শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি। কিডনিতে সমস্যা তৈরি হলে আপনার জীবনই হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই কিডনি ভালো রাখার দিকে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিডনি সুস্থ রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস। একটু সচেতন হলেই কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব। এজন্য যথাযথ খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হবে, যাতে কিডনির ওপর চাপ না পড়ে। খেতে হবে এমন সব খাবার যেগুলো কিডনির জন্য উপকারী।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কিডনি ভালো রাখতে কোন খাবার সহায়ক হতে পারে-
পানিঃ কিডনিকে ভালো রাখতে খুব প্রয়োজন পানির। শরীর অনুযায়ী পানি কতটা প্রয়োজন, তার পরামর্শ নিন চিকিৎসকের কাছে। সেই অনুযায়ী পানি খান রোজ। প্রতি দিন পর্যাপ্ত পানি না খেলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনি তার সাধারণ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শীতকালেও পানি খাওয়ার পরিমাণ কমাবেন না। তেষ্টা না পেলেও সময়মতো পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
সবুজ শাকঃ সবুজ শাকের আছে অনেকগুলো গুণ। তার মধ্যে একটি হলো, এটি আপনার কিডনিকে ভালো রাখতে কাজ করে। কারণ এই ধরনের শাকে থাকে প্রচুর আয়রন এবং ভিটামিন। এই দুই উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকলে কিডনিও ভালোভাবে কাজ করতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সবুজ শাক রাখতে ভুলবেন না। এতে কিডনি সুস্থ থাকবে এবং সেইসঙ্গে মিলবে আরও অনেক উপকার।
ডিমঃ ডিম তো আমাদের সবার বাড়িতেই থাকে। আবার এটি কম-বেশি খাওয়াও হয়। তবে এখন থেকে নিয়ম করে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাবেন। কারণ প্রতিদিন ডিম খেলে তা আপনার শরীরে প্রোটিনের মাত্রা বজায় রাখতে কাজ করবে। আমাদের শরীরে প্রোটিনের মাত্রা সঠিকভাবে বজায় থাকলে তা কিডনি সুস্থ রাখতে কাজ করে। তাই বুঝতেই পারছেন, কেন প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে হবে?
ফুলকপিঃ অনেকেরই পছন্দের সবজির তালিকায় আছে ফুলকপির নাম। এটি যেমন সুন্দর ও সুস্বাদু, তেমনই পুষ্টিকর একটি সবজি। আপনি যদি নিয়মিত ফুলকপি খান তবে তা কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করবে। কারণ এই সবজিতে থাকে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম। এই উপাদান কিডনি ভালো রাখতে কাজ করে। তাই এখন থেকে ফুলকপি রাখুন আপনার খাবারের তালিকায়।
আপেলঃ প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে তা আপনাকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখবে। তার মধ্যে একটি হলো কিডনির অসুখ। কারণ আপেলে থাকে পর্যাপ্ত ফাইবার। নিয়মিত আপেল খেলে তা আপনার শরীরে ফাইবারের ঘাটতি দূর করবে। এর ফলে কিডনি ভালো রাখা সহজ হবে। তাই এদিকে নজর দিন।
দারুচিনিঃ রক্তে শর্করার মাত্রা যাতে কোনোভাবে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। সেই সঙ্গে কিডনি ফাংশনারেও উন্নতি ঘটায়।
চেরিঃ এই ফলটিতে উপস্থিত ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফলেট, ভিটামিন বি৬ ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর কিডনি ফাংশানের মারাত্মক উন্নতি ঘটায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে শুরু করে। আর যত ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে, তত অর্থ্রাটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
ক্যানবেরিঃ চেরির মতো এই ফলটিতেও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম। আর যেমনটা ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছেন যে এই দুটি উপাদান কিডনির ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
অলিভ অয়েলঃ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে এই তেলটির অন্দরে উপস্থিত নানাবিধ আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কিডনি ফাংশনের উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পেঁয়াজ ও রসুনঃ কিডনির ক্ষমতা বাড়াতে এই দুটি সবজি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে পিঁয়াজ এবং রসুনের মধ্যে কুয়েরসেটিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা কিডনিকে নানাবিধ ক্ষতিকর উপাদানের হাত থেকে রক্ষা করে।
বাদামঃ কিডনি স্টোনের আশঙ্কা কমানোর পাশাপাশি শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে বাদামজাতীয় খাবার। বিশেষত কিডনি বিনস বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
যেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন-
পেইন কিলারঃ সামান্য ব্যথা হলেই পেইন কিলার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আজই তা ত্যাগ করুন। কিডনির কোষের অতিরিক্ত ক্ষতি করে পেইন কিলার। ব্যথা একান্ত অসহ্য হলে তবেই পেইন কিলার খান।
অতিরিক্ত লবণঃ খাওয়ার পাতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আজই বাদ দিন। কিডনি অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীর থেকে বের করতে পারে না। ফলে বাড়তি লবণের সোডিয়ামটুকু রয়ে যায় কিডনিতেই। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিডনি।
মাংসঃ মাংসের বদলে পাতে রাখুন মাছ আর শাক-সবজির পরিমাণ। চর্বি কিডনির জন্য খুব ক্ষতিকারক। মাংসের ফাইবারও পরিমাণে বেশি হলে তা কিডনির উপর চাপ ফেলে। তাই ঘন ঘন মাংস খাওয়ার প্রবণতা থাকলে তা কমান, খেলেও অল্প পরিমাণ খান।
মদঃ মদ্যপান লিভারের ক্ষতি করে একথা আমরা সকলেই জানি। তাই মদ্যপান এড়িয়ে চলা আবশ্যক।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, কিডনির রোগীদের খাদ্যতালিকা বানাতে হবে কিছু নির্দিষ্ট খাবার দিয়ে। ভাত বা রুটির বদলে বাকহুইটস, কিনোয়া, অমরন্থ জাতীয় গ্লুটেনফ্রি শস্য দিতে পারেন। প্রোটিন দেয়ার সময়ে তার পরিমাণও খেয়াল রাখতে হবে।
ডায়ালাইসিস রোগীদের প্রোটিন দরকার হয়। তাই তাদের ডায়েটে প্রোটিন পরিমাণ মতো যোগ করতে হবে। তবে খুব বেশি নয়। ডায়ালাইসিস চলাকালীন রোগীকে ছানা, ডাল, টোফু, সয়াবিন, ডিমের সাদা অংশ, ছোট এক টুকরা মাছ, রাজমা ডাল, উদ্ভিজ প্রোটিন দিতে পারেন। কিন্তু নন-ডায়ালাইসিস রোগীদের এত প্রোটিন দেয়া যাবে না। সারা দিনে আনাজপাতি যা খাবেন, তার মধ্যেই যা প্রোটিন থাকে, তাদের জন্য যথেষ্ট। শুধু এক কাপ মুগ ডাল দেয়া যেতে পারে। তবে সপ্তাহে এক-আধবার মাছ, মাংস (রেড মিট নয়) খেতে পারেন। তার বেশি নয়।
তবে চিকিৎসকদের মতে, প্রত্যেক কিডনি রোগীর ডায়েট চার্ট আলাদা রকম হবে। এই ডায়েট রোগীর শরীরের ওপর নির্ভর করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস থেকে কিডনির সমস্যার সূত্রপাত হয়। তাই কিডনির রোগীর ডায়েট চার্ট করার সময়ে সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। সব মিলিয়ে কিডনি রোগীর ডায়েট চার্ট নিয়মিত আপডেট করা জরুরি।