খুলনায় আড়াই হাজার চিংড়ি ঘের ও খামার ভেসে গেছে!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ৩১, ২০২৪, ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ /
খুলনায় আড়াই হাজার চিংড়ি ঘের ও খামার ভেসে গেছে!

ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়ায় সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে চিংড়ি ঘের করেছিলেন মিজানুর রহমান। সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিতে বিলে জলাবদ্ধতার কারণে ঘেরটি ভেসে গেছে। তিনি বলেন, ঘের যাতে ভারী বৃষ্টিতে প্লাবিত না হয় সেজন্য দেড় লাখ টাকা খরচ করে ঘেরের আইল উঁচু করেছিলাম। তারপরও রেহাই পাইনি। আমার সাড়ে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ওই বিলের ঘের মালিক আসলাম শেখ বলেন, আমার ৪ বিঘার চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছ ভেসে গেছে। যা খরচ হয়েছে তা আর ফিরে পাবো না। আমার মতো আরও অনেকের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের ঘের প্লাবিত হওয়ায় তারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। খালগুলো খনন না করায় বিলের পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হতে পারে না।

শুধু এই দুজনই নয়, সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি এবং পাইকগাছায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে প্রায় আড়াই হাজার চিংড়ি ঘের ও খামার প্লাবিত হয়েছে। ঘের ও খামার থেকে বেরিয়ে গেছে মাছ। বিপুল অংকের আর্থিক লোকসানের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

চাষিরা জানান, গত প্রায় এক সপ্তাহ ভারী বৃষ্টিতে ডুমুরিয়া উপজেলায় অনেক ঘের প্লাবিত হয়। আর পাইকগাছা উপজেলার কালীনগর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৩টি গ্রামের চিংড়ি ঘের তলিয়ে যায়।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় ১ হাজার ৩৪৬ হেক্টর আয়তনের ২ হাজার ২০০টি চিংড়ি ঘের এবং ৭৫৪ হেক্টর আয়তনের ৪৬৫টি পুকুর, দিঘি ও খামার ভেসে গেছে। ঘের ও খামার থেকে আনুমানিক ৬৭২ মেট্রিক টন চিংড়ি বেরিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

চাষিরা জানান, বেশ কয়েকটি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় চাষিরা অনেকে ঘেরে লবণ পানি তুলতে পারছেন না। অনেকে স্বেচ্ছায় চিংড়ি চাষ ছেড়ে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। পুঁজি সংকট, ভাইরাস ও দাবদাহে চিংড়ির মড়কের কারণে অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিয়েছে। এছাড়া চিংড়ি ঘেরের বেশ কিছু জমিতে ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। তার উপর এবারের বিপর্যয়ের কারণে চলতি অর্থ বছরে চিংড়ির উৎপাদন কমে যাবে। ৫ বছরের ব্যবধানে খুলনায় বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে।

মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি হয় ২৮ হাজার ৩১৬ মেট্রিক টন। যা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রপ্তানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ১৯৬ মেট্রিক টনে। যা থেকে আয় হয় ২ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মাছ রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ৩ হাজার ১২০ মেট্রিক টন এবং আয় কমেছে ৬৭৭ কোটি টাকা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে চলতি অর্থ বছরে চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ কম হওয়ার আশংকা করছেন চিংড়ি চাষি ও রপ্তানিকারকরা।