উত্তরাঞ্চল আর কখনো অবহেলিত থাকবে না উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো বিশেষ মর্যাদা রাখে। কিন্তু এ এলাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রয়েছে। এখনো অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত। এ অঞ্চল আর অবহেলিত থাকবে না বলে তিনি ঘোষণা দেন।
সারাদেশের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের মানুষগুলো অনেক ধর্মপ্রাণ ও অল্পে তুষ্ট বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ অঞ্চলে আল্লাহ রহমত বরকত দেয়ার জন্য তিনি দোয়া করেন। তিনি ভারতকে উদ্দেশ করে বলেছেন, প্রতিবেশী ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমরা প্রতিবেশীসুলভ আচরণ চাই। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। আদালত যখন চাইবে তখন তাকে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার জন্য তিনি ভারতের প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল শুক্রবার নীলফামারী জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সকালে পৌরসভা মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আনতাজুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় সহাকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বেলাল, শহীদ মহিদুলের পিতা আনোয়ার হোসেন, ঠাকুরগাওয়ের সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হাকীম, নীলফামারীর সাবেক জেলা আমীর আব্দুর রশিদ, দিনাজপুর জেলা আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, লালমনিরহাট জেলা আমীর এডভোকেট আবু তাহের, নীলফামারী জেলা নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, পঞ্চগর জেলা আমীর অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, নীলফামারী জেলা খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা সাদ্দাম হোসেন জেহাদী, ঠাকুরগাঁও জেলা আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, রংপুর মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ সালাফী, শ্রমিক কল্যাণ নীলফামারী জেলা সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জুয়েল, জেলা জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক ছাদের হোসাইন প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সাড়ে পনের বছর শান্তিতে ছিল না। সকল ধর্মের মানুষ নির্যাতিত ছিল। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ছিল বেশি নির্যাতিত। সকল অফিস সীলগালা করে দিয়েছিল। কাউকে ঘরে থাকতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীর উপর আঘাত দেয়া হয়েছে। বিডিআর এর সাতান্ন জন দেশ প্রেমিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর ঘাতকদের পালিয়ে যেতে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়েছে কিন্তু এ তদন্ত রিপোর্ট আজো প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, বিডিআর হত্যাকা-ের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর উপর আঘাত দেয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্র্টোরি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আল্লামা সাঈদীসহ এগারজন শীর্ষ নেতাকে হাস্যকর মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, হত্যা, ধর্ষণ ও লুন্ঠনের অভিযোগ আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ছিল ষোলআনা মিথ্যা। স্বাধীনতার পর একাত্তর সালের অপরাধে যে সব মামলা হয়েছে তার মধ্যে এসব নেতৃবৃন্দের নামে একটি মামলাও ছিল না। একশত পচানব্বই জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। কিন্তু তারা একজনও এদেশের নাগরিক ছিলেন না। দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর পর মামলার উদ্ভব হয়। সাক্ষীদেরকে অর্থ সম্পদ দিয়ে সেফ হোমে রেখে শিখিয়ে দিয়ে সাক্ষ্য দেয়া হয়। ব্রাসেলস থেকে জিয়াউদ্দিন বিচারককে রায় লিখে দেয়। বিচারকের নামে দলীয় ক্যাডার দিয়ে রায়ের মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বর্তমান বাংলাদেশ গঠনের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, আমরা শহীদদের উত্তরসূরী। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গঠন করা আমাদের দায়িত্ব। এদেশে আর কোন বৈষম্য থাকবে না। আমরা কোন অপরাধ করবো না। দুর্নীতি করবো না, কাউকে দুর্নীতি করতে দিব না। আমরা ঘুষ খাই না, ঘুষ খাইতো দিব না। জামায়াতে ইসলামীর দুইজন মন্ত্রী পর্যায়ক্রমে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের হাত পরিচ্ছন্ন ছিল। তারা দুর্নীতি করেননি। তাদের এখনো তদবীরের কোন স্থান ছিল না। জনগণ আমাদের উপর দায়িত্ব দিলে সমাজটা আরো সুন্দর হবে। আমরা জনগণের জানমালের পাহারাদার হবো। এ জন্য কর্মীদের তৈরি হতে তিনি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, দেশে শিক্ষিত কোন বেকার থাকবে না। মা-বোনদের ইজ্জত সম্মান নিরাপদ থাকবে। সকলের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হবে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের নাগরিকরা দল মত নির্বিশেষে সমান অধিকার ভোগ করবে। কোন মেজরিটি ও মাইনরিটি বলা যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদ দূর করার জন্য ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়েছে। সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে অতীতের মতো আশঙ্কা রয়েছে। সরকার দ্রুত সংস্কার করে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে। বিগত পনের বছর কেউ ভোট দিতে পারেননি। এখন ভোট দেয়ার সুযোগ এসেছে। তিনি কর্মীদের আত্মগঠন করার আহ্বান জানান। সেই সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস সন্ত্রাস, দুর্ভিক্ষ ও ব্যাংক লুটের ইতিহাস। এই ফ্যাসিবাদ যাতে আর না আসতে পারে এজন্য দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় : সম্মেলন শেষে মাঠেই সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। এর মধ্যে দশ দফা এ সরকার বাস্তবায়ন করলে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা যাবে। সকল মানুষের ভোটের মূল্যায়ন করতে আনুপাতিক ভোটের প্রস্তাব করেছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন করতে হবে। আর সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। বিএনপি সরকারকে নির্বাচনের বিষয়ে বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সরকারকে যৌক্তিক সময় দেয়ার ক্ষেত্রে সবাই ঐক্যমত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শিক্ষা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি। সরকার চাইলে দেয়া হবে। সংবিধান নিয়েও বেশকিছু প্রস্তাব আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সৈয়দপুরের রেল কারখানা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৈয়দপুরের রেলকারখানা অনেক আগের। এটির অনেক সক্ষমতা রয়েছে। এ কারখানাসহ দেশের যে সকল জায়গায় রিসোর্স আছে সেসব জায়গায় কারখানা চালুর বিষয়ে সুপারিশ থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। পরে তিনি একজন সিনিয়র সাংবাদিকের হাতে একটি গোলাপ ফুল তুলে দেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে অঞ্চলের উদ্যোগে জেলা আমীর ও জেলা সেক্রেটারিদের নিয়ে এবং জেলা কর্মপরিষদ সদস্য, উপজেলা আমীর,নায়েবে আমীর, সেক্রেটারি ও ছাত্রদের নিয়ে পৃথক মতবিনিময় সভা করেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান।