কেসিসির স্বঘোষিত এপিএস গোপাল চন্দ্র সাহা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ১০, ২০২৫, ৮:৫৩ অপরাহ্ণ /
কেসিসির স্বঘোষিত এপিএস গোপাল চন্দ্র সাহা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কার্যক্রমের আড়ালে দীর্ঘদিন ছায়া মেয়রের ভূমিকা পালন করেছেন স্বঘোষিত এপিএস গোপাল চন্দ্র সাহা। কেসিসির কোনো পদে না থেকেও তিনি হয়ে ওঠেন নীতিনির্ধারক। নগরভবনকে ব্যবহার করে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। নামে-বেনামে মালিক হন বহুতল ভবন, জমি ও মাছের খামারের।

গোপালের ক্ষমতার দাপট এতটাই ছিল যে, মেয়রের কাছে ফাইল উপস্থাপন, ঠিকাদার নিয়ন্ত্রণ, বদলি-বহিষ্কার কিংবা পদোন্নতির সিদ্ধান্ত- সব কিছুতেই তার ছিল চূড়ান্ত মতামত। নগরভবনের বিভিন্ন শাখায় তার প্রভাব ছিল সর্বব্যাপী। কেসিসির ঢাকার অফিসে নিয়মিত স্টাফদের মতো অবস্থান করতেন গোপাল। সেখানে কেসিসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে মাছ, মধুসহ নানা প্রিয় উপঢৌকন পাঠাতেন। নগরভবনের মেয়র দপ্তরে তার জন্য নির্ধারিত একটি আলাদা কক্ষ ছিল, যেখানে বসেই চলত তার ‘তদবির বাণিজ্য’।

গোপাল কেসিসির গাড়িও ব্যবহার করতেন নির্বিঘ্নে। নগদ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে তিনি ক্যাশ শাখার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যাশিয়ার রনি ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ, যার মাধ্যমে তিনি ইচ্ছেমতো নগদ টাকা উত্তোলন করতেন। একাধিক সূত্র জানায়, তার প্রভাবে একাধিক ক্যাশিয়ার দেউলিয়া হয়ে পড়েন। রাজবাধের শূকর পালনকারীদের কাছ থেকেও প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করতেন।

প্রতিবাদ করায় তেরোখাদার এক খামারিকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠান তিনি ও তার চক্র। গোপালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নিরাপত্তাপ্রহরী হাবিব, যিনি গোপালের ‘চেষ্টায়’ সহকারী নিরাপত্তা সুপার হয়ে ওঠেন। শলুয়ার পুকুর ও বটিয়াঘাটার জমির মাছ বিক্রি করেও গোপালকে টাকা পৌঁছাতেন তিনি। এ কাজে সহযোগিতা করতেন আরেক ক্ষমতাধর কর্মচারী শামীম। সাবেক এস্টেট অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদারও গোপালের জন্য মাঠপর্যায় থেকে টাকা সংগ্রহ করতেন।

সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রথম মেয়াদকালে গোপাল এপিএস হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে পরে আর পদ না পেলেও তিনি সেই পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করতেন। নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সাহিদা বেগমের সঙ্গে শারীরিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। একাধিক কেসিসি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র আব্দুল খালেকের আমলে গোপাল ছিলেন কার্যত সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

কেসিসির এমন কোনো শাখা ছিল না, যেখানে তার নির্দেশনা চলত না। মেয়র দপ্তরের জাহিদ, সানি, হাকিম, সুজনসহ একটি চক্র তাকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করত। কেসিসি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জল কুমার সাহা বলেন, সাবেক মেয়র খালেকের প্রথম মেয়াদে গোপাল এপিএস ছিলেন। পরে আর না হলেও তিনি সেই পরিচয় ব্যবহার করে তদবিরবাণিজ্য চালিয়ে যান। তার অপকর্মে মেয়র দপ্তরের একটি চক্রও জড়িত ছিল।

কেসিসির সাবেক এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে গোপালের কথা শুনতে হতো। তা না হলে নেমে আসত নানা ধরনের নির্যাতন। কেসিসির উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সেলিমুল আজাদ জানান, গোপাল কাউকে মানুষ ভাবতেন না। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। বদলি, পদোন্নতি, বহিষ্কার- সব ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।

কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব শরীফ আসিফ রহমান বলেন, বিষয়গুলো তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গোপাল চন্দ্র সাহার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।