গৃহবধূ প্রীতির ভিসেরার নামে লাখ টাকা বাণিজ্য, ঈদের পরে তদন্ত গৃহবধূ সুলতানা প্রীতির (৩০) রহস্যজনক মৃত্যুকে পুঁজি করে ডাক্তারের নাম ভাঙিয়ে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারী মোস্তাকুলের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এদিকে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মোস্তাকুল ইমাম।
সন্তানহারা অভিযোগকারী বাবার অভিযোগ অসত্য দাবি করে মোস্তাকুলের উর্ধŸতন একজন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। ঘটনা একদিকে পুলিশ তদন্ত করছে, অন্যদিকে মিডিয়া। সব মিলিয়ে ঘটনাটি নিয়ে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছেন সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত কর্মচারী ও তার এক উর্ধŸতন।
খোলাডাঙ্গা মধ্যপাড়ার মোবারক হোসেন গোলদারের অভিযোগে তথ্য মিলেছে, তার মেয়ে সুলতানা প্রীতির সাথে খড়কী স্টেডিয়াম পাড়ার মৃত শামসুর রহমানের ছেলে শাহাবুর রহমান সাবু ওরফে ছোট সাবুর বিয়ে হয়।
আর বিয়ের পর থেকেই ওই সংসারে অশান্তি চলে আসছিল। বিশেষ করে সাবুর অব্যাহত সন্ত্রাসী তৎপরতা, নানা অপকর্মে বার বার সাবুর আটক হওয়া ও প্রীতির পরিবারের কাছে দফায় দফায় যৌতুক দাবির কারণে গোলযোগ চরমে ওঠে।
এরই এক পর্যায়ে গত বছরের ২৯ নভেম্বর বিকেলে সাবু ও তার পরিবারের লোকজন প্রচার করে কলহের জের ধরে প্রীতি কীটনাশক পান করেছে। এ খবরে পিত্রালয় থেকে লোকজন এসে প্রীতিকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়।
বাবা মোবারক গোলদার অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রীতি নিজে বিষপান করেনি, জামাই সাবু, সুজনসহ ৩ জন জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যা করে। কিন্তু গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে যে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয় তাতে মৃত্যু রহস্য পরিস্কার না হওয়ায় ভিসেরার প্রয়োজন হয় পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নিতে।
গত ৬ মার্চ ফরেনসিক মেডিসিন এন্ড টকসিকোলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার বাবুল কিশোর বিশ্বাস ভিসেরার জন্য প্রয়োজনীয় আলামতসহ আবেদন করেন। এসময় যশোর জেনারেল হাসপাতালের ময়না তদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন ফাইল দেখাশুনা করার দায়িত্বে থাকা কর্মচারী মোস্তাকুল ইসলাম প্রতারণায় লিপ্ত হন মেয়ে হারানো শোকার্ত বাবা মোবারক গোলদারের সাথে।
ভিসেরা রিপোর্ট তাড়াতাড়ি আনতে হলে ডাক্তার বাবুল কিশোরকে এক লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান মোস্তাকুল। মোস্তাকুলের নানামুখি প্রতারণামূলক কথায় বিশ্বাস করে তাকে ৬৫ হাজার টাকা দেন। ভিসেরা রিপোর্ট আসলে বাকি ৩৫ হাজার টাকা দেয়ার মৌখিক চুক্তিও করেন মোস্তাকুল।
এছাড়া ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও ভিসেরার আবেদন পরবর্তী কাগজ পত্র সরবরাহের নামে মোস্তাকুল আরো ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেছেন মৃতের বাবা। কিন্তু টাকা নেয়ার ৪ মাস পার হলেও ভিসেরা না আসায় বিচলিত হয়ে ওঠেন মোবারক গোলদার। প্রতিবেদন ছাড়া থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড না হওয়ায় মেয়ে হারানো বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে বার বার ধর্না দিচ্ছেন হাসপাতালে।
এসব নিয়ে ৬ জুলাই গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ডাক্তার বাবুল কিশোরের নাম ভাঙিয়ে ৬৫ হাজার টাকা ও অন্যান্য কাগজ পত্র দেয়ার নামে আরো ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা অস্বীকার করেন মোস্তাকুল সে তথ্য এবং ডাক্তার বাবলু কিশোরের বক্তব্য প্রকাশিত হয়। ৬ জুলাই প্রকাশিত সংবাদের পর তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। গ্রামে কাগজ দপ্তরে আসছে আরো তথ্য।
মোস্তাকুল টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না বলেও কয়েকটি তথ্য এসেছে। গ্রামের কাগজের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে পত্রিকা ও প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। গত পরশু ও গতকাল কয়েকটি পত্রিকা দপ্তরে প্রতিবাদ ছাপানোর জন্য দেন দরবার করে ব্যর্থ হন মোস্তাকুল। অগত্যা তিনি তার এক উর্ধতনের কাছে ধর্না দিচ্ছেন তাকে এ যাত্রা বাঁচিয়ে নেয়ার জন্য।
‘ঠাকুর ঘরে কেরে আমি কলা খাইনি’ এমন আচরণ করে ওই উর্ধŸতন বিভিন্ন মহলে ফোন দিয়ে মোস্তাকুলের সাফাই গেয়ে চলেছেন। মোস্তাকুলের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন, যাতে পাছে তার নিজের গায়ে কাদা না লাগে।
এ ব্যাপারে যশোর আড়াইশ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আক্তারুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি ভিসেরার নামে মোস্তাকুল অর্থ বাণিজ্য করেছে এমন অভিযোগের তথ্য পত্রিকায় এসেছে পুলিশের কাছেও গেছে বিধায় ঈদের পরে একটি তদন্ত কমিটি করবেন বলে জানান।
তবে তিনি জানান, প্রকৃতপক্ষে ওই অভিযোগ সত্য নয়। মৃত নারীর বাবা তার বিরুদ্ধেও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন মহলে। মোস্তাকুল কিংবা তিনি কোনো আর্থিক লেনদেনের সাথে কোনো রকমেই সংশ্লিষ্ট নন। অভিযোগকারী ব্যক্তি এলোমেলো তথ্য দিয়ে যথেচ্ছা করছেন। তার মাথায় সমস্যা আছে বলেও দাবি করেন হাসপাতাল সুপার।