সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশ এবং যোগাযোগ মাধ্যমের বিপ্লব ঘটিয়েছে গুজব রহস্যে তোলপাড়


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ২৫, ২০২৫, ১১:০১ পূর্বাহ্ণ /
সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশ এবং যোগাযোগ মাধ্যমের বিপ্লব ঘটিয়েছে গুজব রহস্যে তোলপাড়
  • কোনো ফরমেটেই ‘আ.লীগ পুনর্বাসন নয়’ সর্বত্রই আওয়াজ ড. ইউনূসের চীন সফরের প্রাক্কালে হঠাৎ করে গুজব ছড়াচ্ছে কারা? ‘পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ’ নামে সন্ত্রাসীদের ফের মাঠে নামানোর চেষ্টা? দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা অন্যায়, তেমনি তাদেরও জনগণের পালস বুঝতে হবে

ছুরি একটি ধারালো অস্ত্র। এই অস্ত্র কসাই গরু জবাইয়ে ব্যবহার করে, অপরাধীরা ছিনতাই কাজে ব্যবহার করে, চিকিৎসক রোগীর অপারেশনে ব্যবহার করেন। অস্ত্রটির চরিত্র খোঁজার চেয়ে সেটি কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে সেটিই বড় কথা। বিজ্ঞানের বদৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশ এবং যোগাযোগ মাধ্যমের বিপ্লব ঘটিয়েছে।

ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার, ইউটিউব শিক্ষা-চিকিৎসা-সমাজ ও মতপ্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কনটেইন ক্রিয়েটর, ইউটিউবার-সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাস পর প্রধান উপদেষ্টা যখন চীন সফরে যাচ্ছেন তার আগে নানান গুজব ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ওই কসাই-অপরাধীদের ছুরি ব্যবহারের মতোই। দেশে নাকি সেনাশাসন জারি হচ্ছে। ইউটিউব আর ফেসবুকে এ গুজব ছড়িয়ে মানুষকে নির্ঘুম রাত পার করতে বাধ্য করা হয়। মানুষ যখন ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে।

গতকাল স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি স্পষ্ট ভাষায় ‘জরুরি অবস্থা জারি’ প্রচারণাকে ‘গসিপ’ অবিহিত করে বলেছেন ‘এই সম্পর্কে আমার কোনো কমেন্ট (মন্তব্য) নেই। এগুলো মেয়ার (নিছক) গসিপ। আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। দুই একজন বলছে। এই সম্পর্কে আমার কোনো কমেন্টস নেই।’ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত বিজয় হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের সফল পরিচালনা এবং ক্যান্টনমেন্টে প্রত্যাবর্তন। মানুষের ভিন্ন মতামত থাকতে পারে, কিন্তু দেশের জন্য ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

ভারতের অ্যাজেন্ডা বস্তবায়নে ভার্চুয়াল এ মিডিয়াগুলো এখন যেন গুজবের কারখানায় পরিণত হয়েছে। কেউ বুঝে কেউ না বুঝেই এ স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। ভারতের ফাঁদে পা দিয়ে তারা গুজবের ডালপালা পরিকল্পিতভাবে চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। দেশে ‘জরুরি অবস্থা জারি’ পরিশুদ্ধ (রিফাইন্ড) আওয়ামী লীগের আবির্ভাব, ক্যান্টনমেন্টে গোপন বৈঠক, এনসিপি, এবি পার্টির নেতা গ্রেফতার ইত্যাদি ‘ফেইক’ তথ্য দিয়ে টাটকা শয়তানের মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই গুজব? এই গুজবের নেপথ্যে কারা? এমন গুজবে কার লাভ? নানা ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে এখন হাসিনা গংরা কি গুজবের পথ ধরেছে? সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে ৫ আগস্টের সাফল্যের অংশীজন ছাত্র-জনতা-সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি করে দিল্লিতে পলাতক হাসিনা ও তার দলকে পুনঃপ্রত্যাবর্তন করা যাবে? দেশের রাজনীতিতে খুনি হাসিনা তো এখন ‘ডেড হর্স’। মৃত ঘোড়া নিয়ে লাফালাফি করলে কী ঘোড়া জীবিত হয়ে উঠবে? কবি শামসুর রাহমানের ‘কান নিয়েছে চিলে’ কবিতার মতো সত্য না জেনে গুজবের পেছনে ছোটা কি বুদ্ধিমান মানুষের কাজ?

