মাসুম খলিলী
আগস্টের বিপ্লব-উত্তর সরকারের তিন মাস পূর্তি হতে চলেছে। এ সময় নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়েছে সরকার। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ব্যর্থ করার নানা অপচেষ্টা এখনো চলমান। প্রতিবিপ্লবের তৎপরতাও থেমে নেই। এসব তৎপরতার সাথে শুধু অভ্যন্তরীণ শক্তিরই নয়, বাইরের শক্তির সম্পৃক্ততাও লক্ষ করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশে দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনে সামরিক-বেসামরিক ও নিরাপত্তা প্রশাসন, এমনকি গোয়েন্দা নেটওয়ার্কেও দলানুগত একটি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে পরিচালিত হয় গত দেড় দশকে সেভাবে চালিত হয়নি। এ সময় ভোটের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের স্বাভাবিক রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। রাষ্ট্র্র ক্রমাগতভাবে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারাতে বসেছে। এমন এক সময়ের রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের পর সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলবে এমনটি আশা করা যায় না।
ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জঃ বর্তমান সময়ে ত্রিমুখী সমস্যার এক জটিল অবস্থা দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতার ভাবনাচিন্তা আন্তঃসম্পর্ক ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বিশেষভাবে একাধিক সংবেদনশীল ইস্যুতে বিএনপি ও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী শক্তির মধ্যে দাবির বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা যেখানে মিথ্যাচার ও সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের অপসারণ চাইছে, সেখানে প্রবলভাবে বিরোধিতা করছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দাবির প্রতি সমর্থন জানালেও রাজনৈতিক ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। সংস্কার ও নির্বাচনের সূচি নিয়েও বিপ্লবের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির ভাবনা-চিন্তার মধ্যে পার্থক্য লক্ষণীয়।
যতদূর জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলো তিন মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট প্রদানের পর সুপারিশ বাস্তবায়ন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সূচি ঘোষণা করা হবে। এ জন্য সম্ভাব্য সময় দেড় থেকে দুই বছর প্রয়োজন হতে পারে বলে আভাস রয়েছে। অন্য দিকে বিএনপি চাইছে, মোটা দাগে কিছু সংস্কার করে নির্বাচন করতে। সাত মাস থেকে এক বছর সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি।
বিএনপি বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দাবির পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে, যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, পরস্পরের অবস্থান একবারে বিপরীতমুখী। বিএনপি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ এ কারণে চাইছে না যে, তারা ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর ও বিতর্কিত এই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার বিষয়টিকে মনের গভীর থেকে সমর্থন করছে। বরং তারা মনে করছে, ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লব সংবিধান মেনে না হলেও রাষ্ট্রকে সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে রেখেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে তাকে বিদায় করা হলে সংবিধানের কাঠামো যতটা আছে তারও ব্যত্যয় ঘটতে পারে। এমনকি তাতে সংবিধানের বাইরে গিয়ে ফরমান জারি করে রাষ্ট্র চালানোর মতো পরিস্থিতিরও উদ্ভব ঘটতে পারে, যার অনিবার্য পরিণাম হতে পারে নির্বাচন অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়া, যা বিএনপি কোনোভাবেই কামনা করে না।
অন্য দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা রাষ্ট্রপতিকেন্দ্রিক ষড়যন্ত্র ও সেখান থেকে গভীর সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশে অবস্থানকারী পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তিনি পদত্যাগ করেননি। যে কোনো সময় তিনি ‘চট করে ঢুকে পড়বেন’। আর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে দেয়া আনুষ্ঠানিক ভাষণের বক্তব্য থেকে সরে এসে বলছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা তিনি শুনেছেন, দেখেননি। রাষ্ট্রপতির পদে তাকে শেখ হাসিনার মনোনয়ন এবং এর আগে বাংলাদেশের ব্যাংক লুটের নায়ক এস আলমের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার প্রতিনিধিত্বের পটভূমি সঙ্কটকালে তার যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার আশঙ্কাকে তীব্র করে তোলে।
এ ধরনের বিপরীতমুখী অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অবস্থান নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে হয়। কেউ কেউ বিএনপির অবস্থানের পেছনে বাইরের কোনো শক্তির ইন্ধনের কথা বলতে চান। তবে বাস্তবতা এই যে, এভাবে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে বিভেদই বাড়বে। যার যার অবস্থান বিবেচনা করে দূরত্ব কমানোতেই এ সময়ে সব পক্ষের জন্য কল্যাণ।
ঈশান কোণে মেঘঃ বিপ্লবের পক্ষের সব শক্তির মধ্যে যে জন্য সমন্বয় দরকার সেটি হলো ঈশান কোণে এখন আরো বেশি করে মেঘ ঘনীভ‚ত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার বর্তমানে ৫জি যুদ্ধকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তারা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, লুকিয়ে থাকা এজেন্টদের সক্রিয় করছে এবং গণমাধ্যমে অপপ্রচারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। ডিসিপ্লিনড ফোর্সে বিদ্রোহ, পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি, সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন ব্যানারে সভা-সমাবেশ করে পতিত রাজনৈতিক শক্তিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা এই সবকিছুর পেছনে ৫জি ষড়যন্ত্রের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হবেন। তাহলে প্রতিবেশী ভারতের বিজেপি নেতৃত্বের সাথে ইসরাইলের নেতানিয়াহুর সরকারের যে কৌশলগত মৈত্রী কার্যকর রয়েছে তা ট্রাম্প প্রশাসন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। যদিও এ সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। ট্রাম্পের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর যদি অপ্রত্যাশিত কোনো কারণে ট্রাম্প জিতেও যান গভীর ক্ষমতা বলয় বা ডিপ স্টেটের বাইরে গিয়ে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। অবশ্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যুতে মোদির বয়ানের সাথে তার সুর মেলানোকে একেবারে হালকাভাবে দেখা যায় না। পাশাপাশি প্রফেসর ইউনূসের সাথে আন্তর্জাতিক যে যোগসূত্র রয়েছে সেটি ছিন্ন করার জন্য ফ্যাসিবাদী লবিস্ট ও প্রতিবেশী তৎপরতার যোগসূত্র থাকতে পারে।
বাংলাদেশে ইসলামিস্টদের রাজনৈতিক অবস্থানকে অনেক বড় করে দেখা এবং জামিনে আলেম-ওলামার মুক্তি পাওয়াকে উগ্রবাদী শক্তির উত্থানের সাথে সম্পৃক্ত করার বিষয়েও এর যোগসূত্র রয়েছে। এসব করে ইউরোপ-আমেরিকার সেকুলার সরকারগুলোর সামনে ইসলামিস্ট উত্থানের ভীতি তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের আদানি গ্রুপের বকেয়া না পেলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়ার আলটিমেটামের সাথেও এর যোগসূত্র থাকতে পারে।
এগোতে হবে বুঝে শুনেঃ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পক্ষের শক্তিকে ষড়যন্ত্র ও নানামুখী ফ্যাসিবাদী শক্তির অপচেষ্টার বিভিন্ন দিক বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে। বুঝতে হবে কালবিলম্ব না করে নির্বাচন দিলে বিএনপি দ্রুত ক্ষমতায় আসতে পারবে। তবে ফ্যাসিবাদী শক্তির ক্ষমতা প্রবল হয়ে উঠলে আর সেই সাথে এর বিপক্ষ শক্তি বিভাজিত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকলে সরকার ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। আর এমন পরিস্থিতিতে পতিত সরকারের ক্ষমতায় ফেরার বিষয় হয়তো কোনোভাবেই ঘটবে না, তবে সংবিধান স্থগিত বা বাতিল করে সামরিক ফরমানে দেশ চালানোর পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে দুই বছর কেন ছয় বছরেও নির্বাচন হওয়ার গ্যারান্টি থাকবে না। এর মধ্যে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটানোর চেষ্টাও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
এ সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে জটিল করতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার নানা চেষ্টাও রয়েছে। রাষ্ট্রের আর্থিক খাত অচল করে দেয়ার জন্য ক্ষমতা হারানোর আগেই ব্যাংকের ভাণ্ডার শূন্য করা হয়েছে। যার ফলে অধিকাংশ ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে টাকা দিতে পারছে না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে অর্থনীতির গতিশীলতা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও শিল্প এলাকায় পরিকল্পিত নাশকতা চালানো হচ্ছে। সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। জনমনে অসন্তোষ তৈরির চেষ্টায় বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে প্রচারণার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ভুয়া খবর এবং তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়ানোর চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে। এসব বিবেচনা করেই সরকার, জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। অপপ্রচার রুখতে হবে এবং এ কাজে জড়িতদের চিহ্নিত করতে হবে। বিপ্লব তখনই সফল হবে, যখন পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হবে এবং সবাই সমালোচনার পরিবর্তে পরামর্শে মনোনিবেশ করবে। আস্থায় চিড় ধরলে শত্রুপক্ষ সরাসরি লাভবান হবে। তাই সর্বোচ্চ সহনশীলতা জরুরি।
কী করতে হবেঃ বিপ্লবের পক্ষের সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। এতে বিপ্লবের অর্জিত সাফল্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। শত্রুরা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে :
