ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বর্বর হামলায় প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে ঘরবাড়ি। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের আক্রমণে অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল লেবাননেও হামলা চালিয়েছে, যেখানে নিহত হয়েছেন আরও ৬ লেবানিজ নাগরিক।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ব্যস্ত বাজারে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সাতজন নিহত হন। এর ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ২০৮ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ জন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজারো মানুষ আটকা থাকায় প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করেছে যে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তীব্র খাদ্যসংকট ও অপুষ্টির শিকার হচ্ছেন। একইসঙ্গে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো ত্রাণ প্রবেশ করেনি। এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজাজুড়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় আওয়াদ পরিবারের বাড়িতে বিমান হামলায় তিনজন নিহত এবং বহু আহত হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফাহ ও খান ইউনিসের বিভিন্ন স্থানে ড্রোন হামলা ও গোলাবর্ষণের ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
লেবাননেও ইসরায়েলি আগ্রাসন থেমে নেই। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। ইয়োহমোর এলাকায় একটি গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় তিনজন এবং মারুব গ্রামে আরেকটি হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে, তবে বাস্তবে নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল লেবাননে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ২৭ নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
গাজা ও লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটময়। ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিনই নতুন নিহতের ঘটনা ঘটছে, আর মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হচ্ছে। এই সংঘাত বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ত্বরিত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষা করা যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ সুগম হয়। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
আপনার মতামত লিখুন :