খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় মিজানুর সরদার (৬০) নামের এক ঘের ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা একই এলাকার ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি শফি গাজীর বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি এলাকায় ডাকাত শফি নামে পরিচিত বলে জানা গেছে।
এ সময় শফি গাজীকে বাড়িতে না পেয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র এলাকাবাসী উদ্ধার করে পুলিশে দেয়। একই সঙ্গে শফির সহযোগী কৃষ্ণনগর গ্রামের আনছার গাজীর ছেলে আনারুল গাজীকে (৪৫) বেদম পেটানো হয়। তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার রাতে রাড়ুলী ইউনিয়নের শ্রীকণ্ঠপুর এলাকায় মিজানুরের ওপর এই হামলা হয়। তিনি শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের হারু সরদারের ছেলে। তাঁকে ওই রাতেই পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পুলিশ আজ রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
মিজানুর সরদারের ভাই আব্দুল ওহাব বাবলু বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে পাশের চাঁদখালী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের ইনতাজ গাজীর ছেলে শফি গাজী (৪৪) পূর্বশত্রুতা ছিল। তারই জের ধরে শনিবার রাত ৯টার দিকে শফিসহ সাত-আটজন মুখোশধারী আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমার বড় ভাইকে কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়।’
কাঁটাখালী বাজার ব্যবসায়ী ইসমাইল গাজী জানান, ডাকাতি মামলার আসামি শফি গাজীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী একজোট হয়ে তাঁর বাড়িসহ দুই দোকানে আগুন দিয়েছে। এ সময় তাঁর বাড়ি থেকে দা, ছুরি, চায়নিজ কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে পুলিশে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মালী বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার কাঁটাখালী বাজারসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন শফি গাজী। দখলবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তোলেন তিনি ও তাঁর বাহিনী। খাল দখল, লিজ ঘের দখল, দোকানে দোকানে প্রকাশ্যে চাঁদা দাবি, মারধরসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছেন শফি।
হামলায় আহত ঘের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আমার ঘেরে জাল টেনে তিন লাখ টাকার মাছ ধরে নেয় শফি ও তাঁর বাহিনীর লোকজন। এ ঘটনার জের ধরে আমার ওপর হামলা হয়।’
ব্যবসায়ী সামাদ গাজী বলেন, ‘শফি বাহিনী অত্যাচারে বাজারে ব্যবসা করা দুরূহ হয়ে গেছে। রাত নামলেই অস্ত্র নিয়ে শফি বাহিনী মহড়া দেয়। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।’
স্থানীয় আরকে বাসিন্দা আছাফুর রহমান বলেন, ‘কাঁটাখালী বাজারে প্রকাশ্য চাঁদাবাজির প্রতিবাদে বাজার কমিটি ও স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে গত ৩০ মে বাজারে মিছিল ও প্রতিবাদ মিছিল করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শফি গাজী আমাকে ফোন কল করে হত্যার হুমকি দেয়।’
কাঁটাখালী বাজার কমিটির সভাপতি ও বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান ময়না বলেন, ‘ডাকাত শফি ও তার বাহিনীর অত্যাচারে বাজারের ব্যবসায়ীসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই তারা করছে না। শনিবার রাতে উপায়ান্ত না পেয়ে এলাকার নির্যাতিত মানুষ একজোট হয়ে শফির বাড়িতে হামলা করে। তার বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র ও বিদেশি মদের তিনটি খালি বোতল পাওয়া যায়।’
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ইদ্রিসুর রহমান বলেন, ‘শফি গাজীর পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ি ও দোকান পরিদর্শন করেছি। কাঁটাখালী এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শফির বাড়ি থেকে জব্দ দেশীয় অস্ত্রগুলো থানা হেফাজতে রয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :