বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, বাংলাদেশে এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে, কোনো দলীয় সরকারের অধীন ভালো নির্বাচন হতে পারে না। সে যে সরকারই হোক। এ জন্য জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্দলীয় তদারকি সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে, যারা রুটিন কাজ করবে। তারা কী রুটিন কাজ করবে, তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে অবাধ–নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চাই। এ জন্য সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিসহ নির্বাচনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। টাকার খেলা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক প্রচারণা এবং প্রশাসনিক কারসাজি থেকে নির্বাচনকে মুক্ত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে জাতীয় সংসদ বহাল রেখে ভালো নির্বাচন হতে পারে না। সে জন্য নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং “না” ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে সিপিবির এই নেতা বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন অনেক বড় আওয়াজ দিয়েছিল। তাদের এই বড় আওয়াজ কুমিল্লার একজন সংসদ সদস্যের কান পর্যন্ত পৌঁছাল না। ফলাফল আমরা জানি। তাহলে জাতীয় নির্বাচনে যদি ৩০০ আসনে এমপিরা বহাল থাকেন, সেই সঙ্গে সংরক্ষিতসহ সাড়ে ৩০০ এমপির কানে কীভাবে আওয়াজ পৌঁছাবেন, এটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে বোধগম্য না।’
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।
নির্বাচনের ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে রুহিন হোসেন বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমরা বলেছি যে ইভিএমে আমি ভোট দিলে তো আমাকে অন্তত একটা কাগজ দিতে হবে। প্রমাণ থাকতে হবে আমি ভোট দিলাম, কোথায় ভোট দিলাম। তাহলে পুনঃগণনার সুযোগ থাকবে। এর আগের অনেক নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন যে ইভিএম খারাপ না। কিন্তু এর মধ্যে নানা সমস্যা থাকে, মানুষের নানা মত থাকে। এসবের সমাধান না করে যদি বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে এসব করেন, তাহলে তার গ্রহণযোগ্যতা সব সময় পায় না। ইভিএমে আমরা সর্বশেষ কুমিল্লার নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ দেখলাম।’
রুহিন হোসেন বলেন, ‘১৯৯০ সালে “আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব”—এই স্লোগান নিয়ে এই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকেই পদযাত্রা (পায়ে হেঁটে) করে ২৩ দিনে ঢাকায় পৌঁছেছিলাম। আমরা এখনো আন্দোলনের মধ্যেই আছি। আমাদের দাবি না মানলে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আবারও আমরা দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তেঁতুলিয়া, টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পদযাত্রা করে ঢাকায় যাব।’
সিপিবির পঞ্চগড় জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজা খন্দকার চামেলীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় সিপিবির পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম, সদস্য এম এ হান্নান, শফিকুল ইসলাম, রেহানা আক্তার, রাম কিশোর সরকার, লিহাজ উদ্দিন, পঞ্চগড় সদর উপজেলা শাখার সভাপতি এ টি এম মাহমুদুল আক্তার, সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।