ফিলিস্তিনের গাজায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামছে না। ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। গাজায় মোট প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার ৭০০ জন, আহত হয়েছেন লাখেরও বেশি মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ সংঘাত থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান সত্ত্বেও অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৬ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ৪৯২ জন। সোমবার সন্ধ্যায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। হামলা হয়েছে প্রধানত বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ এবং ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া সাধারণ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণের মাধ্যমে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, এই সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য হামাসকে সম্পূর্ণভাবে দুর্বল করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে আনা হয় ৮৬ জনের মরদেহ এবং ৪৯২ জন আহত ব্যক্তিকে। নিহতদের মধ্যে ৫৮ জন প্রাণ হারান ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে এবং ২৮ জন নিহত হন খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিতে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও জনবল না থাকায় উদ্ধার কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সোমবারের হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৭৪৪ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ জন ফিলিস্তিনি। গত ১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় গাজায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল ও হামাস। তবে ১৮ মার্চ সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল, এবং শুধু গত পাঁচ মাসেই গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১০ হাজার ৯০০ জন ও আহত হয়েছেন ৪৬ হাজার ২১৮ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরও তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসের শেষ দিক থেকে খাদ্য ও ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত এই ধরনের হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ১২৩ জন এবং আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬১৫ জনেরও বেশি মানুষ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়। ওই হামলায় নিহত হন প্রায় ১ হাজার ২০০ জন এবং জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। এই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযানে নামে ইসরায়েলি বাহিনী। দীর্ঘ ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘাতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল গত ১৯ জানুয়ারি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ২৫১ জনের মধ্যে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন এখনও জীবিত রয়েছেন। আইডিএফ জানিয়েছে, সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধারে কাজ চলবে।
গাজা সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এমনকি আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)-এ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তবুও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, হামাসকে দুর্বল না করা এবং জিম্মিদের নিরাপদ মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
আপনার মতামত লিখুন :