ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিজয়ের এক মাস পূর্ণ হলো


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪, ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ /
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিজয়ের এক মাস পূর্ণ হলো

দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনের তীব্রতার মুখে এক মাস আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন দলটির সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ৫ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পূর্তি হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিহতদের স্মরণে আজ ঢাকায় শহীদি মার্চসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার সমর্থনে সরকার গঠন করে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে যোগ দেন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

এদিকে দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি নিয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের নেতারা। সারা দেশের আন্দোলনকারীদের সংগঠিত করতে দেশব্যাপী সফর করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সফরের বিষয়টি উল্লেখ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।

তিনি বলেন, সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা শহরে সমন্বয়করা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সারা দেশে সফর করবে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আজ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে শহীদি মার্চ করার ঘোষণা দিয়েছে সমন্বয়ক সারজিস আলম। মার্চটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি, সংসদ ভবন, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শেষ হবে।

আবু বাকের মজুমদার বাকের আরও বলেন, সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ের আন্দোলনকারীদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুনর্গঠন করা হবে। পুনর্গঠন করতে আমরা সমম্বয়করা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সারা দেশে সফর করব। সফরের সময় আমরা মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করব। আমরা মধ্যস্থতাকারী হব। জনগণের কথা শুনব এবং তা সমাজে ছেড়ে দেব। আশা করি, সমাজের মানুষ তা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাকের বলেন, দেশব্যাপী একটি চক্র চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট, দখলদারি করছে। আন্দোলনকারীরা একতাবদ্ধ হয়ে এসবের বিরুদ্ধে কাজ করবে। এছাড়া দুর্নীতি ও বিপ্লব রক্ষার জন্য তারা কাজ করবে। আমরা তাদের কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করব। তারা এর বাইরে কাজ করবে না। মূলত দেশের সর্বত্র থেকে আন্দোলনকারীদের একতাবদ্ধ করতেই এই সফর ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা শুরুতে অল্প কিছু কমিটি অনুমোদন দিয়েছিলাম। জেলাভিত্তিক আমাদের কোনো কমিটি নেই। আমরা দেখছি সমম্বয়ক পরিচয় দিয়ে অনেকেই অপকর্ম করছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।

সফরের পর কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে কি না জানতে চাইলে আরেক সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপনারা বরং এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষকে করুন। তারা নতুন কোনো রাজনৈতিক দল চায় কি না। জনগণ নির্ধারণ করবে তারা দ্বিদলীয় রাজনীতি থেকে বের হতে চায় কি না। আমরা কেবল তাদের ভাষাকে বাস্তবে রূপান্তরের কাজ করি।

এদিকে সারজিস আলম মার্চে শহিদদের স্মরণ করে ছবি, উক্তিসহ বিভিন্ন স্মারক নিয়ে ছাত্র-জনতাকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা নিজ জায়গা থেকে শহীদি মার্চে অংশ নেবে। এছাড়া ঢাকা মহানগরসহ দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শহীদি মার্চ পালিত হবে।

সরকার পতনের এক মাসের পূর্তি উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের শহিদদের ছবি থাকতে পারে। যে কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছে, সেসব কথা প্ল্যাকার্ডে থাকতে পারে। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কী চাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে কী চাই এসবও থাকতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়ক লুত্ফর রহমান, তরিকুল ইসলাম, হাসিব আল ইসলামসহ প্রমুখ।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিগত সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে আসিন অনেকে পদত্যাগ করেন। কোনো কোনো কর্মকর্তাকে দেওয়া হয় অব্যাহতি। নতুন সরকারকে প্রশাসন ঢেলে সাজানো, পুলিশ বাহিনী পুনর্গঠন, দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে মামলা গ্রহণ ও আর্থিক খাত সংস্কারসহ নানাবিধ কাজ করতে হচ্ছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও অনিয়ম-লুটপাটে লোকসানে থাকা ব্যাংকগুলোতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।