ইসরায়েলি হামলায় আর অনাহারে একদিনেই ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে গাজায়


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৭, ২০২৫, ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ /
ইসরায়েলি হামলায় আর অনাহারে একদিনেই ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে গাজায়

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বিমান ও ড্রোন হামলা, অন্যদিকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার পথ বন্ধ থাকায় বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ৭১ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে মারা গেছেন অপুষ্টিজনিত কারণে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বারবার উদ্বেগ ও আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল তাদের সামরিক আগ্রাসন কমাচ্ছে না, বরং খাদ্য সরবরাহের পথেও বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

শনিবার (২৬ জুলাই) গাজা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ইসরায়েলি হামলা ও ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় এই প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় চিকিৎসা সূত্র এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এদিন নিহতদের মধ্যে ৪২ জন ছিলেন ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার আশায় জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষ। অপুষ্টি ও অনাহারে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়, যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৭ জনে, যাদের মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।

এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক নিন্দা বাড়তে থাকলে শনিবার রাতে ইসরায়েল ঘোষণা দেয় যে তারা রোববার থেকে বেসামরিক অঞ্চল ও ত্রাণ সরবরাহ করিডোরে “সাময়িক হামলা বিরতি” দেবে। যদিও ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে বলেনি, এই বিরতি গাজার ঠিক কোন কোন এলাকায় কার্যকর হবে। এ অবস্থায় সংশয় থেকেই যাচ্ছে যে এটি বাস্তব কোনো পরিবর্তন আনবে কিনা।

ইসরায়েল বরাবরের মতো আবারও জাতিসংঘের ওপর ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে। তবে জাতিসংঘ, ইউএনআরডব্লিউএ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েল যথাযথ অনুমতি না দেওয়ায় ত্রাণকর্মীরা নিরাপদে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছাতে পারছে না। যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা আকাশপথে ত্রাণ ফেলেছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাদের সঙ্গে মিল রেখে গাজায় আকাশপথে ত্রাণ পাঠানোর কথা জানিয়েছে।

কিন্তু মানবিক সহায়তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ ঝুঁকিপূর্ণ এবং তা কখনোই কার্যকর বিকল্প নয়। শনিবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “আকাশপথে ত্রাণ ফেলা মূল সমস্যাটি আড়াল করে রাখার এক ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর উপায়। এটি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে পারবে না।” তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ইসরায়েলকে অবশ্যই অবরোধ তুলে নিতে হবে, রাস্তাগুলো খুলে দিতে হবে এবং গাজার মানুষের মর্যাদাপূর্ণ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

গাজা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ঘোষিত সহায়তার কার্যকারিতা এখনো অনিশ্চিত। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মাত্র সাতটি প্যালেটজাত ত্রাণ ফেলা হয়েছে, যা একটি ট্রাকেরও কম পরিমাণ। এগুলো ফেলা হয়েছে উত্তর গাজার এমন একটি সামরিক নিষিদ্ধ এলাকায়, যেখান থেকে রাতের আঁধারে তা সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। মাহমুদের মতে, এ ধরনের তথাকথিত “হিউম্যানিটারিয়ান পজ” বাস্তব সংকটের কোনো সমাধান দিতে পারছে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই পর্যায়ে এসে আমরা গণহারে ক্ষুধাজনিত মৃত্যু দেখতে যাচ্ছি, এবং এটি গাজার চিকিৎসা সূত্রগুলোও নিশ্চিত করেছে।”

এদিকে শনিবারও হামলা অব্যাহত ছিল। খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয়, এই এলাকা ইসরায়েলের ঘোষিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু সেই ঘোষণার বিপরীতে সেখানে প্রতিদিনই হচ্ছে বোমা বর্ষণ। গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা শিগগিরই আর কোনো জরুরি সেবা দিতে পারবে না, কারণ জ্বালানি ও যন্ত্রাংশ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, “জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করুন, যেন তারা জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ঢুকতে দেয়।”

তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা