নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। নওগাঁর ঢাকা রোড থেকে শুরু করে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার রেল লাইনের পাশ দিয়ে চলে গেছে রাণীভবানীর স্মৃতি বিজড়িত নাটোর শহরের বাইপাস সড়কে।
কিন্তু উদ্বোধনের আগেই আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা রেল স্টেশনের উত্তর দিকে মহাসড়কটির প্রায় ১৫০-২০০ ফুট রাস্তা গত ২৫ জুন বিকেলে হঠাৎ দেবে গেছে। এতে করে মহাসড়কটির মাঝে বড় ধরনের ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বেশির ভাগ অংশ দেবে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি সড়কটিতে মানসম্মতভাবে কাজ না করার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি উত্তরবঙ্গের বিশেষ করে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলার ঢাকাগামী যানবাহন ও যাত্রীরা নাটোর হয়ে খুব সহজেই ঢাকা যেতে পারবেন। এতে করে ঢাকা যেতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় কম লাগবে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই এই সড়কে চলাচল করতে পেরে নিজেরা স্বস্তি প্রকাশ করার পাশাপাশি হঠাৎ সড়কটি দেবে যাওয়ায় পুরো সড়ক নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ পুরো সড়কটিই অনেক গভীর খালের পাশ দিয়ে মাটি ভরাট করে অপরিকল্পিকভাবে তৈরি করা হয়েছে।
যার কারণে সড়কের নিচে গোড়ায় মাটি ধরে রাখার মতো কোন ব্যবস্থা না করার কারণে নিচ থেকে মাটি সরে গেলেই পুরো সড়কটিই ভেঙে খালের মধ্যে চলে যাবে। মহাসড়কের নওগাঁর অংশের ২৯ কিলোমিটার রাস্তার রাণীনগর রেল স্টেশন সংলগ্ন সামান্য অংশ পাকাকরণ কাজ বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল শুরু করেছে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও এই জনপদের বসবাসরত মানুষরা সরাসরি বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহার করে রাণীনগর থেকে শুরু করে আত্রাই, নলডাঙ্গা, বাসুদেবপুর হয়ে অল্প সময়ে কম খরচে জেলা শহর নাটোরে পৌঁছে যাচ্ছে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সড়কটি নির্মাণ কাজের জন্য তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের এমপি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির নওগাঁর ঢাকা রোড নামক স্থানে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সেই মোতাবেক কিছু কাজ শুরু হলেও রাজনৈতিক নানা জটিলতার কারণে তা ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে থাকে। এরপর ঢাকা রোড থেকে রাণীনগর রেল স্টেশন পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ অনেক আগেই পাকাকরণ করা হয়।
পরে অনেক জটিলতা কাটিয়ে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের মরহুম এমপি ইসরাফিল আলম ২০১৮ সালে পুন:রায় রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আত্রাই হয়ে নাটোর জেলার সীমানা পর্যন্ত অঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর থেকে এই সড়কের নির্মাণ কাজ এলাকাবাসির কাছে অনেকটাই দৃশ্যমান হয়।
এই সড়কটি নাটোর বাইপাস সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। পুরো সড়কে ৫টি সেতু ও ১০টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। বর্তমান সড়কের উপরিভাগের কাজও শেষের দিকে। কিছু কিছু জায়গায় শুধু মাত্র কার্পেটিং কাজ বাকি আছে। এই মহাসড়কের নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৯ কোটি টাকা।
পুরো প্রকল্পটিকে ৪টি ফেজে ভাগ করে ৪টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করছেন। নওগাঁ-নাটোর অঞ্চলিক সড়কটির নির্মাণ কাজের দেখভাল করছেন নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান সাজিদ বলেন, সড়ক দেবে যাওয়ার খবর পেয়েই আমি ও সিনিয়র কর্মকর্তারা গত ২৫ জুন বিকেলে ওই সড়কটি পরিদর্শন করেছি।
আমিও বুঝতে পারছি না কি কারণে সড়কের ওই অংশটুকু এমনভাবে দেবে গেলো। ইতোমধ্যেই দেবে যাওয়া সড়কের ওই অংশটুকু পুর্ননির্মাণের কাজ শুরু করেছি। আমি আশাবাদি দ্রুতই সড়কটি চলাচলের জন্য স্বাভাবিক হবে।
আপনার মতামত লিখুন :