

খুলনায় বিএনপি কার্যালয়ে বোমা ও গুলির ঘটনায় ইউসেফ স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক এমদাদুল হক (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত ও বিএনপি নেতা মামুন শেখ (৪৫), মিজানুর রহমান (৪৫), বেল্লাল হোসেন (৪০) আহত হয়েছেন। নিহত এমদাদুল হক যোগীপোলের মোজাহার আলীর ছেলে।
রবিবার (০২ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আইটি গেট সংলগ্ন যোগীপোল ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মামুন শেখের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ কার্যালয়টি স্থানীয় বিএনপির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, রবিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নগরীর আড়ংঘাটা থানা এলাকায় যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মামুন শেখ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অফিসে বসেছিলেন। এ সময় অতর্কিতভাবে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে চারজন দুর্বৃত্ত বিএনপি নেতা মামুনকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি বোমা নিক্ষেপ করে। আতহরা আত্মচিৎকার করলে তাদেরকে লক্ষ্য করে ৪/৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এতে মামুনের ভগ্নিপতি এমদাদুল হক, বিএনপি নেতা মামুন শেখ, বেল্লাল হোসেন ও মিজানুর রহমান আহত হন।
দলীয় নেতা-কর্মী ও স্বজনরা তাদের দ্রুত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক এমদাদুল হককে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর শওকত হোসেন হিট্টু বলেন, ঘটনার সময় আমি ফুলবাড়িগেটে ছিলেন। ঘটনার খবর শুনে তিনি হাসপাতালে গিয়েছেন।
খান জাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন শেখকে দুর্বৃত্তরা গুলি করেছে। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আড়ংঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ খাইরুল বাশার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হামলার কারণ ও হামলাকারীদের সনাক্ত করতে কাজ করছে।
এদিকে এ ঘটনার খবর শুনে নগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম হোসেন,দপ্তরে দ্বায়ীতপ্রাপ্ত শরিফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপি ও অংগসংগঠনের নগর, থানা ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় এক হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা ঘটে। নিহত এমদাদের স্ত্রী ও সন্তানরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। নিহত এমদাদুল হকের এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। ছেলেটি খুলনা মেডিক্যাল কলেজ পড়ালেখা শেষ করে সদ্য এই হাসপাতালেই ইর্ন্টাণ করছেন।
ঘটনার পর থেকে ফুলবাড়িগেট, তেলীগাতী, মহেশ্বরপাশা ও যোগীপোল এলাকায় চরম আতংক বিরাজ করছে। অথচ খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়ি গেট পুলিশ ফাঁড়ির সন্নিকটে এই খুনের ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। নগরীর দৌলতপুর, আড়ংঘাটা ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে বলে স্থানীয়দের দাবি।
ডেপুটি কমিশনার তাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে সিআইডি, ডিবিসহ পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। সোমবার থেকে ওই এলাকার মোবাইল টিম ও চেকপোস্ট আরো বৃদ্ধি করা হবে। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ডিসি উত্তর দাবি করেন যে,ইতিপূর্বে সাবেক ইউপি সদস্য আরিফ হত্যার সাথে কিছুটা লিংক তারা পেয়েছেন। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার নগরীর ফুলবাড়িগেট দলীয় কাযার্লয়ের সামনে থেকে এক প্রতিবাদ সভা ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে স্থানীয় বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেতারা।
নগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে খুলনার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে আন্দোলন করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন দলের নেতাকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আপনার মতামত লিখুন :