আল্লাহর মনোনীত পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। আকিদা, ইবাদত, সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও শিক্ষাসহ মানব জীবনের সবকিছু এই ধর্মের ব্যাপকতার আওতাভুক্ত। ইসলাম ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ নয়। কুরআন কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে (চিরকালের জন্য) পছন্দ করে নিলাম।’ (সূরা মায়িদা-৩)
সুতরাং কুরআন-সুন্নায় মানব জীবনের সব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং বিধিবিধান রয়েছে। ফেকাহ শাস্ত্রে খুঁটিনাটি সব কিছুর বিস্তারিত আলোচনা আছে। এর কিছু মান্য করা, কিছুকে অস্বীকার করা কুফরি। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘তবে তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখো এবং কিছু অংশ অস্বীকার করো? তাহলে বলো, যারা এরূপ করে তাদের শাস্তি এছাড়া আর কী হতে পারে যে, পার্থিব জীবনে তাদের জন্য থাকবে লাঞ্ছনা। আর কিয়ামতের দিন তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে কঠিনতর আজাবের দিকে? তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন।’ (সূরা বাকারা-৮৫)
ইসলাম-পূর্ব আসমানি ধর্মগুলো সারা পৃথিবীর জন্য এবং সব যুগের জন্য ছিল না। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেগুলোতে জীবনের সব বিষয়ের সমাধান নেই এবং সেগুলো পূর্ণাঙ্গ নয়। কিন্তু ইসলাম এর ব্যতিক্রম। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত সর্বশেষ দ্বীন। মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি একমাত্র এ ধর্মের মাঝে নিহিত। ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন কেবল ইসলাম।’ (সূরা আলে ইমরান-১৯) হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি মুসা (আ.) জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।’ (মুসনাদে আহমদ-১৪৭৩৬)
ইসলাম বিশ্বজনীন ধর্ম এবং সব মানুষের ধর্ম। আল্লাহপাক বলেন- ‘রমজান মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, বিশ্বমানবের জন্য যা আদ্যোপান্ত হেদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়।’ (সূরা বাকারা-১৮৫) আরো ইরশাদ হয়েছে- ‘(হে রাসূল! তাদেরকে) বলো, হে মানুষ! আমি তোমাদের সবার প্রতি সেই আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, যার আয়ত্তে আসমানসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্ব।’ (সূরা আরাফ-১৫৮)
ইসলাম মানবধর্ম। জাতি-ধর্ম বংশ-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা, সৌজন্যমূলক আচরণ, জীবের প্রতি দয়া এই ধর্মের অন্যতম শিক্ষা। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘হে মুসলিমগণ! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ তার হকদারকে আদায় করে দেবে এবং যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে, তখন ইনসাফের সাথে বিচার করবে। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ তোমাদেরকে যে বিষয়ে উপদেশ দেন তা অতি উৎকৃষ্ট হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন।’ (সূরা নিসা-৫৮)
আরো ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি সত্য সম্বলিত কিতাব নাজিল করেছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে যে উপলব্ধি দিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে মীমাংসা করতে পারো। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষ অবলম্বন করো না।’ (সূরা নিসা- ১০৫) হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যারা মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন না।’ (সহিহ মুসলিম-৬১৭২)
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র সত্য ধর্ম। এই ধর্ম সবাইকে দরদের সাথে সত্যের পথে আহ্বান করে। ইহকালীন ও পরকালীন নাজাতের পথে ডাকে। কিন্তু কাউকে বাধ্য করে না। সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকার করে। ইরশাদ হয়েছে- ‘দ্বীন গ্রহণের বিষয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। হেদায়েতের পথ গুমরাহি থেকে পৃথক রূপে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এর পর যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল সে এক মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরল, যা ভেঙে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও সবকিছু জানেন।’ (সূরা বাকারা-২৫৬)
ইসলাম গ্রহণে কাউকে বাধ্য করা যাবে না। তবে যিনি স্বেচ্ছায় সত্যধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তিনি আল্লাহ তাআলার হুকুম আহকাম পালনে বাধ্য থাকবেন। ক্ষমতানুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে বাধ্যও করবে। বনি ইসরাইল হজরত মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমান আনার পর যখন তাওরাতের হুকুম আহকাম পালনে বাহানা করে, তখন তাদের উপর পাহাড় তুলে ধরা হয়।
ইরশাদ হয়েছে- ‘এবং সেই সময়ের কথা স্মরণ করো, যখন আমি তোমাদের থেকে (তাওরাতের অনুসরণ সম্পর্কে) প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম এবং তুর পাহাড়কে তোমাদের উপর উত্তোলন করে ধরেছিলাম। (আরো বলেছিলাম যে) আমি তোমাদেরকে যা (যে কিতাব) দিয়েছি তা শক্ত করে ধরো এবং তাতে যা কিছু লেখা আছে তা স্মরণ রাখো, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাকারা-১৩)