চট্টগ্রামে জোড়া লাগানো যমজ শিশুর সফল অস্ত্রোপচার, জন্মের ২৩ ঘণ্টার মধ্যে শিশু দুটির অস্ত্রোপচার করা হয়
চট্টগ্রামে বেসরকারি অ্যাপেলো ইমপিরিয়াল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগানো যমজ শিশু আলাদা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ত্রোপচারের কথাটি জানানো হয়। এর আগে গত ৬ মে হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে যমজ শিশুর জন্ম হয় এবং পরদিন ৭ মে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা হয়। বর্তমানে দুই নবজাতকই সুস্থ আছে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম যমজ এই সন্তানদের জন্ম দেন। দুই শিশুর নাম রাখা হয়েছে রিয়াশাদ জাফর চৌধুরী ও রেনিশ জাফর চৌধুরী। অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন শিশু সার্জন ডা. আদনান ওয়ালিদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহেদ মালেক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, ডেপুটি চিফ অব মেডিকেল সার্ভিসেস ফজল-ই-আকবর, অবেদনবিদ মো. মাসুদ ও শিশুদের বাবা ব্যবসায়ী রিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।
শিশু সার্জন ডা. আদনান ওয়ালিদ বলেন, এটি আমার এ ধরনের প্রথম অস্ত্রোপচার। এর আগে ঢাকায় শিশু শিফা ও রিফাকে আলাদা করার সময় পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলাম। এবার পুরো চিকিৎসা দলের নেতৃত্ব দেই। জন্মের ২৩ ঘণ্টার মধ্যে শিশু দুটির অস্ত্রোপচার করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জোড়া লাগানো শিশু আলাদা করার ঘটনা বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, এটি ছিল অত্যন্ত জটিল একটি অস্ত্রোপচার। দুই নবজাতকের বুক ও পেটের অংশ প্রায় আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত সংযুক্ত ছিল। শ্বাসনালির একটি অংশও এক সঙ্গে ছিল। আমরা ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচার করেছি। অবেদনবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের ১৮ জন চিকিৎসক এতে অংশ নেন এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে।
প্রসূতিবিশেষজ্ঞ ডা. রেশমা শারমিন বলেন, ২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে শিশু দুটি জোড়া লাগানো বলে ধরা পড়ে। পরে আরও দুবার আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। গর্ভাবস্থায় এক শিশুর রক্ত সঞ্চালন কম পাওয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। ৩৪ সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় শিশু দুটির। জন্মের সময় তাদের ওজন ছিল যথাক্রমে ৯৭৩ ও ১০৪৫ গ্রাম। বর্তমানে ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫৫ ও ১৩৫০ গ্রামে।
শিশুদের বাবা রিয়াজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে যখন বিষয়টি ধরা পড়ে, তখন থেকে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। চিকিৎসকরা সাহস জুগিয়েছেন, তাদের কারণেই আমরা এই অস্ত্রোপচারে সম্মত হই। এখন আমরা দুই সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি।
শিশুদের মা সুরাইয়া বেগম বলেন, মনে হয়েছিল মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। পরে চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও সাহস দেখে আমরা ধীরে ধীরে ভরসা পাই। তাদের জন্যই আজ আমাদের সন্তান দুটিকে নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছি।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতি দুই লাখ শিশুর মধ্যে একজন এভাবে জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্মায়। এদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ একত্রে সংযুক্ত থাকায় ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে চিকিৎসকরা মনে করছেন, চট্টগ্রামের এই দুই নবজাতকের ক্ষেত্রে এমন শঙ্কা নেই।
আপনার মতামত লিখুন :