* প্রচারে নামেনি সরকার ও নির্বাচন কমিশন * দলগুলোর মধ্যে নেই প্রচার পরিকল্পনা * ফলাফলে ঝুঁকি শঙ্কায় কয়েকটি দল
‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ উত্তরের গণভোট নিয়ে দেখা দিয়েছে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে রয়েছে- অধ্যাদেশ জারি হলেও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো প্রচারণা নেই, দলগুলোর মধ্যে নেই প্রচার পরিকল্পনা, ৯৫ ভাগ মানুষ এখনো গণভোটের প্রশ্ন সম্পর্কে অবগত নন। এর ফলে গণভোটের ফলাফল ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তারপরও দিনক্ষণ নিয়ে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করে সুষ্ঠু গণভোট করা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। পাশাপাশি কয়েকটি দলের মত- সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে প্রচারণা চালালে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে না। অন্যদিকে গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে বড় শক্তির রাজনৈতিক দল। তাদের বক্তব্য- একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই আলোকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে গণভোট নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। এটি অধ্যাদেশ নম্বর-৬৭। এতে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কয়েকটি প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি রয়েছে কি না, তা যাচাইয়ে গণভোটের বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত এ অধ্যাদেশ। অধ্যাদেশের ৪ ক্রমিকে ভোট কেন্দ্র বিষয়ে বলা হয়েছে। গণভোটের জন্য তৈরি করা চারটি প্রশ্ন সম্পর্কে জনসাধারণের ৯৫ ভাগ এখনো অবগত নন বলে দাবি করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা জানান, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো ভূমিকা নেওয়া হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে গ্রাম পর্যায়ে প্রচারণা চালানো হয়নি। কবে থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হবে তাও জনগণ অবগত নন।
এ পরিস্থিতিতে আগামীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণভোট বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারে বলে তারা জানান। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণভোট অনুষ্ঠান নিয়ে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাইলে আগামী দুই মাসের মধ্যে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুষ্ঠু গণভোট অনুষ্ঠান করতে পারে। তিনি বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কথাবার্তা বলা হচ্ছে। নির্বাচনের বিরোধিতা করা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এসব কারণে আগামী নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে।
দলীয় অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। রবিবার রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে আট দলীয় বিভাগীয় সমাবেশে তিনি বলেন, ‘একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’ অন্যদিকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশন আয়োজিত গণভোট ও আসন ভোটের মক ডেমোনস্ট্রেশন সফল হয়নি। কী কী বিষয়ের ওপর গণভোট এবং কীভাবে ভোটটা দেবে এ নিয়ে জনগণকে সচেতন করা জরুরি।