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনী কোনো প্রস্তুতি নেয়নি।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘১২ দিনের ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের পরও ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে। অথচ ইসরাইল এখনো গাজার চোরাবালিতে ডুবে আছে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয় যে যুদ্ধের হুমকি এখনকার চেয়ে বহু গুণ ভয়ঙ্কর হতে পারে।’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘ইসরাইল বর্তমান নিয়ে ব্যস্ত, ভবিষ্যতের কথা ভাবছে না। বর্তমান ইসরাইলি সেনা নেতৃত্ব শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবছে। ভবিষ্যতের জন্য তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।’

এই বক্তব্য শুধু একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলের ক্ষোভ নয়। বরং একটি ডুবন্ত সেনাবাহিনী ও দিশেহারা নেতৃত্বের অন্তর্দহন, যা আজ গাজার রক্তাক্ত চোরাবালির মধ্যে আটকে আছে, ইসরাইলের সামনে অপেক্ষা করছে আরো ভয়াবহ যুদ্ধ।