ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ভূমিকার পিছনে রহস্য কি!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ /
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ভূমিকার পিছনে রহস্য কি!

গত শনিবার সকালে ঝটিকা মিছিল করেছেন কিছু নেতা-কর্মী। – ছবি : সংগৃহীত

  • – সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে আবার আওয়ামী লীগকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে : অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী
    – ছাত্রলীগের কর্মসূচি পালনের বিষয়ে কোনো তথ্য জানে না ডিএমপি

৪ জানুয়ারি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীকে কেন্দ্র করে পুলিশের অবস্থানকে কটু চোখে দেখছে দেশের সর্বস্তরের জনগণ। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী সংগঠনটির কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পল্টন, প্রেস ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট, শাহবাগ ও বুয়েট এলাকায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে একাধিক হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি খাইরুল ইসলাম সজীব আক্ষেপ করে নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী আমলে আমরা বৈধ রাজনৈতিক সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের ভয়ে বাড়িঘরে থাকতে পারিনি। প্রতিটা কর্মসূচির আগে আমরা পালিয়ে থেকেও পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাইনি। আজ কষ্ট লাগে একটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে কিন্তু পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় বিভিন্ন সেক্টরে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। আমরা দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে এসব সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিস্টের দোসরদের প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর।

আওয়ামী সরকারের আমলে গুমের শিকার তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ছাত্রলীগ দেশে এতবড় একটি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সরকার তাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু গত পাঁচ মাসে কয়জন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে? পুলিশের এ রকম ভূমিকার কারণে সন্ত্রাসী সংগঠনটি আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। জীবনের বিনিময়ে হলেও এসব সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে আমাদের অর্জিত বিজয়কে আমরা সমুন্নত রাখব।
খুলনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ আদল নয়া দিগন্তকে বলেন, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন এটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত। দেশের জনগণের জানমাল রক্ষা ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এসব সন্ত্রাসীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের যেকোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সব রকম কার্যক্রম বন্ধ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে অবশ্যই সেটা সরকার ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। তাই আমি মনে করি এসব সন্ত্রাসী সংগঠনের সব রকম কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনেক বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠন তাদের কর্মসূচি পালন করবে এটা আপনি কোনোভাবে কল্পনা করতে পারেন না। আমি বলব, সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে এই সরকার আবার আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক মাঠে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে।’

গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রশাসন এখনো জন-আকাক্সক্ষার প্রশাসন হতে পারেনি। তারা বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে বিপ্লবী প্রশাসন হতে পারেনি। দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক পরিচয়ের ডিএনএ টেস্ট করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেশির ভাগ সেসব কর্মকর্তা তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাই তাদের নাকের ডগায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমি বলব এর দায় সবচাইতে বেশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। তাদের এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কেক কাটাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। গাজীপুরের শ্রীপুরে, রাজশাহীর বাঘায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে, রাজধানীর আদাবরে, বিমানবন্দর এলাকায়, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে চুনা আঁকা ও কম্বল বিতরণ করে। এ ছাড়াও রাতের অন্ধকারে মাস্ক পরে কোথাও কোথাও কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে সন্ত্রাসী সংগঠনটি। এসব ভিডিও ছাত্রলীগের ভ্যারিফায়েড পেইজে প্রকাশ করে সংগঠনটি।

ময়মনসিংহের ত্রিশালের দেয়ালে ছাত্রলীগ কর্তৃক দেয়ালে চিকা মারার বিষয় জানতে চাইলে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার এলাকায় কোথাও ছাত্রলীগ চিকা মেরেছে তা আমার চোখে পড়েনি। তারা প্রকাশ্যে কোনো মিছিল করতে পারেনি। এ ছাড়াও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া ভিডিও ছড়াচ্ছে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর নয়া দিগন্তকে বলেন, ছাত্রলীগের কর্মসূচি পালনের কোনো গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। তারা ভুয়া ভিডিও প্রচার করছে।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পালিত কর্মসূচি সম্পর্কে কোনো কিছু জানা নেই বলে নয়া দিগন্তকে জানান, ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ডিএমপি এলাকায় কেউ গ্রেফতার হয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।