খুলনায় ছাত্র-জনতার অগ্নিঝরা প্রতিরোধের দিন ছিল ২ আগস্ট


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ২, ২০২৫, ৯:৫৫ অপরাহ্ণ /
খুলনায় ছাত্র-জনতার অগ্নিঝরা প্রতিরোধের দিন ছিল ২ আগস্ট

২০২৪ সালের ২ আগস্ট দিনটি ছিল শুক্রবার। এদিন দুপুরের পর থেকে তীব্র হয়ে ওঠে ছাত্র জনতার আন্দোলন। প্রচণ্ড বাঁধা উপেক্ষা করে জুমার নামাজ শেষে খুলনার রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারী জড়ো হতে থাকেন জিরো পয়েন্ট এলাকায়। বিকেলের আগেই রণক্ষেত্র গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পুরো এলাকা। পুলিশের গুলি আর বৃষ্টির মতো টিয়ারশেল ছোড়ার মধ্যেও জায়গা ছাড়েননি আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দক্ষিণের জনপদ খুলনা। এ অঞ্চলের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে জুলাই আগস্ট বিপ্লবের উত্তাপ ছিল রাজপথে। বিশেষ করে ২ আগস্ট ছাত্র জনতার প্রতিরোধে খুলনা রূপ নেয় অগ্নি শহরে।

শুধু ২ আগস্ট নয়, আন্দোলনে পুরো জুলাইতে ছিল খুলনা উত্তাল। জেল, জুলুম, আহত সবকিছুকে একই সুতায় গেঁথে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ছাত্র-জনতা। শহরের পথে-প্রান্তরে, অলিতে-গলিতে গোটা জুলাইজুড়ে ছিল ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের বর্বরতা। যেখানেই ছাত্র-জনতার ফুঁসে ওঠা ক্ষোভ, সেখানেই প্রকাশ্যে পুলিশের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল আর লাঠিপেটা।

১৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করলে বাধা দেয় পুলিশ। ২২ থেকে ২৬ জুলাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রতি মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। ৩১ জুলাইও আন্দোলনে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় খুলনা। শহর জুড়ে পুলিশের তাণ্ডবে ওই দিন শতাধিক আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ। রাতে সার্কিট হাউজে তৎকালীন সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সংসদ সদস্য এসএম কামালের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে বিবৃতি আদায়ের চেষ্টা করে।

তবে হামলা-মামলা-হুমকি কোনো কিছুতেই ঘরে ফেরানো যায়নি রাজপথে নেমে আসা মানুষদের। মূলত ২ আগস্টের পরেই খুলনার আকাশে বিজয়ের আবহ তৈরি হয়। ওই দিন পর মাঠে দেখা যায়নি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে।

আন্দোলনে খুলনায় ছাত্র-জনতার কেউ মারা না গেলেও আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। যাদের মধ্যে কেউ কেউ সুস্থ হলেও কেউ হারিয়েছেন চোখ, কেউ বা বরণ করেছেন পঙ্গুত্ব। আর রাজধানীতে আন্দোলনে মারা গেছেন খুলনার অন্তত ৬ জন। সেসব পরিবারে দিনদিন গভীর হচ্ছে স্বজন হারানোর বেদনা।