দেশের ১৮ কোটি মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসÑ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতির গতিপথ নির্ধারিত হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা নামের কোনো খুনি এবং মুজিববাদী আওয়ামী লীগ নামে কোনো অপরাধী দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকবে না। পরিশুদ্ধ, বিশুদ্ধ, মাইনাস হাসিনা আওয়ামী লীগ কোনো নামেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্রয় পাবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যাকা- নিয়ে জাতিসংঘের তদন্তের উঠে এসেছে ৫ আগস্ট এক হাজার ৪০০ মানুষকে হাসিনা হত্যা করে পালিয়েছে। মাফিয়া রানী শেখ হাসিনা হিন্দুত্ববাদী ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় দীঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার ধ্বংস করেছেন। ক্ষমতায় টিকে থাকতে একদিকে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে ভারতের তাঁবেদারি করেছে; অন্যদিকে দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে উন্নয়নের প্রকল্প-মহাপ্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। হাসিনা ও তার অলিগার্করা বাংলাদেশকে কার্যত ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের লিলাভূমি’ বানিয়ে ফেলেছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর আন্দোলন, গুম-খুন-কারাবন্দি, অপহরণ, হামলা-মামলা নানান জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নেতৃত্বে আন্দোলনে ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ নতুন দেশের অবির্ভাব ঘটেছে।

এ নতুন দেশের আবির্ভাবে ‘যার যে অবদান’ তাকে সেটি দিতে হবে। অথচ দিল্লির ফাঁদে পা দেয়ার মতোই এখন জুলাই বিপ্লবের শক্তিগুলোর মধ্যে ব্যক্তি, দলীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে একে অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিরোধ বাঁধানোর চেষ্টা চলছে। এ সুযোগ নিয়ে ৫ আগস্টের পরাজিত শক্তি পাচার করা টাকা ব্যয়ে অলিগার্কদের সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, ৫ আগস্টে নেতৃত্ব দেয়া তরুণ নেতা, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উসকে দিচ্ছে। পরাজিত শক্তির অলিগার্কদের ওই উসকানিতে বাতাস দিচ্ছেন ৫ আগস্টের সাফল্যের আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমর্থন দেয়া কয়েকজন কনটেইন ক্রিয়েটর ও ইউটিউবার। তাদের কেউ কেউ জরুরি অবস্থা জারির গসিপ প্রথম ছড়িয়েছে। অবশ্য এ পরিস্থিতিতে দেশে বর্ণচোরা বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই নীরব। এতদিন তারা আফসোস লীগ হিসেবে টকশোতে হাজির হতেন। ভারতের নীলনকশায় এতদিন আওয়ামী লীগ-বিরোধী নাটক করেছেন। যেতনেত প্রকারে ওই দলটিকে পুনর্বাসনের মনন থেকে এখন নীরবতায়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে যাচ্ছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি দেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। তিস্তা মহাপ্রকল্প নিয়ে চূড়ান্ত কথাবার্তা বলতে পারেন। ড. ইউনূসের আগমনকে কেন্দ্র করে চীন যখন লালগালিচা সংবর্ধনার আয়োজন করছে, তার এক সপ্তাহ আগে ‘জরুরি অবস্থা জারি’ গুজব ছড়ানো শুরু হয়েছে। ড. ইউনূসের চীন সফরে লাভবান হবে বাংলাদেশ আর মনঃস্তাত্তিক চাপে পড়বে ভারত।

দেশের রাজনীতিতে নতুন এই সঙ্কটের সূত্রপাত ঘটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (্এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। তিনি লিখেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।’ ১১ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে তিনিসহ দুজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় বলে জানান। অতঃপর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে জানান, ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিত আলম ও অন্যান্য নেতারাও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন। প্রশ্ন হচ্ছে ১১ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে যে বৈঠকে সেনাবাহিনীর প্রস্তাবে কথা বলা হচ্ছে, সেটি ১০ দিন চেপে রাখা হয়েছিল কেন? তাহলে কি এর ভেতরে কোনো ‘গোপন রহস্য’ লুকিয়ে রয়েছে। ১০ দিন একে ‘অপরের মতে না মেলায়’ তিনি গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলেন? নতুন দলটির আরেক নেতা নাসিরুদ্দীন বলেছেন, ‘এভাবে গোপন বৈঠকের খবর ফেকবুকে প্রকাশ করা উচিত হয়নি।’ ৫ আগস্টের পর অনেক ছাত্র সমন্বয়কের (বর্তমানে এনসিপি নেতা) বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য ও হাসিনার অলিগার্ক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নতুন দলটির আহ্বায়ক নিজেও ব্যবসায়ী ও শুভাকাক্সক্ষীদের কাছ থেকে সহায়তা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

