‘এক বছরের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন’-জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ৬:২১ পূর্বাহ্ণ /
‘এক বছরের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন’-জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেছেন, বেশি সময় নয়, বেশি সময় নিলে মানুষের একটা ক্ষমতা স্বাদ এসে যায়, অতীতে দেখা গেছে এই ধরনের শক্তি যখন ক্ষমতায় যায়, ক্ষমতার স্বাদ যখন পেয়ে যায়, তখন আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, নতুন নতুন দল তৈরি করে ক্ষমতাকে আগলে ধরার চেষ্টা করে। তাই বলছি খুব বেশি নয়, এক বছরের মধ্যেই সরকারকে সংস্কারের কাজ শেষ করে নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ আর্দশ শিক্ষক ফেডারেশন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত ‘শিক্ষক সম্মেলনে’ তিনি এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর নূরনবী মানিকের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

মজিবুর রহমান বলেন, যার ভেতরে আল্লাহর ভয় আছে সেই ব্যক্তি শিক্ষক, যার ভেতরে ভয় নেই, সে শিক্ষক নন। রাসূল সা: এসেছিলেন মানুষের চরিত্রের পূর্ণতা দিতে। যার ভেতরে নৈতিকতা নেই, সে পশু।

পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কত ডিগ্রি ছিল তার, অথচ তিনি বলেছিলেন,‘দেখা মাত্রই গুলি করতে হবে’। কিন্তু সেই ব্যক্তি পালিয়ে গেছে। চরিত্রহীন মানুষই পশুর সমান। জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে চরিত্রহীন মানুষ গড়ার কোনো দরকার নাই।

শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার উপযোগী নয় জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার এলে সে দাবিটা পূরণ হওয়ার মত। উপযুক্ত সময়ের মধ্যে বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের সংস্কার কাজগুলো করবে।

নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচিত সরকার এসেই জনগণের উপযোগীদের শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করা দরকার সেটি তারা করবেন। নির্বাচিত সরকারের কাছে এটি দাবি করতে পারেন, কিন্তু উপদেষ্টা সরকারের কাছে এত পরিমাণ দাবি করছে মানুষ! আমি বলতে চাই দাবি পূরণ করার জন্য উপদেষ্টা সরকার নয়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা দেশের ধ্বংস কালো অন্ধকার দেখেছি, যেখানে কেউ বৈঠক করলেই বলতো জঙ্গিবাদের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আমরা ভাবতাম এই কালো অন্ধকার পরিবেশের কি অবসান হবে না? তখন এ দেশের ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সেই কালো যুগের অবসান করেছে। তাদের ত্যাগ ও বিনিময়ে আমাদের দীর্ঘ ১৫ বছরের আন্দোলনের মঞ্জিল হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের মূল লক্ষ্য হলো সভ্য সমাজ ও জাতিকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো। এখন ছাত্র ও শিক্ষার্থী নৈতিকতা পরে কথা এখন শিক্ষকদের নৈতিকতা ধ্বংস হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আজকে রাষ্ট্রের সব অঙ্গে ঘাঁ, মলম দেবো কোথায়? আধুনিক শিক্ষার নামে আজকে জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। শুধু এক জায়গায় মেরামত করে জাতির বিভাজন দূর করা যাবে না। ফলে জোড়াতালি দিয়ে শিক্ষানীতি তৈরি করে তরুণ প্রজন্মের রক্তের ঋণ শোধ করা যাবে না। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে নতুন কারিকুলাম প্রণনয় করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গনে এখনো আওয়ামী প্রেত্মাতারা বসে আছে। তারা আবারো দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। তাদের খুঁজে বের করুন, দ্রুত ব্যবস্থা নেন। শিল্পকলা একাডেমির ডিজি জামিল আহমেদ অপসারণ করতে হবে, না হলে ছাত্র-জনতা আবারো রাজপথে বাধ্য হবে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিদেশী থাবার আগ্রাসন বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শিক্ষকদের গতিশীল আন্দোলন চাই, শিক্ষকদের দাবি দাওয়া আদায় করুক। গত ১৬ বছরের যেসব শিক্ষক বৈষম্য শিকার হয়েছেন, তাদের নাম ধরে ধরে অন্তবর্তী সরকারের কাছে পেশ করবে আর্দশ শিক্ষক ফেডারেশন। নতুন বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ, গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এজন্য দরকার ইসলামের নৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা।

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড আ ন ম রফিকুর রহমান মাদানী বলেন, শিক্ষা মানুষকে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু এখনকার শিক্ষা মানুষকে অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, যে যত শিক্ষিত সে তত বড় দুর্নীতিবাজ। এটা তাহলে শিক্ষা নয়, যেটি তার ভেতরে পরকালীন ভয় দিতে পারেনি। ধর্মীয় শিক্ষায় দ্বারাই মানুষ তার চরিত্র গঠনে কাজ করতে পারবে।

তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড আবু ইউসুফ খান বলেন, রক্তের বিনিময়ে একটি স্বৈরাচার চলে গেছে আর কেউ যেন স্বৈরাচার ভূমিকা নিতে পারে, সেজন্য আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের শহীদ ছাত্রদের প্রতি দোয়া করবেন।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি প্রফেসর মোর্শেদ মাহবুব বলেন, যত ধরনের শয়তানি তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে আসে। তারা নিরীহ নন, রাজনীতি করে না তবে পেছনে থেকে খেলে। এখন সব ক্ষেত্রেই ইনক্লুসিভ শব্দ ব্যবহার করে, আমরা তো বাংলায় কথা বলি, তাহলে তো বলতে পারি, সার্বজনীন। কিন্তু বিদেশের সব দেশের সাথে সরকার সাথে দেখা হলেই বলে ইনক্লুসিভ। দেশে কি সমকামী চলে? এটি ইসলামী দেশ। ইসলামের কারণে এই দেশ হয়েছে, না হলে ভারতের প্রদেশ হত যদি ইসলাম না থাকত।

অ্যাডুকেশন সোসাইটির সেক্রেটারি ড ইকবাল হোসেন বলেন, ক্লাস ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত কোনো নৈতিকতা শিক্ষা নেই। এ কারণে একজন নোবেল বিজয়ীকে একজন প্রধানমন্ত্রী চুবানোর হুমকি দেন। এটাই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্য ভাইকে হিংসাত্মক মনোভাবি করে তোলা হয়েছে। অন্যকে ঘৃণার চোখে দেখানো হয়েছে। দাড়ি টুপিওয়ালা মানুষের প্রতি একটি শ্রেণি তাদের শিক্ষার মাধ্যমে হিংস্র করে তুলছে। আমি এই শিক্ষা ব্যবস্থা আর দেখতে চাই না। এটির পরিবর্তন করতে হবে।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এর প্রফেসর ড. সৈয়দ আব্দুল আজিজ বলেন, দেশে অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আছে। কিন্তু তারা শিক্ষা সংস্কার নিয়ে কোনো কথা বলে না। একটি সমৃদ্ধ রূপরেখার মাধ্যমে শিক্ষার সংস্কার করা দরকার। গেল ৫৩ বছর ধরে সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে ভঙ্গ করা হয়েছে, যেখানে আছে শিক্ষায় কার্যক্রম অবৈতনিকভাবে চলবে, কিন্তু সেটা কেউ মানেনি।

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই না, যে শিক্ষা ব্যবস্থায় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মানিকের মতো ধর্ষণের সেঞ্চুরি করবে। যারা কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করবে। আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যেখানে ধর্মীয় বিবেচনায় সমাজ সুন্দরভাবে চলবে, সেখানে লুটপাট থাকবে না, নৈতিকতায় সবাই এগিয়ে আসবে। আমরা ভারতীয় কোনো সংস্কৃতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা চাই না।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ভিসি প্রফেসর ড আব্দুর রউফ বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, এটা অতি পুরাতন, এটি জাতি গঠিত হয়, তবে সেটি ভঙ্গুর হয়। কোনো দিক থেকে তারা সবল হতে পারে না। পাশ্চাত্য শিক্ষায় যদি দেখেন তারা ইহজাগতিক কলাকৌশল দেখানো হয়েছে, কিন্তু শান্তি নেই তাদের। এর কারণ তাদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয় না। এজন্য তারা যুদ্ধ করে মানুষ হত্যা করে, আগ্রাসন শিকড় সব ওই তথাকথিত রাষ্ট্রগুলাতে। তাদের শিক্ষার মধ্যে মনুষত্ব ও মানবিকতা বিকাশ নেই। এ থেকে বের হওয়ার শিক্ষা ইসলামিক শিক্ষাই দিতে পারে। বিপ্লবের পর গঠিত সরকারের কাছে দাবি ইসলামের সন্নিবেশ ঘটাবে ধর্মী শিক্ষার মাধ্যমে, এটি ব্যবস্থা করেতে। এতে করে জাতি তাদেরকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে।

মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ঢাকা মহানগর পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসেন বলেন, মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে ৬০ শতক জমি লাগবে, কিভাবে সম্ভব? এই কালো আইন বাতিল করতে হবে। কালো হাতের থাবায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সময় মাত্র তিনটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়েছে। প্রতি থানা ও জেলায় একটি করে মাদরাসা জাতীয়করণ করতে হবে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি আব্দুস সবুর মাতব্বর বলেন, অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ড কোনো দিকে কর্ণপাত করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ক্ষেত্রে সরকার তাদের জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাইভেট কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পায় না।

কলেজশিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাকসুদুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা পর থেকে অনেক শিক্ষানীতি নেয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো শিক্ষানীতিতে ছাত্ররা কিভাবে মানুষ হবে, কিভাবে আদর্শ বিবেকবান মানুষ করা যাবে, সেটি রাখা হয়নি। কলেজ শিক্ষায় প্রতিটি শাখায় ধর্মীয় শিক্ষা আবশ্যক করতে হবে।

মাধ্যমিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আব্দুল করিম শাহীন বলেন, মাধ্যমিকের সকল শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। বেতন ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষকদের ওপর যে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে হবে।

কিন্ডার গার্ডেন শিক্ষক পরিষদের সভাপতি শিকদার আব্দুস কুদ্দুস বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা প্রত্যেক মাধ্যমে চালু করতে হবে। এই কিন্ডার গার্ডেন থেকে দক্ষ ও জ্ঞানী শিক্ষার্থী তৈরি করে থাকে, অথচ এই শিক্ষকরা কোনো সরকারি ভাতা পান না। করোনাকালীন অনেক শিক্ষক অসহায় জীবন যাপন করেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা পরিষদের সভাপতি আলী আকবর গাজী বলেন, নতুন বাংলাদেশে আমাদের শিক্ষক সমাজকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে। শিক্ষকরাই পারেন এ জাতির জন্য নীতিশীল ছাত্র তৈরি করেতে।

ইবতেদায়ী পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মমিরুল ইসলাম হেলালি বলেন, প্রাইমারী স্কুল ও ইবতেদায়ী মাদরাসা সংখ্যার মধ্যে বিশাল তফাৎ। এই কারণে এই দেশে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তৈরি হয়। জেনারেল শিক্ষা ধর্মীয় শিক্ষা সেইভাবে দেয়া হয় না। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের ও ইবতেদায়ী শিক্ষকের মধ্যে বেতনের বৈষম্য দ্বিগুণ। এই বৈষম্য দূর করতে হবে।