খুলনায় অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম থামছেনা গত পাঁচ মাসে ১৩ হত্যাকাণ্ড!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ২৮, ২০২৫, ৭:৩৫ অপরাহ্ণ /
খুলনায় অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম থামছেনা গত পাঁচ মাসে ১৩ হত্যাকাণ্ড!

খুলনা নগরীতে যেনো অস্ত্রধারী সনতরাসী বাহিনীর দৌরাত্ম্য থামছেনা। খুলনাবাসী রয়েছে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। খুলনায় পাঁচ মাসে ১৩ টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে এই সকল অস্ত্রধারীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে খুলনার জনপদে সাধারণ মানুষ সব সময় রয়েছে চরম আতংকে।

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকৃত হত্যাকারী ও ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছে না। বিশেষ করে সন্ধ্য্নাামলেই অধিকাংশ মানুষ খুলনায় এখন চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে। পাচ মাসে ১৩ হত্যাকাণ্ডের কুলকিনারা উদঘাটনে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে।

নাগরিক নেতাদের দাবি সাবেক সরকার আমলের অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা এখনো রয়েছে বহাল। সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের খুলনার আইনশৃঙ্খলা বিভাগ থেকে অপসারন করতে না পারায় তাদের আশ্রয় পশ্রয়ে অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ।

সর্বশেষ নগরীর সদর থানার টুটপাড়া কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় একটি চা দোকান থাকে টেনে হিচড়ে এক যুবককে কুপিয়েও গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে চলে যায় অস্ত্রেধারী দুর্বৃত্তরা।

নগরী ও জেলায় হত্যা,ডাকাতি,ছিনতাই, চাদাবাজী, মারামারি, চুরিসহ অপরাধ মুলক কর্মকান্ড আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গত পাঁচ মাসেই হত্যা ও মারামারিতে ব্যবহৃত অসংখ্য অস্ত্রের ব্যবহার হলেও সেই অস্ত্র গুলো উদ্ধার করতে পারছেনা পুলিশ। তবে দুই একটি অস্ত্র উদ্ধার ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া বাকি

সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও সংঘটিত দুর্ঘটনা গুলোর একটির ও সঠিক কারন ও প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ড গুলোর কারণও অনুসন্ধান করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমানে নগরীতে পুলিশের টহল ও তৎপরতা থাকলেও এই সকল দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।

সবমিলিয়ে খুলনার সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন চরম আতংক বিরাজ করছে। নগরী ও জেলায় আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন সাধারন মানুষ ও নাগরিক নেতারা। সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ সন্ধায় নগরীর টুটপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছে। তার আগে একই থানার নিরালা এলাকায় চাঁদা না পেয়ে এক তেল ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। তারই মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই সদর থানার শিশুপল্লী জব্বার স্মরনী রোডে হত্যাসহ কয়েকটি মামলার আসামী সাহিন নামের একজনকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ দুর্বৃত্তরা।

নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় গত ২৫ জানুয়ারি রাত আটটায় নগরীর তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় একটি চা দোকানের সামনে কয়েকজন অস্ত্রেধারী সন্ত্রাসীরা খুলনা বিশব্বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র অর্নব সরকারকে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ২০ জানুয়ারি নগরীর সদর থানার ২১ নম্বর ওয়াড যুবদলের নেতা মো: মানিক হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

২০ জানুয়ারি বিকালে নগরীর সদর থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা মো: মানিক হাওলাদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন সন্ধায় কমার্স কলেজের সামনে ছাত্রদলকর্মী নওফেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুর রহমান লিটুর পুত্র।

স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও নাগরিক নেতাদের অভিযোগ মাত্র খুলনা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেএমপি কমিশনারের বক্তৃতার কয়েকঘন্টা পরই নওফেলকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে নগরীর সদর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিস্ত্রীপাড়া রসুলবাগ মসজিদের সামনে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহিন শেখ নামের এক যুবদল নেতাকে গুলি করে জখম করে দুর্বৃত্তরা।

একের পর এক সন্ত্রাসী হামল, হত্যাসহ কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্মের কারণে নগরবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। আর নাগরিক নেতারা বলেন, খুলনায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে পারছেনা পুলিশ। নগরীতে পুলিশের টহল তেমন চোখে পড়েনা। নগরীসহ জেলার নয় উপজেলায় অপরাধমুলক কর্মকান্ড আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিপূর্বে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলো যেমন এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টার সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা খুলনার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির অভিযোগ করেন।

এ দিকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারন উদঘাটন করতে বা অস্ত্রধারীদের আটক করতে না পরলেও সাংবাদিকদের মাঝে কাল্পনিক কল্পকাহিনির বর্ননা দিতে পুলিশ ঠিকই পারছেন বলে নাগরিক নেতারা অভিযোগ করেন। যেমন অর্নব হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে জানায়, নগরীতে সন্ত্রাসী দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন হয় অর্ণব।

পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মো: মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, যুবদল নেতা মানিক হাওলাদার, অর্ণবসহ অন্য সব হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান। সকল হত্যাকাণ্ডে ঠিকাদারী ব্যাবসা, মাদক বযবসা,নারী সংশ্লিষ বিষয়, সন্ত্রাসী গ্রুপের কোন সংশ্লিষ্টতাসহ নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, নগরীর সব এলাকায় পুলিশের টহলসহ সকল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

নাগরিক নেতারা জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তলসহ অত্যাধুনিক একটিও অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করতে পারছেনা। ফলে নগরীসহ সমগ্র খুলনায় এখন অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে কাঁপছে। নগরীতে পুলিশের টহল তেমন না থাকায় নগরবাসী নির্বিঘ্নে চলাচলে আতংকিত রয়েছেন। সব মিলিয়ে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে নাগরিক নেতাদের পরামর্শ খুলনায় পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক টহল ও তৎপর হতে হবে। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক সরকারের শাসনামলের কিছু কর্মকর্তাদের খুলনা থেকে অপসারিত করতে হবে।