এছাড়াও যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতেন, কেউ কেউ মেসে সিট নিয়ে থাকতেনÑ টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেছেন; তাদের অনেকেই এখন কোটি টাকা গাড়িতে ঘুরে বেড়ান, বিমান-হেলিকপ্টারে যাতায়াত করেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন, এসব বিষয় নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আছে। আলোচনা-তর্ক-বিতর্ক চলছে। তাছাড়া পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ যাদের নিয়ে গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন, ফজলে নূর তাপসরা কী পরিশুদ্ধ? তারাও হাসিনার ১৫ বছর জুলুম-নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় এক হাজার ৪০০ মানুষ হত্যার সাথে জড়িত।

খুনিরা পরিশুদ্ধ হয় কেমন করে? আর পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগকে রাজনীতির সুযোগ দেয়ার অর্থই হচ্ছে দেশকে ৫ আগস্টের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া। যারা ১৫ বছর খুন-গুম-হত্যা নির্যাতন করেছে তাদের মাঠে ফিরিয়ে আনা। হাসিনা পালালেও তার অলিগার্ক-সন্ত্রাসীরা দেশে ঘাপটি মেরে রয়েছে। তাদের হাতে প্রচুর অর্থ। তারা সুযোগ পেলে পরিশুদ্ধ নামে রাজনীতিতে নেমে প্রতিশোধের নেশায় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। এটি কারো কাম্য নয়। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ভূমিকা পরিষ্কার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী খুনি হাসিনার অবৈধ খুনের নির্দেশনা অমান্য করে জনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশংসা পেয়েছে। এমনকী শেখ হাসিনা পালানোর আগে একটি ভিডিও বার্তা রেকর্ড করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন কিন্তু সে সুযোগও দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী দেয়নি। অর্থাৎ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

গতকালও সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে জাতির কোনো ক্ষতি হবে না।’ সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে সবাইকে তার নির্দেশনা অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেÑ যাতে সেনাবাহিনী ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সময়টি উপভোগ করতে পারে। কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে প্রায় এক হাজার ৪০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাঠামো, আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে মারাত্মক হত্যাকা-ে সাথে পদ্ধতিগতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল।

পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা শিশুরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছে।’ হাসিনা পালানোর আগে আন্দোলন দমাতে দেশে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছিল। সে সময়ের গুলিবর্ষণ ছাত্র-জনতার হত্যাকা-ে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি-সেনাবাহিনীর ভূমিকাও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার গত ৭ মার্চ বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক বলেন, ‘বাংলাদেশে জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়নে অংশ না নিতে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করার পর দেশটিতে পরিবর্তন আসে। আমরা প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করি, যদি তারা এতে (হত্যাকাণ্ডে) জড়িত হয়, তার অর্থ দাঁড়াবে তারা হয়তো আর শান্তিরক্ষী পাঠানোর দেশ থাকতে পারবে না। ফলে আমরা পরিবর্তন দেখলাম।’ যে যতই বিতর্ক করুক সেনাবাহিনীর প্রতি আমজনতার আস্থা রয়েছে।

তবে ৫ আগস্টের পক্ষের শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ‘ভেজাল’ লাগানোর চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান তার ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার টিভি সাক্ষাৎকার সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের জন্য অবমাননাকর। এটি ভালো না খারাপ তা বলার আগে বড় সত্য হলোÑ এটি পরিকল্পিত।’ আবার সাংবাদিক আশরাফ কায়সার এক টকশোতে বলেছেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের লক্ষে সেনাবাহিনী রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা বলছে। ১৫ বছর যে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি; আওয়ামী লীগ একাই আমলা-পুলিশ-র‌্যাব-সেনা-ওসি-ডিসিকে ব্যবহার করে দিল্লির নীলনকশার নির্বাচন করেছে; তখন অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা মনে পড়েনি।

হাসিনা রেজিমে কার কি ভূমিকা সবই মানুষ জানে।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী কোন পথে হাঁটবে? তারা জাতিসংঘের প্রশংসা কাজে লাগিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে জনগণের সুনাম অর্জন করে সামনে অগ্রসর হবে? নাকি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের অজুহাতে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য মতে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্নামের ভাগিদার হবে? সেটি তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যতই মতভেদ ও বিতর্ক হোক না কেন, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সবাই ঐকবদ্ধ। গণহত্যা করে ৫ আগস্ট পালানো হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ কোনো মুখোশ পরেই দেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা হতে পারবে না। তবে কেউ দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি করছেন, কেউ রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধের দাবি করছেন কেউ বা বিচারের মাধ্যমে দলটির ‘রাজনৈতিক মৃত্যু’ দেখতে চাচ্ছেন।