ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্মরত অবস্থায় এক ফিলিস্তিনি নার্সকে অপহরণ করেছে। বিশিষ্ট ডাক্তার বাবা মারওয়ান আল-হামসকে অপহরণের মাত্র কয়েক মাস পর তার নার্স মেয়েকেও তুলে নিয়ে গেল দখলদার বাহিনী।
অপহৃত নার্সের পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, তাসনিম আল-হামস ইসরায়েল-নির্ধারিত তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ আল-মাওয়াসিতে কাজ করছিলেন। সেখানেই একটি রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালের সামনে থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় তাদের অ্যাম্বুলেন্সের চালক আহত হন।
ফিলিস্তিনি এই নার্স এখন তার বাবার মতো একই পরিণতির শিকার হলেন। তার বাবা আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালের পরিচালক এবং গাজার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ছিলেন।
মারওয়ান আল-হামস গাজা উপত্যকার ফিল্ড হাসপাতালগুলোরও তত্ত্বাবধান করতেন। ২১ জুলাই, তিনি উত্তর রাফাহতে রেড ক্রস সুবিধা পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। সেসময় ছদ্মবেশী ইসরায়েলি সৈন্যরা গুলি চালায়। এতে একজন নিহত এবং অন্য একজন বেসামরিক নাগরিক আহত হন। এরপর তারা তাকে অপহরণ করে।
আক্রমণের সময় নিহত ব্যক্তি ছিলেন একজন স্থানীয় সাংবাদিক। তিনি সেই মুহূর্তে সুপরিচিত এই চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই সময় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই কাপুরুষোচিত কাজটি এমন এক বিশিষ্ট মানবিক ও চিকিৎসকের কণ্ঠস্বরকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, যিনি বিশ্বের কাছে ক্ষুধার্ত শিশুদের যন্ত্রণা, ওষুধবঞ্চিত আহত রোগীদের ভোগান্তি এবং হাসপাতালের ফটকে মায়েদের কান্নার কথা তুলে ধরেছেন।”
“এটি স্পষ্টভাবে সত্যকে নীরব করে দেওয়া এবং সবচেয়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হওয়া একটি সম্পূর্ণ জনগণের দুর্ভোগকে আড়াল করার ইচ্ছাকৃত প্রতিফলন।”বেশ কয়েকটি অধিকার গোষ্ঠী ও চিকিৎসা সংগঠন মারওয়ান আল-হামসকে লক্ষ্যবস্তু করা এবং তাকে আটক করার নিন্দা জানিয়েছে।
গাজার আল-দামির অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, তাকে অ্যাশকেলন কারাগারে রাখা হয়েছে। সংস্থাটির পরিচালক আলা আল-স্কফির মতে, গ্রেপ্তারের সময় পায়ে গুলি লাগার পর ওই ডাক্তারকে কারাবন্দী করা হয়।ইসরায়েলের অপহরণের শিকার অনেক ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মীদের মতোই মারওয়ান আল-হামস আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত, যা স্কফি’র মতে আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা গাজা উপত্যকায় ২০ মাস ধরে চালানো হামলায় হাসপাতাল, চিকিৎসা কর্মী এবং অ্যাম্বুলেন্সে বারবার হামলা চালিয়ে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করছে।ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১,৫০০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন এবং ৩৬০ জনেরও বেশি জনকে আটক করা হয়েছে।
ইসরায়েলি আটককেন্দ্রে, ফিলিস্তিনিরা ৭ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে ব্যাপক ও গুরুতর দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন, এই অপব্যবহারকে শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো পদ্ধতিগত অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
প্রতিবেদনগুলোতে অনাহার, চিকিৎসার অবহেলা, শারীরিক সহিংসতা, অপমান, যৌন নিপীড়ন, চুরি এবং নজিরবিহীন মাত্রায় গণ-একাকী কারাবাসের বিবরণ রয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের এই কারাগার গুলোতে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে তাদের প্রতি আচরণকে “মানবাধিকার লঙ্ঘন” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সূত্রঃ মিডিল ইস্ট আই
আপনার মতামত লিখুন :