মোটরসাইকেল বন্ধের সুযোগে এবারের ঈদযাত্রায় বাড়ি ফেরা মানুষকে ইচ্ছেমতো হয়রানি করছেন পরিবহন মালিকরা। সুযোগ বুঝে সড়ক, রেল ও নৌপথে ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির অভিযোগ, খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের বাসগুলো বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী বহন করলেও কোনো কোনো পথে যাত্রী সাধারণকে স্বল্প পথের যাতায়াতের ক্ষেত্রে বেশি দূরের টিকিট কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও দিনমজুরসহ স্বল্প আয়ের মানুষজন পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপে স্বল্প ভাড়ায় যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রী সংকটের কারণে ঢাকা-বরিশালের বিভিন্ন নৌপথের ভাড়া কমানো হলেও এখন এ পথেও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে ঠেকেছে। যাত্রীদের হয়রানি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান।

সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, ঈদযাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌপথের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাত্রীকল্যাণ সমিতি। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর সিটি সার্ভিসের বাসের ভাড়া কোনো কোনো পথে ৫ থেকে ৬ গুণ পর্যন্ত বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। উত্তরা থেকে সায়েদাবাদে ৫০ টাকার বাস ভাড়া ৩০০ টাকা নিতে দেখা গেছে। শ্যামলী থেকে গুলিস্তানে ৩০ টাকার বাস ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে।

ধানমণ্ডি থেকে সদরঘাট ২৫ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। নগরীর প্রতিটি লেগুনা সার্ভিসের ভাড়া কোথাও দ্বিগুণ আবার কোথাও তিনগুণ আদায় করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের কদমতলী ও সদরঘাট থেকে গুলিস্তানের পথ মাত্র ৩ কিলোমিটার। এ রুটে স্বাভাবিক সময়ের ভাড়া ১৫ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে। এ চিত্র নগরের সব লেগুনা রুটে। রিকশা ভাড়া ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। সংবাদ বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা গুলশান, বনানী, বারিধারা থেকে স্বাভাবিক সময়ে ৫০০ টাকায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল বা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাতায়াত করা গেলেও বৃহস্পতিবার থেকে এই পথে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া গুনতে হয়েছে।

এদিকে দূরপাল্লার যাত্রাপথে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-রাজশাহী, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি রুটে বিদ্যমান ভাড়া থেকে গন্তব্য ভেদে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অনুরূপভাবে ঢাকা-কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িসহ প্রতিটি রুটে এ ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চিত্র অব্যাহত আছে। পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতকারী প্রতিটি রুটে বিভিন্ন নন ব্র্যান্ডের বাসে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। রেলে টিকিট কালোবাজারি, অনলাইনে টিকিট পেতে বিড়ম্বনাসহ নানা কারণে যাত্রী সাধারণের হাতে টিকিট পৌঁছাতে নির্ধারিত মূল্যের তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।