

এ যেন ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’। ঢাকঢোল পিটিয়ে ১১ সংস্কার কমিশন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে বিপুল অর্থব্যয়ে মাসের পর মাস আলোচনা-বিতর্ক হলো। মাসের পর মাস ধরে বিশাল পর্বতের (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) ‘জুলাই সনদ’ খবর সংগ্রহ ও প্রকাশে গণমাধ্যমের গলদঘর্ম। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সংস্কার ইস্যুতে বিশাল আয়োজনে আমজনতা বিরাট সম্ভাবনার প্রত্যাশায় ছিল।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অতঃপর গতকাল মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানান, সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে ৪৮টি নির্দিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে জনগণের মতামত জানতে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের তাগিদ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ তার প্রথম ৯ মাসের মধ্যেই সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করবে। এই সংসদই জুলাই সনদের বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে জুলাই সনদের প্রস্তাবনাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘জুলাই সনদ’ সুপারিশে গণভোটের আয়োজন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশনের উপর দায় চাপানো নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। কেউ কেউ বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বের লক্ষ্যে জামায়াত যে আগে গণভোট আয়োজনের দাবি করছে; সেটাকে আরো জোরালো করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, গণভোট ইস্যুতে কমিশনের সুপারিশ জামায়াতের এজেন্ডায় করা হয়েছে। এসব করা হচ্ছে মূলত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে। ভারত চায় নিজেদের মতো করে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে ফেরাতে; জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন যেন সেই এজেন্সি খুলে বসেছেন। মুখে ভারত বিরোধিতা কাজে দিল্লির দাসত্ব জামায়াত করে যাচ্ছে। কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে ৯টি সুপারিশ সরকারের নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মতামত দেয়া হয়েছে। অথচ এগুলো পরামর্শ নতুন করে দেয়ার কিছু নেই। সরকার এধরনের সিদ্ধান্ত অতীতেও নির্বাহী আদেশে নিয়েছে। সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে ৪৮টি নির্দিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ‘‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম।-এই আদেশ জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত হইবে, যাহা অতঃপর ‘এই আদেশ’ বলিয়া উল্লেখিত’’ তুলে ধরা হয়েছে সে সুপারিশের অনেকগুলো সংবিধানে রয়েছে এবং জাতীয় সংসদের প্রচলিত কার্যপদ্ধতিতে অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দিয়ে গণভোটের সময় নির্ধারণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর চাপিয়ে দেয়ার খবর পেয়েই গতকালই জামায়াত জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দিয়েছে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাবসহ মোট ১৮টি প্রস্তাব দেয়। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের এ প্রস্তাব দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেন জামায়াত কিভাবে জানলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোটের সময় নির্ধারণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেবে? গণভোট প্রসঙ্গ জামায়াত নেতা বলেন, গণভোট নির্বাচনের আগে করতে হবে। যে জাতীয় সনদ তৈরি হচ্ছে, জুলাই জাতীয় সনদে সেসব বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোকে পরিবর্তন করে যে সংস্কারগুলোর ব্যাপারে আমরা ঐকমত্য হয়েছি, জাতিকে তো সেটা জানতে হবে। জানার পরেই না তারা ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোট দেবে। যদি একই দিনে ভোট হয়, তাহলে ভোটারও তো জানতে পারলো না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের দিন দুইটা ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট হবে। এর বাইরে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নাই। এটা বিএনপির প্রথম দিন থেকে অবস্থান। এখনো সেই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং আগামী দিনেও সেটার কোনো পরিবর্তন হবে না। আমাদের অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার। কারা কী সুপারিশ করেছে, এটা তাদের সমস্যা। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর পুরো আলোচনায় বিএনপির অবস্থান ছিল গণভোট আর নির্বাচন একই দিনে হবে। দুটো ব্যালটের মাধ্যমে। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। নতুন করে এই বিষয়কে সামনে আনার কোনো সুযোগ নেই। সেটা যেই বলুক, যারাই প্রতিবেদন দিক, সেটা তাদের সমস্যা। এটা বিএনপির সমস্যা না। এই ব্যাপারে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বর মাসে তফসিল ঘোষণার বার্তা দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছে। জামায়াত সবার আগে প্রার্থী ঘোষণা দিলেও অদৃশ্য সুতার টানে হঠাৎ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘গণভোট’ আয়োজনের দাবিতে মাঠে নেমেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলতঃ দিল্লির এজেন্ডা হচ্ছে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) নির্বাচনের দাবি ভণ্ডুল হওয়ায় জামায়াত বিগত দিনে আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা ইসলামী আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নে জাতীয় নির্বাচনের আগে ডিসেম্বরে গণভোটের দাবিতে মাঠে নেমেছে। জামায়াতের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের ভিতরেও কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠী নির্বাচন পেছানোর ধান্দা করছেন। এ অবস্থায় গণভোট আয়োজনের সময়সীমার দায় নির্বাচন কমিশনের উপর চাপিয়ে দেয়ায় জামায়াতকে এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ যেন খুলে দেয়া হলো। যদিও আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসিরউদ্দিন জানিয়ে দিয়েছেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে’। তবে গণভোটের ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গভীর ও মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন’ পদ্ধতির চূড়ান্ত সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারির মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে আইনিপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাংবিধানিক রূপ দেওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। প্রস্তাবিত আদেশের প্রারম্ভিক ঘোষণায় স্পষ্ট করা হয়েছে, এই পদক্ষেপের মূল ভিত্তি হলো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে। ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনার পর সংবিধান সংস্কারসহ অন্যান্য সংস্কারের সুপারিশসংবলিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো সম্মিলিতভাবে ওই সনদে স্বাক্ষর করে এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সর্বোচ্চ অনুমোদন প্রয়োজন। এই অনুমোদনপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে : সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন নেওয়ার উদ্দেশ্যে গণভোট অনুষ্ঠান অপরিহার্য। জুলাই সনদ প্রস্তাবে গণভোটের প্রশ্নে বলা হয় ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হইবে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ব্যালটে প্রত্যেক ভোটার গোপনে ভোটদান করিবেন। অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা উক্ত নির্বাচনের দিন এই আদেশ অনুসারে গণভোট অনুষ্ঠান করা হইবে। এতে আরো বলা হয় গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়ন। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হইবে।
গণভোট নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর চাপিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অথবা নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটের আয়োজনের সুপারিশ করেছি। সরকার সেটা কিভাবে করবে সেটা তাদের ব্যাপার। সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং কমিশনের সক্ষমতা আছে কিনা দেখেশুনে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরকারী দলগুলোর বেশির ভাগই প্রথম দিকে বিরোধিতা করলেও পরে গণভোটের পক্ষে মতামত দিয়েছে। একটি নির্বাচন আয়োজনে বিপুল অর্থব্যয়ের কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব করে। তারপরও জুলাই অভ্যুত্থানে পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া ভারত অন্তর্বর্তী সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেখানে খুন, গুম, এবং জুলাই অভ্যুত্থানে ১৪শত ছাত্রজনতার হত্যার হুকুমদাতা, মানবতাবিরোধী অপরাধে শতাধিক মামলার আসামী শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে থেকে এখনো হুমকি ধমকি দিচ্ছে। আবার নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত তারা বিনিয়োগ করবেন না।
এমনকি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত ঋণের বাকি কিস্তী দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে না পারা ১২ কোটি ভোটার নির্বাচনে ভোটদেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। সেখানে ভারত পিআর পদ্ধতি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট ইত্যাদি ইস্যু সামনে এসে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিরোধিতা করলেও পর্দার আড়ালে দিল্লির অনুকম্পায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন নামে দল দুটি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সময়োপযোগী কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট ইস্যুর মুলা ঝুলিয়ে দিলো কেন?
সুপারিশগুলোর মধ্যে ৯টি সুপারিশ নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে করে কমিশন। উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ;বিচার বিভাগের জনবল বৃদ্ধি; আইনজীবীদের আচরণবিধি; কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন; দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন; পরিষেবা খাতের কার্যক্রম ও তথ্য অটোমেশন করা; ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া ইত্যাদি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এসব সুপারিশ নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রশাসনযন্ত্র এসব বিষয়ে আগেও কাজ করেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং কিছু কিছু সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিদেশ থেকে মেধাবীদের হায়ারে এনে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। মূলত এদের জুলাই অভ্যুত্থানে একের কারোই অংশ গ্রহণ ছিল না।
দেশে প্রচুর মেধাবী ও যোগ্য লোক থাকার পরও বিদেশ থেকে এদের হায়ারে এনে বলা হয়েছে এরা প্রচ- মেধাবী এবং সে মেধাকে কাজে লাগিয়ে জাতিকে নতুন কিছু উপহার দেবেন। ১১ সংস্কার কমিশন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, প্রধান উপদেষ্টার সহকারী হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ ও সংস্থায় বসানো হায়ারে আনা মেধাবীদের পিছনে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ দেখে মনে ‘পাহাড়ে মুসির প্রসব’ প্রবচনটির কথা মনে পড়ছে। এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে অর্থ ব্যয়ে এমন ব্যাক্তিদের পদ-পদবিতে বসানো হয়েছে; তারা জাতিকে নতুন কি পথনির্দেশনা দিলেন?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ তুলে বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে, সেই স্বাক্ষরিত সনদবহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ, সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ ৮৪টি দফা সম্ভবত, সেখানে বিভিন্ন দফায় আমাদের এবং বিভিন্ন দলের কিছু ভিন্নমত আছে, নোট অব ডিসেন্ট আছে। গণভোট আয়োজনের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হয়তোবা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমস্যাটা নিয়ে আবার আলোচনা হতে পারে। এখানে একটা নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে যে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নামে একটা আইডিয়া এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেটা আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কখনো টেবিলে ছিল না, আলোচিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।
জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে গণভোটের বিষয়ে কয়েকটি দল শুরুতে দ্বিমত পোষণ করেছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে আমরা সকলে একমত হয়েছি। আমরাও চেয়েছি গণভোট হোক। এখন নির্বাচন কমিশনের উপর দায় চাপানোর ব্যাপারটা হলো এখানে আমরা সবাই যেহেতু একমত হয়েছি এখন সরকার থেকে নির্বাচন কমিশনকে একটু সহায়তা করলেই হয়ে যাবে। জাতীয় নির্বাচন যেদিন হবে সেদিন বিকেলে বা শেষ সময়ে গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। এই ভোট করতে ইসির শুধু আলাদা ব্যালট ছাপাতে হবে ।
আপনার মতামত লিখুন :