জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করে দেবে-এমনটা ভাবার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, কয়েকজন ব্যক্তিকে বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনে দেশ চালানো যায় না। এই যে সহজ সরল কথা আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেকেই মনে করছেন, কয়েকজন লোক, সংস্কার যাঁরা করছেন; তাঁরা কতগুলো বৈঠক করে, সংস্কার করে জনগণকে এগিয়ে দিলেন, আর সংস্কার হয়ে গেল? এভাবে সংস্কার হয় না। সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জিয়া পরিষদ আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার পতন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
সংস্কার রাতারাতি হয় না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে বলছেন, যে ক‘জন লোক সংস্কার করছেন তারা কতগুলো বৈঠক করে সংস্কারের কতগুলো বিষয় নিয়ে এসে জনগণকে এগিয়ে দিলেন আর সংস্কার হয়ে গেলো সেইভাবে সংস্কার হয় না। সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আপনি চাইলেন আর কালকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কাঠামোটা তৈরি করতে হবে এমনভাবে যাতে করে সে ঘুষ না খায়।
তিনি বলেন, ঠিক একইভাবে আমাদের যে আমলাতন্ত্র, এই আমলাতন্ত্র আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা, ইটস এ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সেই বিষয়গুলো করতে হবে। অর্থা রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কাছে চলে যাওয়া, জনগণের কাছ থেকে তাদের কী প্রয়োজন তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহন করে সেটাকে নিয়ে এসে দেশ পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা।
দেশে ক্রান্তিকাল চলছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ গোটা জাতি একটা ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে। এখন আমরা অপেক্ষা করছি ট্রান্সজিশনাল পিরিয়ড থেকে গণতন্ত্র উত্তরণের একটা পথ খুঁজছি আমরা। বাংলাদেশে যে একটা ভয়াবহ সংকট উপস্থিত হয়েছে, আমরা যে এখন একটা রাজনৈতিক শূণ্যতা এবং অর্থনৈতিক বিরুপ একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে তাকে নিরুপন করার ব্যাপারটা। আসলে আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিস্ট শক্তি তারা যে ক্ষতিটা বাংলাদেশের করে দিয়ে গেছে সেই ক্ষতিটা পুরণ এতো সহজে হবে না। তারা সমস্ত প্রতিষ্ঠাগুলোকে ধবংস করেছে। শুধুমাত্র বিচার বিভাগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ধবংস করেনি। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।
সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে দেশে জগাখিচুড়ি চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন এবং যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই। যেমন আপনি দেখুন খুব জোর করে বলছে, জোর গলায় বলছে যে, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। আমাদের সাধারণ মানুষ তো বুঝেই না যে, আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা (জনগণ) জানে যে, একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা পাতা যাই হোক সেখানে গিয়ে সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ইনারা বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আনুপাতিকটা কী জিনিস? সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি কিছুটা বুঝার চেষ্টা করি, তাতে করে ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে, যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে তারা তাদের নমিনেশন দেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য। এতে করে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়, প্রতিনিধি চায় তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খুঁজে সেটা কোনো মতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এই কারণেই বলেছি যে, নি¤œ কক্ষের যে পার্লামেন্ট সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন জনগণ প্রতিনিধি আমরা নির্বাচন করতে গেলেই বলবে যে, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেনো চাই সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করবো কী করে? আর প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে? আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থেকে?
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিতসাধীন আছেন। তার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্ব করেন। অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় জিয়া পরিষদের অধ্যাপত এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক মজিবুর রহমান হাওলাদার, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ, খন্দোকার শফিকুল হাসান, আলী নূর রহমান, এম জাহীর আলী, মনোয়ার হোসেন এনাম, রুহুল আলম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
আপনার মতামত লিখুন :