খুলনায় মাদকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো সরব থাকলেও পরিস্থিতির খুব উন্নতি চোখে পড়ছে না। মাদকের নেশায় বুদ হয়ে থাকা কিশোর ও যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম অপরাধের সঙ্গে। আর এ কারণে বাড়ছে খুন, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ প্রবণতা। গেল ১১ মাসে শুধু মাদককে কেন্দ্র করেই নগরীতে খুন হয়েছে ২০ জন। আধিপত্য ও নারী ঘটিত কারণে ১১ মাসে খুন হয়েছে ১৫ জন। সব মিলিয়ে জুলাই পরবর্তীতে খুলনায় এক বছরে খুন হয়েছে ৩৫ জন। এসব কারণে সাধারণ মানুষ ও নাগরিক নেতাদের উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা কাটছে না।
একাধিক সুত্রে জানাগেছে, খুলনার কিশোর ও যুবকরা মাদকের করাল গ্রাসে ভাসছে এখন। অথচ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে নিরব। এলাকায় এলাকায় আশংকাজনকভাবে কিশোর ও যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে কিশোর গ্যাং। একেক একের এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে আবির্ভূত হচ্ছে এই সকল কিশোর ও যুবকদের গ্যাং। অনেক থানার কর্মকর্তারা তাদের অবস্থান ও আবির্ভাব সর্ম্পকে জানলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিতেও পারেন না।
অনেকে অভিযোগ করেন, কয়েকটি থানা এলাকায় কিছু মাদক কারবারী পুলিশের ছত্রছায়ায় অবাধে মাদকের ব্যবসা করছে। মাঝে মধ্যে দু-একটি থানায় কিছু ইয়াবা, গাঁজা ও কিছু পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার করা হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছেন মূলহোতারা। নগরীর সদর থানা, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর, হরিণটানা, লবনচরা ও আড়ংঘাটা থানা এলাকায় মাদকের প্রায় শতাধিক স্পট রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে এ কারবারে জড়িতদের কয়েকজন জানান, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করেই তারা এই মাদক ব্যবসা করছেন। অথচ সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করছেন। তারা কখনো কখনো মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের উপরও দোষ চাপাচ্ছেন।
এ দিকে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের খুলনার আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলেন, তাদের জনবল সংকট থাকা সত্বেও তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। প্রায়ই কিছু উদ্ধার ও জড়িতদের আকট করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ ও নাগরিক নেতারা বলেন, মাঝে মাঝে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অভিযানে যত সামান্য কিছু গাঁজা উদ্ধার করা হয়। দু একটি থানায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইয়াবা ও যত সামান্য কিছু হেরোইন ও ফেনসিডিল উদ্ধার করার খবর রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের কয়েকজনকে তারা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু তারা খুব দ্রুত আবার জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো ফিরে যাচ্ছেন কারবারে।
গত ১১ মাসে শুধুমাত্র এই মাদককে কেন্দ্র করে নগরীর ৮ থানা এলাকায় বেড়েই চলেছে খুন, ছিনতাই, কোপাকুপিসহ নানা রকমের অপরাধ প্রবণতা। ‘
নাগরিক নেতা এড.বাবুল হাওলাদার বলেন, মাদকের করাল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষার জন্য মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মাদকের অবাধ বাণিজ্য বন্ধে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
বিএনপি নগর শাখার সভাপতি এড শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘খুলনা নগরীতে অভিনব পন্থায় রাঘব বোয়ালদের ছত্রচ্ছাত্রায় ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে মাদক নামক ব্যাধি। যুবসমাজকে মাদকের ভয়াবহ করাল গ্রাস থেকে বিরত রাখতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
কেএমপির মিডিয়া সেলের সহকারী কমিশনার খন্দকার হোসেন আহম্মদ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে নগরীর আট থানার অফিসার ইনচার্জদের কঠোর বার্তা দেওয়া আছে। প্রায়ই কোন না কোন থানায় মাদক কারবারীসহ মাদক উদ্ধারে ভুমিকা পালন করছে পুলিশ। কোন কোন সময় আবারো গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল উদ্ধারে সাফল্য রয়েছে কেএমপির। তাই পুলিশ সব সময় চেষ্টা করছে। তবে মাদক ও নানা অপরাধ বন্ধে খুলনার সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :