পরীমণি। পুরোনো ছবি
টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে একটি প্রতিষ্ঠানের শোরুম উদ্বোধনের জন্য চিত্রনায়িকা পরীমণি আসার কথা ছিল। এ খবর পেয়ে স্থানীয় অনেকের মাঝে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পরীমণিকে ঠেকাতে প্রস্তুতি নেন তারা। চাপের মুখে পরীমণিকে আর সেখানে নিতে পারেনি শোরুমের কর্তৃপক্ষ।শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গার টিন মার্কেটে শোরুমটির উদ্বোধনের কথা ছিল।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৫ দিন ধরে এলেঙ্গায় টিন মার্কেটে শোরুমটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিত্রনায়িকা পরীমণি উপস্থিত থাকার বিষয়টি জানিয়ে কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে গত দুই-তিন ধরে হেফাজতে ইসলামসহ স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পরীমণিকে ঠেকাতে বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা করছিলেন। পরীমণিকে যাতে এলেঙ্গার মাটিতে না আনা হয়, এ নিয়ে আন্দোলনসহ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণার দেন তারা।
পরীমণির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল করতে স্থানীয় থানার পুলিশ ও শোরুম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাসহ স্থানীয় মুসল্লিরা। এ ছাড়া পরীমণিকে ঠেকাতে পদক্ষপ নিতে বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবার আগে আলোচনা হয়। শোরুমটির উদ্বোনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল, এলেঙ্গায় ততই উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। একপর্যায়ে শোরুম কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন চাপের মুখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়।
এলেঙ্গার টিন মার্কেটের শোরুমটির মালিক মীর মাসুদ রানা বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরীমণি থাকার কথা ছিল। এখানে কিছু ঝামেলা হয়েছিল, হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন করেছিল। একটা মহামারি অবস্থা ধারণ করেছিল। উনারা অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল। পরীমণি আসলে নাকি সমস্যা হয়। পরীমণি আসলে নাকি রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। বিভিন্ন মসজিদে আলোচনা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের এক নেতা ফোন করেছিল। বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে থানা পুলিশ আমাদেরকে আপাতত নিষেধ করেছে। পরে কোম্পানির সাথে কথা বলে তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। পরে ফেসবুকে দেখেছি, তাদের কর্মসূচিটিও বাতিল করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১০-১২ দিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করেছি। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায় বড় ধাক্কা খেয়েছি।’
হেফাজতে ইসলামের টাঙ্গাইল জেলা শাখার যুববিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ কালিহাতি উপজেলার সভাপতি মুফতি সুলাইমান হাবিব নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে হারলেন শোরুম উদ্বোধন করার জন্য একজন চিত্রশিল্পী (পরিমণি) আশার কথা ছিল। এ বিষয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ব্যাপক নেতিবাচক আলোচনা হওয়ায় স্থানীয় ইমাম, আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ কিছু ভাই গতরাতে আমার সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টি অবহিত করেন।
যার প্রেক্ষিতে আজ সকালে স্থানীয় ওলামায়ে কেরামসহ আমি শোরুমের মালিক মাসউদ (মাসুদ) ভাইয়ের সাথে কথা বলি। মাসউদ ভাই সবার সম্মান রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগামীকালের (শনিবার) প্রোগ্রাম স্থগিত করেন মর্মে আমাকে নিশ্চিত করেছেন। আমরা তার এই আন্তরিকতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
এই বিষয় নিয়ে আর কোনো আলোচনা-সমালোচনা বা মজলিস কায়েম না করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে কালিহাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, ‘হুজুররা ঝামেলা করেছিল। পরে কর্তৃপক্ষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন বলেন, ‘স্টোর কর্তৃপক্ষ আমার কাছে অনুমতি নিতে এসেছিল। তাদের শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেখানে যানজট বা জনদুর্ভোগ করা যাবে না। সেটা মেনেই তারা রাজি হয়েছিল। তারা প্রোগ্রামটি করতে পেরেছিল কি না, বিষয়টি জানায়নি। বিষয়টি এসিল্যান্ড ভালো বলতে পারবে।’