

আলহাজ মোঃ রবিউল হোসেন:
“বহুদেশে দেখিয়াছি বহু নদ ও দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
দুগ্ধ স্রোতো রুপি তুমি জন্মভূমির স্তনে।”
চরণ তিনটি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা “কপোতাক্ষ নদ” কবিতাটি কবির স্বদেশ প্রেমের এক অনন্য উদাহরণ। কবিতাটি এক ব্যতিক্রমধর্মী স্টাইলে লেখা অমৃত অক্ষর ছন্দে গবেষণামূলক কবিতা।
কবি কপোতাক্ষ নদের জল বা পানিকে মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে তুলনা করে স্বদেশ প্রেম ও স্বদেশের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসার (দেশের প্রতি) ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন যা অন্য কোন কবি বা লেখকের কোন লেখায় এমনভাবে স্বদেশ প্রেমের প্রকাশ ঘটেনি।
উল্লেখ্য স্বদেশ প্রেমের উজ্জল দৃষ্টান্তের উৎস যে নদটি (কপোতাক্ষ নদ) সেটি আজ মৃত্যুপ্রায়। কবি এই নদটি নিয়ে যখন বিদেশের বহু নদ বা নদীর জলের বা পানির সঙ্গে তুলনা করে স্বদেশের নদকেই উচ্চ আসনে বসিয়ে ছিলেন তখন কিন্তু এই কপোতাক্ষ নদটি ছিল জীবন্ত অর্থ্যাৎ জোয়ার ভাটা সমৃদ্ধ।
অথচ আজ? আজ এ নদটি প্রায় মৃত্যু। নদটির প্রাণ ফিরে পেতে ট্রিটমেন্ট স্বরূপ তৎকালীন সরকার ড্রেজিং ব্যবস্থায় বেশ কিছু আর্থিক অনুদান বরাদ্দ করলেও এলাকাবাসীর দৃষ্টিতে দূর্নীতির কারণে যথাযথভাবে ড্রেজিং ব্যবস্থার অভাবে নদটি আজও প্রাণ ফিরে পায় নি। অবস্থা এমনই হয়তোবা এমন এক সময় আসবে যখন নদীটির নাম কবির লেখা কবিতায় খুঁজে পাওয়া যাবে বটে কিন্তু পাঠকের দৃষ্টিতে নির্দিষ্ট স্থানে এসে সেই পূর্বের কপোতাক্ষ নদটি আর কেহই খুঁজে পাবেন না। প্রয়োজন তাই কবির স্বদেশ প্রেমের উজ্জল দৃষ্টান্তের সেই কপোতাক্ষ নদটি সর্বোপরি কবির গবেষনা ও ব্যতিক্রমধর্মী অমৃত অক্ষর ছন্দের লেখা কবিতাটি জীবন্ত রাখতে নদীটি পুনঃ খননের জন্য এলাকাবাসী ও অসংখ্য পর্যটকদের পক্ষ থেকে সরকার বাহাদুরের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন।
দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন সংস্কার অভাবে ধ্বংসের পথে সাগরদাঁড়ীর মধুপল্লী কেও বাঁচাতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনেরও। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত জন্মস্থান যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়ীর মধু পল্লী আজ ধ্বংসের মুখে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদাসীনতা আর দেখভাল ও বরাদ্দের অভাবে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই স্থানটি তার গুরত্ব হারাতে বসেছে।
মধুপল্লীতে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে দত্তপুকুর যার চারপাশের বাঁধ ভেঙে জীর্ণ হয়ে আছে। মহাকবির জন্মভিটার বিভিন্ন স্থাপনা এমনকি কাকার বাড়িটির অবস্থাও শোচনীয়। দরজা জানালায় ফাটল এবং বিল্ডিংয়ে বড় ধরনের ভাঙন যে কোন সময়ে দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
গণমাধ্যম খবরে জানা যায় যে, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে সংস্কার বাবদ প্রায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও মধু পল্লীর মতো ঐতিহ্য বিজড়িত গুরত্বপূর্ণ স্থানে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। যা এলাকাবাসী ও বহু পর্যটকদেরও হতাশ করেছে।
গণমাধ্যম খবরে জানতে পারলাম। এ বিষয়ে মধু পল্লী কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেছেন মধুপল্লী সংস্কারের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। বিষয়টি সত্য হলে ভালো না হলে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মধুপল্লীর সংস্কারসহ কপতাক্ষনদের পুনঃখননের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করতে কবি প্রেমিক বহুজন এই প্রতিবেদক কে মৌখিকভাবে আবেদন জানিয়েছেন। আল্লাহ সহয় হউন। খোদা হাফেজ।
আপনার মতামত লিখুন :