ঐক্য ধরে রাখা : পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় যেভাবে সবাই জালিমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছিল, সেই ঐক্য ধরে রাখা কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভাজন অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে।
ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক ভূমিকার স্বীকৃতি : ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের নানান প্রোপাগান্ডা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় না থাকলে পশ্চিমা বিশ্ব এসব মিথ্যা প্রচারণাকে সত্য বলে গ্রহণ করতে পারত। তাই তার গুরুত্ব বোঝা, তাকে সম্মান দেয়া এবং তার মাধ্যমে বাংলাদেশের অবস্থান আরো উন্নত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত।
ছাত্রদের অবদানের মর্যাদা দেয়া : যেহেতু এই বিপ্লবের উদ্যোক্তা ছিল ছাত্ররা, তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা। এটা সত্য যে, রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠন এই বিপ্লবের অন্যতম সহায়ক হিসেবে রক্ত দিয়েছে। তবে কৃতিত্ব নিয়ে ঝগড়া না করে জাতিগত ঐক্য গড়ে তোলা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনে ছাত্র, জনতা, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, আমলা, সেনাবাহিনী সবাই ছিল। সুতরাং এ কৃতিত্ব সবার; কিন্তু যেহেতু প্রাথমিক উদ্যোগ ছাত্রদের ছিল, তাদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
বিপ্লবী সরকারের চরিত্র প্রতিষ্ঠা করা : এই সরকারকে একটি বিপ্লবী সরকারের চরিত্র দেয়া প্রয়োজন, আর বিপ্লবী সরকার সাধারণত সংবিধানের অনেক কিছু মেনে চলে না। এ বিষয়ে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা বোঝা এবং তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদান করা আগামী দিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর হাজার হাজার ছাত্রের আত্মত্যাগের পর খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। এ ধরনের কাজ জনবিচ্ছিন্নতা ও গণ-অসন্তোষ থেকে বাঁচার কার্যকর উপায়।
সিভিল অথরিটি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়া : আন্দোলনে সম্পৃক্ত বেসামরিক বিপ্লবী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা থেকে দূরে থাকা উচিত। এতে শত্রুরা লাভবান হবে এবং বিপ্লব-২০২৪ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করা : মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং তুরস্ক, কাতার, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানের মতো মুসলিম দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে তাদের সাথে আরো গভীর বোঝাপড়া এখনই প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ : বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান কোনো বিরোধ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না জড়িয়ে আমাদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি কৌশলী ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা আবশ্যক, যা উভয় দেশের সাথে শক্তিশালী ও সুসংহত ক‚টনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সহযোগী হবে। এক দিকে চীন আমাদের নিকটবর্তী প্রতিবেশী এবং তাদের সাথে বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা আর্থিক, কৌশলগত এবং নিরাপত্তার দিক থেকে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের সাথে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত করতে ভূমিকা রাখে।
দুর্নীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স : বিপ্লবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। বিভিন্ন পদে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা, রাজনৈতিক দল, সমন্বয়কদের নিয়ে একটি দুর্নীতিবিরোধী মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে। এই সেল সব প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করবে এবং ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনেও জড়িত থাকবে। সুশাসন, গণতন্ত্র, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়ে তারা পরামর্শ দেবেন।
জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন : এই মুহূর্তে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন অত্যন্ত জরুরি, যেখানে বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব ও আলেমসমাজ ও সিভিল সোসাইটিরও অংশগ্রহণ থাকবে। এই কাউন্সিল দেশের নিরাপত্তার বিষয়গুলো তদারকি করবে।
রাজনৈতিক কর্মীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা : রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানদের উচিত তাদের কর্মীদের চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি থেকে দূরে রাখা। তা না হলে বিপ্লব ও দল দু’টিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দলগুলোকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা : গণমাধ্যমগুলোর দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা ও ফ্যাসিস্ট সমর্থক গণমাধ্যমকর্মীরা যেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখা। গণমাধ্যমকে অবশ্যই জাতীয় স্বার্থে কাজ করতে হবে এবং দেশের উন্নতির জন্য ইতিবাচক ভ‚মিকা পালন করতে হবে।