একজন লেবাসধারীর সুদর্শনের একি কাণ্ড!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ১১, ২০২৫, ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ /
একজন লেবাসধারীর সুদর্শনের একি কাণ্ড!

সফেদ দাঁড়ি, পড়নে সাদা পাঞ্জাবী, মাথায় সাদা টুপি, নূনারী চেহারার তরুণ। তৌহিদী জনতার যে কেউ প্রথম দেখলেই বিগলিত হয়ে উঠবেন। আহা! কত আল্লাহওয়ালা মানুষ। বাস্তবে সৈয়দ অলিউল্লাহর ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। মজিদ হঠাৎ একটি কবরে লালসালু দিয়ে ঘিরে মাজার পরিচয় দিয়ে আয়রোজগার করতেন। আর নূরানী চেয়ারার তরুণ ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়ার ‘বটিকা’ বিক্রি করে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই তরুণের নাম গাজী সালাউদ্দীন তানভীর (তানভীর আহমেদ)।

জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ এখন একাই একশ। দরবেশি লেবাসে তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব খাটিয়ে কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে বাণিজ্য করেছেন। কোটি কোটি টাকা নিয়ে ডিসি নিয়োগের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক বিতর্ক ওঠে। বাধ্য হয়ে সরকার ডিসি নিয়োগ ঘুষ বাণিজ্য তদন্তে ১০ অক্টোবর অন্তর্বর্তী তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে ‘উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করে। আইন উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুলকে ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল। ওই সময় ডিসি নিয়োগে ছাত্র সমন্বয়কদের সচিবালয়ের দপ্তরে দপ্তরে ঘুড়ে বেড়ানো এবং দুজন যুগ্ম সচিবের ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের মধ্যে এই গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের নাম এসেছিল ডিসি নিয়োগ বাণিজ্যে।

ডিসি নিয়োগের তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্র সমন্বয়ক গাজী সালাউদ্দীন তানভীর ওরফে তানভীর আহমেদের নাম জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ‘বাণিজ্যে’ নতুন করে আলোচনায় এসেছে। মার্চ মাসের ১০ দিন পার হলেও এখনো শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি বই পায়নি। মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে বই সরবরাহ করতে পারেনি। কারণ এনসিটিভির পাঠ্যবই ছাপায় কাগজের বাজারদরের চেয়ে টনপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। ফলে তার বিক্ষুব্ধ। অভিযোগ রয়েছে এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তাকে হাত করে এই গাজি সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীর সি-িকেট করেছেন। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বই ছাপানোর কাগজ কিনলেই কেবল বই ছাপার ছাড়পত্র দেয়া হয়। না কিনলে ছারপত্র মেলেনি। ছাত্র সমন্বয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ এনসিটিবির অসাধু কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে কাগজ কিনতে বাধ্য করেছেন। শুধু কাগজ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে গাজি সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরসহ এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জনের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গঠিত হয় কমিটি। সেই কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পান রাখাল রাহা। মূলত তার নাম সাজ্জাদুর রহমান। সুত্রের দাবি সদ্যবিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ‘সরাসরি তার ছাত্র’ হওয়ার সুবাদে রাখাল রাহাকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নিয়োগ দেয়। ইসলাম বিদ্বেষী রাখাল রাহার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগেও মামলা হয়েছিল।

নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে উপস্থাপন করা, জাতীয় পতাকাকে বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় নিয়ে যাওয়া, পাঠ্যবইয়ে আওয়ামী লীগকে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করা এবং সেখানে পতিত সরকারের নানা গুণকীর্তন করা সংযোজন করায় অস্বস্তির মধ্যে পড়েন হয় এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। গাজি সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীর ছিলেন বিতর্কিত তথাকথিত লেখক ও গবেষক ওই রাখাল রাহার লোক।

অবশ্য বিতর্কের মুখে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা গাজি সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীর তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাখাল রাহার সাথে আমাকে জড়ানো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর চক্রান্ত। কথায় কথায় ধর্মকে প্রতিপক্ষ বানায় যারা, তারা নতুন রাজনৈতিক দলে একজন দাঁড়ি টুপিওয়ালার অবস্থানকে সহ্য করতে না পেরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে কি না সেই বিষয়ে আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। মূল অভিযোগ রাখাল রাহার বিরুদ্ধে হলেও, নিউজে একটা কয়েক শব্দের বাক্যে আমাকে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আবার, দেশব্যাপী রাখাল রাহার বিরুদ্ধে সচেতন না করে, আমাকে হাইলাইট করা হচ্ছে। যেন, আসল দোষী রাখাল রাহার বিরুদ্ধে কিছুই নাই। এই চক্রান্ত আপনাদের বুঝতে হবে’। তিনি আরো লেখেন, ‘মেইন এটেনশন সরায়ে ধর্মকে, দাঁড়ি টুপিকে প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টায় তারা সফল হচ্ছে। বারবার বলতেছি, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত হোক। তারা প্রমাণ করুক। নয়তো সবাইকে ক্ষমা চাইতে হবে। ডিসি নিয়োগের সময়ও আমাকে জড়ানো হয়েছিলো। ডিসি নিয়োগ দিয়ে অর্থ বিনিময়ের অভিযোগ আনা হয়েছিলো। এই অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। সে তদন্ত কমিটিতে কয়েকজন উপদেষ্টাও ছিলেন। তদন্ত কমিটি পরে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলো যে, ডিসি নিয়োগে এমন কোন লেনদেনের সংশ্লিষ্টতা পায় নি। আমার জড়িত থাকারও কোন প্রমাণ তারা দিতে পারে নি’।

গাজি সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরের মতো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সমন্বয়ক পরিচয়ে ডিসি, এসপি, ইউএনও ও থাকাগুলোয় তদবির বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে একাধিক ডিসি জানান, তাদের অফিসে সমন্বয়ক পরিচয়ে তরুণ নেতারা এসে নানা বিষয়ে তদবির করছেন। এদের কাজ করে না দিরে তারা ‘হাসিনার অলিগার্ক’ তকমা দেয়ার ভয় দেখান।

এদিকে গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি লেখক ও গবেষক রাখাল রাহাকে ‘ভ- বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সারজিস আলম অভিযোগ করেন যে, ‘রাখাল রাহা তার আল্লাহ ও নবী (সা.)- কে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। রাখাল রাহার বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, রাখাল রাহার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক সময় দিয়েছিল, কিন্তু এখন আর কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়’। অবশ্য সারজিস আলম জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা গাজি সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরে বিষয়ে কোনো শব্দ উচ্চারণ করেননি। তৌহিদী জনতার প্রশ্ন ইসলামী লেবাসধারী সফেদ দাঁড়ি নূনারী চেহারা নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করায় ইসলাম বিদ্বেষীদের ক্ষতির কারণ হচ্ছে।