ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুলচাষিদের মাঝে এখন ব্যাপক কর্মব্যস্ততা। তারা এবার সামনের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা নববর্ষসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে চলতি মৌসুমে ১০০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রির আশা করছেন। গতবারের তুলনায় এবার ফুলের দাম বেশি হওয়ায় ফুল চাষ বাড়িয়ে দিয়েছে চাষিরা।
উপজেলার গদখালী অঞ্চলে এবার বাণিজ্যিকভাবে এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুল চাষ করা হয়েছে। এই অঞ্চলে ৬ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর উৎপাদিত হয় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ফুল। এই অঞ্চলে বছরজুড়ে ফুলচাষ হলেও ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস ফুলের ভরা মৌসুম।
সাধারণত বিজয় দিবস, বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশে ফুলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। চাহিদা মেটাতে দেশের অধিকাংশ ফুল সরবরাহ করা হয় এই অঞ্চল থেকে। আর এসব দিবসকে টার্গেট করেই গদখালীর চাষিরা ফুল চাষ করে থাকেন।
চলতি বছরে অতি তাপমাত্রা আর অতিবৃষ্টির ধকল কাটিয়ে এই মৌসুমে চাষিরা শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, হাড়িয়া অঞ্চলের ফুলচাষিরা দেশের মোট চাহিদার অন্তত ৭০ ভাগ ফুল সরবরাহ করে থাকেন।
কাকডাকা ভোরে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের গদখালী বাজারে পানিসারা, হাড়িয়া, শরীফপুর ও টাওরা অঞ্চলের ফুলচাষিরা হরেক রকম ফুলের পসরা নিয়ে বসেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতারা এখান থেকে ফুল কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যান।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার গদখালীর পানিসারায় বিস্তীর্ণ মাঠের পর মাঠ শুধু গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ নানা ধরনের ফুলের সমারোহ। উৎপাদিত এসব ফুল কেনাবেচা হচ্ছে উচ্চ মূল্যে।
গদখালী ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পিস গোলাপ ৫ থেকে ৭ টাকা, গ্লাডিওলাস ১২ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা ১২ থেকে ১৪ টাকা, রজনীগন্ধা ৫ থেকে ৭ টাকা, ১০০ পিস চন্দ্রমল্লিকা ৪০০ টাকা, এক হাজার গাঁদা ফুল ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এলাকার চাষিরা জানান, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে গদখালীর ফুলচাষিরা রেকর্ড পরিমাণ টাকার ফুল বিক্রি ও বাজারজাত করতে পারবেন জানান তারা।
ফুলচাষি ইউনুছ আলী জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা ও এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। চারা রোপণ থেকে গাছে ফুল আসা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। খরচ বাদে তার এ বছর প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
ফুলের পাইকারী বিক্রেতা আশিকুর রহমান জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর ও ইংরেজি নববর্ষে বিক্রি খুব ভালো হয়েছে। দামও ভালো পেয়েছি। তবে সামনে দিবসগুলোতে ফুলের চাহিদা ও দাম দুটোই আরো বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর গদখালীতে আগেভাগেই ফুলের সরবরাহ শুরু হয়েছে। ফলে এখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
এ বিষয়ে যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম ইনকিলাবকে জানান, গদখালীর চাষিরা এবার গত বছরের তুলনায় ফুলের ভালো দাম পাচ্ছে। গত ১৬ ডিসেম্বর ও ইংরেজি নববর্ষে ভালো লাভ করেছে ফুল চাষিরা। বর্তমান বাজারমূল্য যদি এভাবে থাকে তাহলে সামনে যে দিবসগুলো আছে তাতে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন এবং বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা। সব ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষসহ বিভিন্ন দিবস ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে গদখালী থেকে ১০০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রির আশা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :