গাজায় রমজানের প্রথম রাত যেভাবে কাটল ফিলিস্তিনিদের ছবি - সংগৃহীত
রমজানের প্রথম রাতগুলো শান্তি ও ইবাদতে কাটানোর কথা থাকলেও গাজাবাসীর জন্য তা এখন শীত ও কষ্টের সময়ে পরিণত হয়েছে। গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা রমজানের প্রথম রাত কঠিন মানবিক পরিস্থিতিতে উদযাপন করেছেন। প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে আশ্রয় নেয়া তাঁবু ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, গাজাবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে ভ্রাম্যমাণ ঘরবাড়ি ও ভারী সরঞ্জাম সরবরাহে ইসরাইলের বাধা তাদের দুর্ভোগকে শতগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।
প্রবল বৃষ্টিতে সেহরির সময় পানি তাঁবুতে ঢুকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জিনিসপত্র ভিজিয়ে ফেলে। ফলে অনেকেই, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা, তীব্র ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিকল্প আশ্রয় ছাড়াই তাঁবু থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়।
এদিকে যারা তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরে গেছেন, তারাও সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। বৃষ্টির পানি থেকে তাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার আর কোনো বিকল্প উপায় ছিল না। বাড়ির ছাদ ও ফাটলযুক্ত দেয়াল থেকে পড়া অনবরত পানির মধ্যেই তাদের রাত পার করতে হয়।
গাজার পৌরসভার মুখপাত্র হোসনি মেহনা আনাদোলু অ্যাজেন্সিকে জানান, রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে পৌরসভার জরুরি প্রতিক্রিয়া দলগুলো সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে তাদের স্বল্প সরঞ্জাম দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেয়া চেষ্টা করছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নে ইসরাইলের ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা গণহত্যায় ইসরাইল গাজার প্রায় ৮৮ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা।
সীমিত সম্পদঃ মেহনা বলেন, ইসরাইলের ভ্রাম্যমাণ বাড়ি সরবরাহে অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ভারী সরঞ্জামের অভাবে সৃষ্ট মানবিক সংকটের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবনযাত্রার অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত মানুষরা একাই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। সমস্ত আহ্বান সত্ত্বেও দখলদাররা এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ বৃষ্টি ও ঠান্ডার ঝুঁকিতে রয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, রমজানের প্রথম রাতগুলো শান্তি ও ইবাদতে কাটানোর কথা থাকলেও তা এখন শীত ও কষ্টের সময়ে পরিণত হয়েছে।
মেহনা উল্লেখ করে বলেন, পৌরসভার দলগুলো তাদের সীমিত সম্পদ দিয়েও আবহাওয়া পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও সম্পদের অভাবের কারণে তারা বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘ইসরাইল মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকেও আমাদের জনগণকে বঞ্চিত করছে। আমরা গাজাসহ অন্যান্য পৌরসভায় আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করছি।’
তিনি সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগে জোর দেন।
ক্রমবর্ধমান সংকটঃ মেহনার মতে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া পরিস্থিতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজায় ইসরাইলের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য সরবরাহ, মানবিক সহায়তা ও সাহায্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতদের স্বাস্থ্যগত অবস্থারও অবনতি ঘটছে।
এর আগে, মানবাধিকার ও মানবিক সংস্থাগুলো স্বাস্থ্য সংকট আরো খারাপ হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। কারণ সে সময় বাস্তুচ্যুত মানুষদের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদারও ব্যাপক ঘাটতি ছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের পাশাপাশি একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। এই চুক্তিতে তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপের সময়সীমা ৪২ দিন। চুক্তির প্রথম ধাপটি শেষ হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা মিশরের কায়রোতে শুরু হয়েছে।
ইসরাইলের ১৫ মাসের গণহত্যায় এক লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু এবং ১৪ হাজারের বেশি নিখোঁজ রয়েছে।
সূত্র : জর্ডান নিউজ