কেএমপিতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, ১০মাসে ২৭ খুন!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ৩, ২০২৫, ১০:৫০ অপরাহ্ণ /
কেএমপিতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, ১০মাসে ২৭ খুন!

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮ থানায় গত ১০ মাসে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। দশ মাসে শুধু সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হয়েছে ২৭ জন। এছাড়াও ছিনতাই, মারামারি, কোপাকুপি, ছুরিকাঘাত এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে সন্ধ্যার পর নগরীতে বের হতে ভয় পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

নামেমাত্র পুলিশি তৎপরতা চোখে পড়লেও তা কোন প্রভাব ফেলতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়। মাদক, আধিপত্য ও চাঁদাবাজির জন্য সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে সচেতন নগরবাসির দাবি। তারা বলেছেন, পুলিশের দায়িত্বপালনের উদাসিনতায় মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে। এছাড়াও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারদের দোসর, বিভিন্ন মামলার আসামীদের গ্রেফতারেও নেই কোন তৎপরতা। পুলিশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পতিত সরকারের দোসররা দায়িত্বে থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে ধারণা অনেকের।

সবকিছু ছাপিয়ে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা আঙ্গুল তুলেছেন খোদ পুলিশ কমিশনারের দিকে। পুলিশ কমিশনারের ব্যর্থতার কারণে নগরীর আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। যার প্রমানবহন করে পুলিশ কমিশনারের ১০ মাসের দায়িত্বে থাকাকালিন ২৭টি হত্যাকান্ড। অপরদিকে সম্প্রতি আলোচিত এসআই সুকান্ত কান্ডে পুলিশ কমিশনার পড়েছেন বেকায়দায়। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও সুকান্ডকান্ডে পুলিশ কমিশনারের অপসারনের দাবি উঠেছে জোরেসোরে। কেএমপির সদর দপ্তর, উপ পুলিশ কমিশনারের দপ্তর থেকে আন্দোলন গড়িয়েছে রূপসা সেতুতে।

দশ মাসে ২৭ খুন : খুলনায় কেএমপি কমিশনারের যোগদানের মাসে খানজাহান আলী থানায় প্রথম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সেপ্টেম্বরে, অক্টোবরে হরিনটানা থানা এলাকায় খুন হয় একজন, নভেম্বরে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় একজন, লবনচরা থানা এলাকায় একজন, ডিসেম্বরে সদর থানা এলাকায় দুইজন, খালিশপুর থানা এলাকায় দুইজন, দৌলতপুর থানা এলাকায় একজন ও আড়ংঘাটা থানা এলাকায় একজন, জানুয়ারিতে সদর থানা এলাকায় একজন ও সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় একজন, ফেব্রুয়ারিতে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় একজন, মার্চ মাসে সদর থানা এলাকায় একজন, এপ্রিল মাসে সদর থানা এলাকায় একজন ও আড়ংঘাটা থানা এলাকায় একজন, মে মাসে সদর থানা এলাকায় একজন, সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় একজন, লবনচরা থানা এলাকায় দুইজন ও হরিণটানা থানা এলাকায় একজন খুন হয়, জুন মাসে সোনাডাঙ্গা এলাকায় একজন ও হরিণটানা থানা এলাকায় খুন হয়েছে একজন। এ ছাড়াও খুলনার একাধিক স্থানে অনেক অজ্ঞাত মৃতদেহ পাওয়া গেছে। হত্যাকান্ড ছাড়াও গত দশ মাসে ঘটেছে অসংখ্য ছিনতাই, মারামারি, কোপাকুপি ও গোলাগুলির ঘটনা।

কমিশনারের অপসারনের দাবির সূত্রপাত: গত ২৪ জুন পতিত সরকারের দোসর, জুলাই গণঅভ্যূন্থানে ছাত্র জনতার উপর নিপিড়নকারী এসআই সুকান্ত দাসকে জনগন ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। সেই রাতেই তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাংচুরসহ চারটি মামলা রয়েছে। এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় ২৫ জুন থেকে আন্দোলন করে আসছে ছাত্র-জনতা। এরই মধ্যে ২৮জুন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের নিকট প্রেস ক্লাবে খুলনার বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরে ছাত্র জনতা।

সেই সাথে ফ্যাসিস্ট দোসরদের রক্ষায় তার ভূমিকা তুলে ধরে তাকে অপসারনের দাবি করেন ছাত্র জনতা। প্রেসসচিব শফিকুল আলম ঢাকায় গিয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের দাবি তুলে ধরে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ^াস দিলে ছাত্ররা ২৪ ঘন্টার সময় বেঁধে দেয়। সর্বশেষ গত ১জুলাই খুলনার রূপসা ব্রীজ ব্লকেড করে কেএমপি কমিশনারের অপসারন দাবি জানান। তাদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আমজনতার পার্টি সহ বিভিন্ন সংগঠন।

পুলিশ কমিশনারের ফ্যাসিস্ট প্রেম: ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বরে কেএমপি কমিশনার হিসাবে যোগদান করেন। এরপর থেকেই নগরীর সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের পলাতক শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে মেট্রো এলাকার মধ্যেই মিছিল-মিটিং হতে দেখা গেছে। মিছিলের পর নামে মাত্র আওয়ামী লীগের রুট লেবের সমর্থকদের ধরলেও নির্দেশদাতারা থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। এছাড়াও পুলিশের ডিটেকটিভ পত্রিকায় ২০২২ সালের জানুয়ারীতে ফ্যাসিস্ট সরকারের গুণাগুন করে প্রবন্ধ লেখেন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

নাগরিক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা যা বলেছেন: খুলনার নাগরিক নেতা এড. বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনার মানুষ সব সময়ই শান্তি প্রিয়। তাই খুলনাবাসী চায় শান্তিতে জীবনযাপন করতে। কিন্তু গত দশ মাস যাবত খুলনার সেই শান্তি বিনষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। খুলনার পুলিশ প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিনিয়ত খুলনার কোন না কোন জায়গায় খুনের ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা নামলেই খুলনাবাসীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করে।

সবগুলো অপরাধ কর্মকান্ডই ঘটছে রাতে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খুলনাবাসীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর সদস্য সচিব জহুরুল হক তানভীর বলেন, ‘ছাত্র-জনতার উপর বর্বর হামলা ও নিপীড়নকারী খুনি হাসিনার দোসর ও চার মামলার আসামী পুলিশের এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে খুলনার পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারই ফ্যাসিস্টের দোসর।

কমিশনারের বক্তব্য: এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার গনমাধ্যমকে বলেন, এসআই সুকান্তসহ সারাদেশে বহু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তে যাঁদেরই অপরাধ প্রমাণিত হবে, তাঁদেরকেই গ্রেপ্তার করা হরে। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা আমার পদত্যাগ চাইছে, আমার পদত্যাগে যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তাহলে আমার পদত্যাগ করতে কোনো অসুবিধা নেই। আমি অফিস করছি। সরকার চাইলে আমাকে যেকোনো সময় উইথড্র করে নিতে পারে।’